ভৌত বিজ্ঞান

শক্তি কি এবং শক্তির প্রকারভেদ আলোচনা করো

Contents

শক্তি কি এবং শক্তির প্রকারভেদ আলোচনা করো

কার্য করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে ।

1379398021 lightning wallpaper
শক্তি

শক্তির পরিমাপ

কোনাে বস্তু মােট যে পরিমাণ কার্য করতে পারে , তা দিয়ে বস্তুটির শক্তির পরিমাপ করা হয় ।

শক্তির পরিমাপ = কৃতকার্য = প্রযুক্ত বল x বলের প্রয়ােগবিন্দুর সরণ ।

কার্য ও শক্তির এককের অভিন্নতা

কার্য ও শক্তির একক একই ; কারণ শক্তিকে কার্য দ্বারা পরিমাপ করা হয় । তাই কার্য এবং শক্তি অভিন্ন রাশি

শক্তির রাশি

শক্তি স্কেলার রাশি

শক্তির একক

cgs পদ্ধতিতে শক্তির পরম একক আর্গ এবং অভিকর্ষীয় একক গ্রাম সেন্টিমিটার

SI পদ্ধতিতে শক্তির পরম একক জুল বা নিউটন মিটার এবং অভিকর্ষীয় একক কিলােগ্রাম মিটার

শক্তি ও ক্ষমতার পার্থক্য

শক্তি :

1. কার্য করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে ।

2. মােট কৃতকার্য দ্বারা শক্তির পরিমাপ করা হয় । এই পরিমাপে সময় জানার কোনাে প্রয়ােজন হয় না ।

3. SI – তে শক্তির পরম ও অভিকর্ষীয় একক যথাক্রমে জুল ও কিলােগ্রাম মিটার । cgs পদ্ধতিতে যথাক্রমে আর্গ ও গ্রাম সেন্টিমিটার ।

4. শক্তির বিবর্ধন সম্ভব নয় ।

ক্ষমতা :

1. কার্য করার হারকে ক্ষমতা বলে ।

2. একক সময়ে কৃতকার্য দ্বারা ক্ষমতার পরিমাপ করা হয় ।সুতরাং , ক্ষমতা পরিমাপে সময় জানার দরকার হয়।

3. SI – তে ক্ষমতার পরম ও অভিকর্ষীয় একক যথাক্রমে ওয়াট ও কিলােগ্রাম মিটার / সেকেন্ড এবং cgs পদ্ধতিতে যথাক্রমে আর্গ / সেকেন্ড ও গ্রাম সেমি / সে ।

4. ক্ষমতার বিবর্ধন সম্ভব ।

যান্ত্রিক শক্তি

কোনাে বস্তুর যান্ত্রিক কার্য করার সামর্থ্যকে তার যান্ত্রিক শক্তি বলে

যান্ত্রিক শক্তির প্রকারভেদ :

যান্ত্রিক শক্তি দুই প্রকার — গতিশক্তি এবং স্থিতিশক্তি

গতিশক্তি :

কোনাে গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য কার্য করার যে সামর্থ্য বা শক্তি লাভ করে , তাকে বস্তুটির গতিশক্তি বলে ।

উদাহরণ :

  1. বন্দুক থেকে গুলি ছুড়লে গুলি কাচ ভেদ করতে পারে । কারণ গতির জন্য গুলির কার্য করার সামর্থ্য জন্মায় , কিন্তু গুলিটিকে কাচের গায়ে ঠেকিয়ে রাখলে গুলি কাচ ভেদ করতে পারে না ।
  2. লং জাম্প দেবার সময় প্রতিযােগী অনেক দূর থেকে দৌড়ে এসে লাফ দেয় । দৌড়ােবার জন্য প্রতিযােগী গতিশক্তি লাভ করে । ফলে বেশি দূরে লাফ দিতে পারে ।

স্থিতিশক্তি :

