ভৌত বিজ্ঞান

নিউটনের প্রথম গতিসূত্র আলোচনা করো

Contents

নিউটনের প্রথম গতিসূত্র আলোচনা করো

বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল দ্বারা অবস্থার পরিবর্তনে বাধ্য না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং সচল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরলরেখায় চলতে থাকবে । 

maxresdefault 1

নিউটনের প্রথম সূত্রটি থেকে আমরা দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ধারণা পাই — 

  1. বস্তুর জাড্য এবং 
  2. বলের সংজ্ঞা । 

জাড্য বা জড়তা

যে ধর্মের জন্য স্থির বস্তু স্থির অবস্থায় বা গতিশীল বস্তু তার গতীয় অবস্থা বজায় রাখতে চায় বা নিজের অবস্থা পরিবর্তনে বাধা দেয় সেই ধর্মকে জাড্য বা জড়তা বলে । বস্তুর ভরই জাড্যের পরিমাপক । জাড্য দুই প্রকার — 

  1. স্থিতিজাড্য এবং 
  2. গতিজাড্য ।

স্থিতিজাড্য :

স্থির বস্তুর চিরকাল স্থির অবস্থায় থাকার প্রবণতাকে স্থিতিজাড্য বলে । উদাহরণ —

  1. কোনাে গাড়ি হঠাৎ চলতে শুরু করলে গাড়ির মধ্যে বসে থাকা যাত্রী পিছনের দিকে হেলে যায় । স্থিতিজাড্যের জন্য এরূপ ঘটে । যখন গাড়িটি স্থির ছিল তখন যাত্রীও স্থির ছিল । হঠাৎ গাড়ি চলতে শুরু করলে যাত্রীর দেহের নিম্নাংশ গাড়ির সংলগ্ন বলে গতিশীল হয় । কিন্তু দেহের ঊর্ধ্বাংশ স্থিতিজাড্যের প্রভাবে স্থির থাকতে চায় । তাই যাত্রী পিছন দিকে হেলে পড়ে ।
  2. লাঠি দিয়ে আঘাত করে কম্বল বা পশমের কোটের ধুলাে ঝাড়া হয় । লাঠি দিয়ে আঘাত করলে কম্বল বা কোট গতিশীল হয় । ওদের গায়ে লেগে থাকা ধূলিকণাগুলি স্থিতিজাড্যের জন্য আগের অবস্থাতেই থাকতে চায় । তাই কোনাে অবলম্বন না পাওয়ায় ধূলিকণাগুলি নীচে পড়ে যায় । 

গতিজাড‍্য : 

সচল বস্তুর সবসময় সমবেগে সরলরেখা বরাবর চলার প্রবণতাকে গতিজাভ্য বলে । উদাহরণ —

  1. চলন্ত গাড়ি হঠাৎ থামলে গাড়ির যাত্রী সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে । গতিজাড্যের জন্য এরুপ ঘটে । গাড়িটি গতিশীল থাকায় আরােহীর সমস্ত দেহই গতিশীল ছিল । গাড়ি থামার মুহূর্তে যাত্রীর দেহের নিম্নাংশ স্থির অবস্থায় আসে , কিন্তু দেহের ঊর্ধ্বাংশ তখনও গতি বজায় রাখতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায় । ফলে যাত্রী সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে । 
  2. চলন্ত গাড়ি থেকে নামতে গেলে পিছন দিকে হেলে নামতে হয় । তা না হলে সামনের দিকে হুমড়ি খেয়ে পড়ার ভয় থাকে । চলন্ত গাড়িতে যাত্রীর সমস্ত দেহ গতিশীল থাকে । গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর দেহের নিম্নাংশ মাটির সংস্পর্শে এসে স্থির হয় । কিন্তু দেহের ঊর্ধ্বাংশ তখনও গতি বজায় রাখতে চায় বলে সামনের দিকে এগিয়ে যায় । তাই হুমড়ি খেয়ে পড়ার ভয় থাকে । কিন্তু পিছন দিকে হেলে নামলে দেহের উর্ধ্বাংশ কিছুদূর এগিয়ে স্থির অবস্থায় আসে ; তাই হুমড়ি খেয়ে পড়ার ভয় থাকে না । 

নিউটনের প্রথম সূত্র থেকে বলের সংজ্ঞা

নিউটনের প্রথম গতিসূত্রানুযায়ী বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল দ্বারা অবস্থার পরিবর্তনে বাধ্য না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির এবং সচল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরলরেখায় গতিশীল থাকবে । অর্থাৎ , বাইরে থেকে যা প্রয়ােগ করে কোনাে বস্তুর স্থির বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করা হয় বা করার চেষ্টা করা হয় তাকে বল বলে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!