অস্ট্রেলিয়ার ভূপ্রকৃতি / নদনদী / জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ
Contents
অস্ট্রেলিয়ার ভূপ্রকৃতি / নদনদী / জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ
অস্ট্রেলিয়া মহাদেশটি চারিদিকে সমুদ্রবেষ্টিত । অস্ট্রেলিয়া দ্বীপ এত বড়াে যে একে ‘ দ্বীপ মহাদেশ ’ বলা হয় । আবার বিষুবরেখার দক্ষিণে বলে একে দক্ষিণের দেশও বলা হয় । পৃথিবীর উন্নত মহাদেশগুলি থেকে এটি অনেক দূরে অবস্থিত বলে এখানকার অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব হয় নি ।

অস্ট্রেলিয়ার লােকবসতির ঘনত্ব খুব কম । এখানে প্রচুর খনিজসম্পদ পাওয়া যায় । যেমন — কয়লা , খনিজ তেল , লৌহ – আকরিক ইত্যাদি । কিন্তু তা সত্ত্বেও এখানে কোনাে শিল্পের বিকাশ ঘটেনি । এখানকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ , পশু , জন্তু জানােয়ার প্রভৃতি হল অর্থনৈতিক সম্পদ ।
অস্ট্রেলিয়ার ভূপ্রকৃতি
ভূ প্রকৃতি অনুসারে অস্ট্রেলিয়াকে চার ভাগে ভাগ করা যায় । যথা —
- পূর্বদিকের উচ্চপার্বত্য ভূমি
- পশ্চিমের বিশাল মালভূমি
- মধ্যভাগের সমভূমি
- উপকূলের সমভূমি
পূর্বদিকের উচ্চপার্বত্য ভূমি :
এই পার্বত্য অঞ্চলটি উত্তরে ইয়র্ক অন্তরীপ থেকে দক্ষিণে তাসমানিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত । এটি একটি প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বতমালা এই পর্বতমালার পূর্ব – দিক খুব খাড়া এবং পশ্চিম – দিক ঢালু । ফলে পূর্ববাহিনী নদীগুলি ছােটো , কিন্তু তীব্র খরস্রোতা । অপর দিকে পশ্চিমবাহিনী নদীগুলি দীর্ঘ , কিন্তু ক্ষীণস্রোতা । এই পর্বতটির বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নাম । যেমন – ভিক্টোরিয়ায় এই পর্বতমালার নাম অস্ট্রেলিয়ান আল্পস । এর দুটি শৃঙ্গ — কোসিয়াস্কো ( ২২৩০ মিটার ) ও টাউনসেন্ড ( ২২১০ মিটার ) । নিউ সাউথ ওয়েলস প্রদেশে এটি লিভারপুল ও নিউ ইংল্যান্ড নামে পরিচিত । কুইনস ল্যান্ডের দক্ষিণে এটিকে ডালিং – ডাউনস এবং উত্তরে গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জ বলে ।
পশ্চিমের বিশাল মালভূমি :
এটি মহাদেশের প্রায় অর্ধেক স্থান অধিকার করে আছে । এই মালভূমির মধ্যে দুটি বিখ্যাত মরুভূমি আছে । যথা — গ্রেট স্যান্ডি ও গ্রেট ভিক্টোরিয়া । আবার কোথাও কোথাও উচ্চভূমিও লক্ষ করা যায় । যেমন — হ্যামারসলি রেঞ্জ , ম্যাকডােনেল রেঞ্জ , ম্যাসিগ্রেড রেঞ্জ প্রভৃতি ।
মধ্যভাগের সমভূমি :
পশ্চিমের মালভূমি ও পূর্বের পার্বত্য ভূমির মধ্যস্থলে সৃষ্টি হয়েছে এক বিশাল সমভূমি , এটি উত্তর – দক্ষিণে বিস্তৃত । নদীবাহিত পলিমাটি দিয়ে এই সমভূমিটি গঠিত । এই সমভূমিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা —
- কার্পেন্টারিয়ার সমভূমি ,
- মধ্যের আয়ার হ্রদ – অববাহিকার সমভূমি এবং
- দক্ষিণ – পূর্বের মারে – ডালিং অববাহিকার সমভূমি ।
উপকূলের সমভূমি :
দক্ষিণের উপকূলের সমভূমি খুব চওড়া । কিন্তু এই অংশটি শুষ্ক ও মরু প্রকৃতির । আবার পূর্ব উপকূলের সমভূমি সংকীর্ণ । কিন্তু দীর্ঘ ও উপকূল ভাগ ভগ্ন । বাস প্রণালি তাসমানিয়া দ্বীপকে অস্ট্রেলিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে । এই মহাদেশের উত্তর পূর্ব দিকে ১৯২০ কি. মি. দীর্ঘ একটি প্রবাল প্রাচীর আছে । এর নাম গ্রেট বেরিয়ার রীফ ।
অস্ট্রেলিয়ার নদনদী
এই মহাদেশে নদ – নদীর সংখ্যা কম । এই নদীগুলির বেশির ভাগই বৃষ্টির জলে পুষ্ট । এখানকার উল্লেখযােগ্য নদীগুলি হল মারে – ডার্লিং , মিশেল , ফ্লিল্ডার্স , রূপার , ব্রিসবেন , হান্টার , ভিক্টোরিয়া , ফিজরয় , অ্যাসবারটেন , মার্চিসন , ক্রীক , কুপার্জ ইত্যাদি । মারে – ডার্লিং নদী বরফ গলা জলে পুষ্ট বলে সারা বছর নদীতে জল থাকে । কিন্তু অন্য নদীগুলি গ্রীষ্মকালে শুকিয়ে যায় । পূর্ব উপকূলের নদীগুলিতেও বছরের সব সময়ে জল থাকে , কারণ পূর্ব উপকূলে সব সময় বৃষ্টিপাত হয় । অন্তর্বাহিনী নদীগুলির মধ্যে আয়ার্স , কুপার্স , ডায়ম্যাণ্টিনা উল্লেখযােগ্য । মারে – ডার্লিং এই দেশের প্রধান নদী এবং এটি একটি বিশাল অববাহিকা সৃষ্টি করেছে । আয়ার এখানকার বৃহত্তম হ্রদ । এর আয়তন ৯৩২৪ বর্গ কি. মি. । এছাড়া টোরেন্স , গার্ডনার ইত্যাদি হ্রদ উল্লেখযােগ্য ।
অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু
দক্ষিণ গােলার্ধে অবস্থিত হওয়ায় এই মহাদেশটির জলবায়ুতে নানা বৈচিত্র্য দেখা যায় । যেমন — এর উত্তর অংশে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব পরিলক্ষিত হয় , আবার দক্ষিণের কিছু কিছু স্থানে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রভাব চোখে পড়ে । উত্তর – পূর্ব এবং দক্ষিণ উপকূলে ৭৫ সে. মি. বৃষ্টিপাত হয় । পশ্চিম ও মধ্যভাগে খুব কম বৃষ্টিপাত হয় ।
অস্ট্রেলিয়ার স্বাভাবিক উদ্ভিদ
অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত ক্ৰান্তিয় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে চিরহরিৎ গাছের অরণ্য দেখা যায় । মারে – ডার্লিং উপত্যকায় তৃণভূমি দেখা যায় । চিরহরিৎ অরণ্যে জারা , কৌরী নামে এক ধরনের শক্ত কাঠ পাওয়া যায় ।