কোনাে বস্তু তার স্বাভাবিক অবস্থান ও আকৃতি পরিবর্তনের জন্য কার্য করার যে সামর্থ্য বা শক্তি লাভ করে , তাকে বস্তুটির স্থিতিশক্তি বলে ।

উদাহরণ :

  1. একটি পেরেককে মাটিতে আংশিক উল্লম্বভাবে পুঁতে রাখা হল । একটি বড় ইটকে কিছু ওপর থেকে পেরেকের মাথার ওপর ফেললে দেখা যাবে পেরেকটি মাটির মধ্যে কিছুটা ঢুকে গেল । কিন্তু ইটটিকে পেরেকের মাথায় ধরলে পেরেক মাটিতে ঢােকে না । সুতরাং ইটটিকে কিছু ওপরে তােলার জন্য তার কিছু কার্য করার সামর্থ্য জন্মায় । তাই পেরেকটির ওপর কিছু কার্য করে পেরেকটিকে মাটিতে ঢােকায় ।
  2. ঘড়িতে দম দিলে ঘড়ির স্প্রিং গুটিয়ে ছােটো হয় । ফলে আকৃতিগত পরিবর্তনের জন্য স্প্রিং – এর মধ্যে স্থিতিশক্তি সঞ্চিত হয় । এই সঞ্চিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘড়ি চলে ।

গতিশক্তির পরিমাপ

বাইরে থেকে বল প্রয়ােগ করে কোনাে গতিশীল বস্তুকে থামালে থেমে যাওয়ার আগে পর্যন্ত বলের বিরুদ্ধে বস্তুটি মােট যে পরিমাণ কার্য করে , তাই দিয়ে বস্তুটির গতিশক্তির পরিমাপ করা হয় ।

m ভরের বস্তু v বেগে চললে বস্তুর ,

গতিশক্তি = ½ x ভর x ( বেগ ) 2 = ½mv²

স্থিতিশক্তির পরিমাপ

মনে করি , m ভরের কোনাে বস্তুকে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে h উচ্চতায় তােলা হল । বস্তুটির ওপর ক্রিয়াশীল বল = বস্তুর ওজন = mg

এই বলের বিরুদ্ধে বস্তুটিকে h উচ্চতায় তােলার জন্য কৃতকার্য = বল x সরণ = mg × h

এই কৃতকার্য বস্তুর মধ্যে স্থিতিশক্তি হিসেবে সঞ্চিত থাকে ।

অতএব , বস্তুটির স্থিতিশক্তি = mgh = বস্তুর ভর x অভিকর্ষজ ত্বরণ x উচ্চতা ।

স্থিতি শক্তি গতি শক্তিতে রূপান্তর

কোনাে বস্তুকে উঁচুস্থান থেকে ভূপৃষ্ঠের দিকে ছেড়ে দিলে তার স্থিতিশক্তি ক্রমশ গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকে । প্রথমে বস্তুটির সব শক্তি স্থিতিশক্তি । যত নীচের দিকে বস্তুটি নামে তত তার স্থিতিশক্তি কমে , গতিশক্তি বাড়ে । ভূপৃষ্ঠ স্পর্শ করার ঠিক আগের মুহূর্তে তার স্থিতিশক্তি শূন্য হয় এবং গতিশক্তি সর্বোচ্চ হয় ।

গতি শক্তি স্থিতি শক্তিতে রূপান্তর

কোনাে বস্তুকে বেগ দিয়ে ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে ছুড়ে দিলে তার গতিশক্তি ক্রমশ স্থিতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয় । প্রথমে বস্তুটির সব শক্তি গতিশক্তি । যত ওপরের দিকে বস্তুটি ওঠে তত তার গতিশক্তি কমে এবং স্থিতিশক্তি বাড়ে । সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌছােলে বস্তুটির গতিশক্তি শূন্য হয় এবং স্থিতিশক্তি সর্বোচ্চ হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!