শক্তি কি এবং শক্তির প্রকারভেদ আলোচনা করো
Contents
শক্তি কি এবং শক্তির প্রকারভেদ আলোচনা করো
কার্য করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে ।

শক্তির পরিমাপ
কোনাে বস্তু মােট যে পরিমাণ কার্য করতে পারে , তা দিয়ে বস্তুটির শক্তির পরিমাপ করা হয় ।
শক্তির পরিমাপ = কৃতকার্য = প্রযুক্ত বল x বলের প্রয়ােগবিন্দুর সরণ ।
কার্য ও শক্তির এককের অভিন্নতা
কার্য ও শক্তির একক একই ; কারণ শক্তিকে কার্য দ্বারা পরিমাপ করা হয় । তাই কার্য এবং শক্তি অভিন্ন রাশি ।
শক্তির রাশি
শক্তি স্কেলার রাশি ।
শক্তির একক
cgs পদ্ধতিতে শক্তির পরম একক আর্গ এবং অভিকর্ষীয় একক গ্রাম সেন্টিমিটার ।
SI পদ্ধতিতে শক্তির পরম একক জুল বা নিউটন মিটার এবং অভিকর্ষীয় একক কিলােগ্রাম মিটার ।
শক্তি ও ক্ষমতার পার্থক্য
শক্তি :
1. কার্য করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে ।
2. মােট কৃতকার্য দ্বারা শক্তির পরিমাপ করা হয় । এই পরিমাপে সময় জানার কোনাে প্রয়ােজন হয় না ।
3. SI – তে শক্তির পরম ও অভিকর্ষীয় একক যথাক্রমে জুল ও কিলােগ্রাম মিটার । cgs পদ্ধতিতে যথাক্রমে আর্গ ও গ্রাম সেন্টিমিটার ।
4. শক্তির বিবর্ধন সম্ভব নয় ।
ক্ষমতা :
1. কার্য করার হারকে ক্ষমতা বলে ।
2. একক সময়ে কৃতকার্য দ্বারা ক্ষমতার পরিমাপ করা হয় ।সুতরাং , ক্ষমতা পরিমাপে সময় জানার দরকার হয়।
3. SI – তে ক্ষমতার পরম ও অভিকর্ষীয় একক যথাক্রমে ওয়াট ও কিলােগ্রাম মিটার / সেকেন্ড এবং cgs পদ্ধতিতে যথাক্রমে আর্গ / সেকেন্ড ও গ্রাম সেমি / সে ।
4. ক্ষমতার বিবর্ধন সম্ভব ।
যান্ত্রিক শক্তি
কোনাে বস্তুর যান্ত্রিক কার্য করার সামর্থ্যকে তার যান্ত্রিক শক্তি বলে ।
যান্ত্রিক শক্তির প্রকারভেদ :
যান্ত্রিক শক্তি দুই প্রকার — গতিশক্তি এবং স্থিতিশক্তি ।
গতিশক্তি :
কোনাে গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য কার্য করার যে সামর্থ্য বা শক্তি লাভ করে , তাকে বস্তুটির গতিশক্তি বলে ।
উদাহরণ :
- বন্দুক থেকে গুলি ছুড়লে গুলি কাচ ভেদ করতে পারে । কারণ গতির জন্য গুলির কার্য করার সামর্থ্য জন্মায় , কিন্তু গুলিটিকে কাচের গায়ে ঠেকিয়ে রাখলে গুলি কাচ ভেদ করতে পারে না ।
- লং জাম্প দেবার সময় প্রতিযােগী অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে লাফ দেয় । দৌড়ােবার জন্য প্রতিযােগী গতিশক্তি লাভ করে । ফলে বেশি দূরে লাফ দিতে পারে ।
স্থিতিশক্তি :
কোনাে বস্তু তার স্বাভাবিক অবস্থান ও আকৃতি পরিবর্তনের জন্য কার্য করার যে সামর্থ্য বা শক্তি লাভ করে , তাকে বস্তুটির স্থিতিশক্তি বলে ।
উদাহরণ :
- একটি পেরেককে মাটিতে আংশিক উল্লম্বভাবে পুঁতে রাখা হল । একটি বড় ইটকে কিছু ওপর থেকে পেরেকের মাথার ওপর ফেললে দেখা যাবে পেরেকটি মাটির মধ্যে কিছুটা ঢুকে গেল । কিন্তু ইটটিকে পেরেকের মাথায় ধরলে পেরেক মাটিতে ঢােকে না । সুতরাং ইটটিকে কিছু ওপরে তােলার জন্য তার কিছু কার্য করার সামর্থ্য জন্মায় । তাই পেরেকটির ওপর কিছু কার্য করে পেরেকটিকে মাটিতে ঢােকায় ।
- ঘড়িতে দম দিলে ঘড়ির স্প্রিং গুটিয়ে ছােটো হয় । ফলে আকৃতিগত পরিবর্তনের জন্য স্প্রিং – এর মধ্যে স্থিতিশক্তি সঞ্চিত হয় । এই সঞ্চিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘড়ি চলে ।
গতিশক্তির পরিমাপ
বাইরে থেকে বল প্রয়ােগ করে কোনাে গতিশীল বস্তুকে থামালে থেমে যাওয়ার আগে পর্যন্ত বলের বিরুদ্ধে বস্তুটি মােট যে পরিমাণ কার্য করে , তাই দিয়ে বস্তুটির গতিশক্তির পরিমাপ করা হয় ।
m ভরের বস্তু v বেগে চললে বস্তুর ,
গতিশক্তি = ½ x ভর x ( বেগ ) 2 = ½mv²
স্থিতিশক্তির পরিমাপ
মনে করি , m ভরের কোনাে বস্তুকে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে h উচ্চতায় তােলা হল । বস্তুটির ওপর ক্রিয়াশীল বল = বস্তুর ওজন = mg
এই বলের বিরুদ্ধে বস্তুটিকে h উচ্চতায় তােলার জন্য কৃতকার্য = বল x সরণ = mg × h
এই কৃতকার্য বস্তুর মধ্যে স্থিতিশক্তি হিসেবে সঞ্চিত থাকে ।
অতএব , বস্তুটির স্থিতিশক্তি = mgh = বস্তুর ভর x অভিকর্ষজ ত্বরণ x উচ্চতা ।
স্থিতি শক্তি গতি শক্তিতে রূপান্তর
কোনাে বস্তুকে উঁচুস্থান থেকে ভূপৃষ্ঠের দিকে ছেড়ে দিলে তার স্থিতিশক্তি ক্রমশ গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকে । প্রথমে বস্তুটির সব শক্তি স্থিতিশক্তি । যত নীচের দিকে বস্তুটি নামে তত তার স্থিতিশক্তি কমে , গতিশক্তি বাড়ে । ভূপৃষ্ঠ স্পর্শ করার ঠিক আগের মুহূর্তে তার স্থিতিশক্তি শূন্য হয় এবং গতিশক্তি সর্বোচ্চ হয় ।
গতি শক্তি স্থিতি শক্তিতে রূপান্তর
কোনাে বস্তুকে বেগ দিয়ে ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে ছুড়ে দিলে তার গতিশক্তি ক্রমশ স্থিতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয় । প্রথমে বস্তুটির সব শক্তি গতিশক্তি । যত ওপরের দিকে বস্তুটি ওঠে তত তার গতিশক্তি কমে এবং স্থিতিশক্তি বাড়ে । সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌছােলে বস্তুটির গতিশক্তি শূন্য হয় এবং স্থিতিশক্তি সর্বোচ্চ হয় ।