অন্ধকূপ হত্যা বলতে কি বোঝো আলোচনা করো
Contents
অন্ধকূপ হত্যা বলতে কি বোঝো আলোচনা করো
কলকাতার ইংরেজ গভর্নর ড্রেক নানাভাবে নবাব সিরাজউদ্দৌলার কর্তৃত্বকে অস্বীকার করে চলেছিলেন । সিরাজের নির্দেশ সত্ত্বেও যেমন ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণদাসকে প্রত্যর্পণ করেননি , তেমনি ফোর্ট উইলিয়ম দুর্গের সংস্কার কাজও তিনি বন্ধ করেননি । ক্ষুব্ধ সিরাজ তাই বিশাল বাহিনী নিয়ে কলকাতা অভিযান করেন । 4 জুন সিরাজ ইংরেজদের কাশিমবাজার কুঠি দখল করেন এরপর 16 জুন 1756 খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় পৌঁছান তিনদিন পর গভর্নর ড্রেক সেনাবাহিনীর প্রধান ও অন্যান্য নেতৃস্থানীয় ইংরেজরা দুর্গ ছেড়ে ফলতায় পালিয়ে যান । পরের দিন 20 জুন ফোর্ট উইলিয়মের সেনারা সামান্য প্রতিরোধের পর আত্মসমর্পণ করে কলকাতা দখলের পর সিরাজ এর নাম দেন আলিনগর এবং সেনাপতি মানিকচাঁদের ওপর কলকাতার দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে পুনরায় মুর্শিদাবাদ ফিরে যান ।

হলওয়েল এর বিবরণ
হলওয়েল নামে জনৈক ব্রিটিশ কর্মচারী এক বিবরণে জানান যে ওই সময় ফোর্টে সৈন্য ও অধিবাসী মিলিয়ে 146 জন ইংরেজ ছিলেন । সিরাজ তাদের সকলকে একটা ছোট জানালা বিশিষ্ট 18 ফুট লম্বা ও 14 ফুট 10 ইঞ্চি চওড়া ঘরে সারারাত বন্দি করে রাখেন প্রচন্ড গরমে শ্বাসকষ্টে পরদিন দেখা যায় তাদের মধ্যে 123 জনই মারা গেছে । এই নির্মম ঘটনাকেই হলওয়েল অন্ধকূপ হত্যা বলে উল্লেখ করেছেন ।
কাল্পনিক কাহিনী
পরবর্তীকালে প্রমাণিত হয়েছে যে ঘটনাটি আদৌ সত্য নয় । বিবরণীটি হলওয়েলের কল্পনাপ্রসূত কারণ সে সময় ফোর্টে 146 জন ইংরেজের থাকার সম্ভাবনা যেমন ছিল না তেমনি ওই ছোট ঘরে 146 জন ব্যক্তির স্থান সংকুলান ও অসম্ভব ছিল । অল্প সংখ্যক অবশিষ্ট ইংরেজকে তথাকথিত অন্ধকূপে আটকে আটক করা হয়ে থাকতে পারে।
সমালোচকদের অভিমত
সমালোচকরা মনে করেন নবাবের চরিত্রহননের জন্য ব্রিটিশ কর্মচারী হলওয়েল মিথ্যা ও কাল্পনিক এই কাহিনী প্রচার করেছিলেন । স্যার যদুনাথ সরকার বলেছেন সেসময়ে কলকাতায় 146 জন নয় 60 থেকে 70 জন ইংরেজ ছিলেন । গবেষক অক্ষয় কুমার মৈত্র মনে করেন অন্ধকূপ হত্যায় মৃত ইংরেজদের যে তালিকা হলওয়েল প্রকাশ করেন তাদের মধ্যে অনেকেই আগে মারা গিয়েছিলেন এবং অনেকেই পরে জীবিত ছিলেন । শ্রীমতি অ্যানি বেসান্ত এ বিষয়ে মত প্রকাশ করে বলেছেন ” জ্যামিতি প্রমাণ করেছে যে পাটিগণিতের অংক ভুল ” (‘ Geometry disproving arithmetic gave lie to the story ’) ।