সিমলা দৈত্য বা সিমলা ডেপুটেশন বলতে কি বোঝো
Contents
সিমলা দৈত্য বা সিমলা ডেপুটেশন বলতে কি বোঝো
বঙ্গভঙ্গকে ( ১৯০৫ খ্রি. ) কেন্দ্র করে হিন্দু – মুসলিম সম্পর্কে যে ফাটল ধরে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে সিমলা দৈত্যে ( ১৯০৬ খ্রি. ১ অক্টোবর ) । বড়ােলাটের কার্যনির্বাহ পরিষদের সদস্য ডি. ইবেটসন বড়ােলাটের সচিব ডানলপ স্মিথকে বলেন — শিক্ষিত মুসলিমরা ভারতীয় সমাজের রক্ষণশীল অংশ , এদের কংগ্রেসের দিকে ঠেলে দিলে ব্রিটিশ শাসনের সর্বনাশ ঘটবে । তাই মুসলিম প্রতিনিধিদল বড়ােলাটের সাক্ষাতপ্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা জানালে পূর্ববঙ্গের গভর্নর ন্যান্সলট হেয়ারও মিন্টোকে মুসলিম প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরােধ জানান । এরপর আলিগড় কলেজের অধ্যক্ষ আর্চবােল্ড – এর লেখা এক স্মারকলিপি নিয়ে আগা খাঁর নেতৃত্বে ৩৫ জনের এক মুসলিম প্রতিনিধিদল তৎকালীন বড়োলাট লর্ড মিন্টোর সঙ্গে দেখা করেন । তাঁরা মুসলিম সমাজের জন্য কিছু সুযােগসুবিধা আদায়ের দাবি জানিয়ে ডেপুটেশন দেন , যা সিমলা দৈত্য বা সিমলা ডেপুটেশন নামে পরিচিত ।

মুসলিম প্রতিনিধিদল
৩৫ জন সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদলটিতে বাংলা থেকে ১ জন , উত্তরপ্রদেশ থেকে ১১ জন , পাঞ্জাব ও সীমান্ত প্রদেশ থেকে ৭ জন , দেশীয় রাজ পরিবার থেকে ৮ জন , জমিদার সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে ৬ জন এবং উকিলদের মধ্যে থেকে ২ জন সদস্য ছিলেন । এইসব সদস্যরা জনপ্রতিনিধি না হলেও ব্রিটিশ এদেরকেই মুসলিম প্রতিনিধি বলে মেনে নেয় ।
সিমলা দৈত্যের দাবিসমূহ
সিমলা সাক্ষাৎকারে যে দাবিগুলি পেশ করা হয়েছিল সেগুলি ছিল —
- সামরিক , বেসামরিক , হাইকোর্ট প্রায় সমস্ত সরকারি উচ্চপদগুলিতে প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষা ছাড়াই মুসলমানদের নিয়ােগ করতে হবে ।
- সামরিক , বেসামরিক চাকরিতে আরও বেশি সংখ্যায় মুসলিমদের নিয়ােগ করতে হবে ।
- মিউনিসিপ্যালিটি , জেলাপরিষদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটে মুসলিমদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে ।
- মুসলিমরা যাতে গুরুত্বহীন সম্প্রদায়ে পরিণত হতে না পারে তার জন্য কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভায় মুসলিমদের জন্য আলাদা নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখতে হবে ।
- কাউন্সিলে মুসলমান সদস্যের সংখ্যা নির্ধারিত হবে তাদের রাজনৈতিক গুরুত্বের ভিত্তিতে , জনসংখ্যার অনুপাতে নয় ।
- একটি আলাদা মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটিশ সরকার প্রয়ােজনীয় সকল সাহায্য দেবে ।
সিমলা দৈত্যের গুরুত্ব
ব্রিটিশ ভারতে সিমলা দৈত্য ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ।
বিটিশ – মুসলিম সম্পর্কের উন্নতি :
সিমলা দৈত্যে ব্রিটিশ ভাইসরয় মিন্টো যেভাবে এই প্রতিনিধিদলকে সহানুভূতি জানিয়েছিলেন তাতে ব্রিটিশের সঙ্গে মুসলিমদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছিল ।
হিন্দুদের অগ্রাধিকার খর্ব :
লন্ডনে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে এতদিন ধরে ভারতবাসীরূপে হিন্দুরা যে অগ্রাধিকার পেয়ে আসছিল তা অনেকটাই খর্ব হয়েছিল এই চুক্তির ফলে ।
মুসলিমদের স্বতন্ত্র জাতির মর্যাদা :
সিমলা দৈত্যের ফলে ভারতের মুসলমানরা যেসব সুযােগসুবিধার আশ্বাস পেয়েছিল তাতে ভারতে সংখ্যালঘিষ্ঠ হলেও এক আলাদা জাতিরূপে তাদের মর্যাদা বেড়েছিল ।
সিমলা দৌত্যের সমালোচনা
সিমলা দৈত্যে মুসলিম প্রতিনিধিদল , মূলত দুটি বিষয়ে সাফল্য পেয়েছিলেন ।
- সিমলায় মুসলিম প্রতিনিধিদের ব্রিটিশ সরকার ভারতের মুসলিম সমাজের মূল প্রতিভূ বলে মেনে নেয় ।
- ব্রিটিশ সরকার মুসলিম প্রতিনিধিদের বিভিন্ন আশ্বাস দান এবং পৃথক নির্বাচনের দাবি মেনে নিয়ে ভারতীয় মুসলিম সমাজকে হিন্দুদের থেকে পৃথক করতে চেয়েছিল । যদিও এ নিয়ে পণ্ডিত মহলে বিতর্ক আছে ।
উপসংহার
সিমলা দৈত্যের প্রতিনিধিদল ভারতীয় মুসলিম সমাজের প্রকৃত প্রতিনিধি ছিলেন না । তাই উচ্চ মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত এই প্রতিনিধিদলের দাবিগুলিতে মুসলিম সমাজের সার্বিক স্বার্থ রক্ষিত হয়নি । তবে ভারতীয় রাজনীতিতে সিমলা দৌত্য সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে সাহায্য করেছিল ।