ইতিহাস

নয়া সাম্রাজ্যবাদ বলতে কি বোঝো আলোচনা করো

Contents

নয়া সাম্রাজ্যবাদ বলতে কি বোঝো আলোচনা করো

ইতিহাসে রাজতন্ত্রের জন্মলগ্ন থেকেই রাজা – মহারাজাদের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে একচ্ছত্র সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রবণতা দেখা যায় । আলেকজান্ডার থেকে শুরু করে নেপােলিয়ন বোনাপার্টের সাম্রাজ্যবাদী অভিযানের কাহিনি আমাদের অজানা নয় । কিন্তু এই সাম্রাজ্যবাদ ছিল নিছক ভৌমিক সাম্রাজ্যবাদ । অবশেষে খ্রিস্টীয় উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বিশেষ করে ঐক্যবদ্ধ জার্মানি সৃষ্টির পর থেকে ইউরােপে এই সাম্রাজ্যবাদের চরিত্রে আসে এক বিশাল পরিবর্তন । ভৌমিক অধিকারের সীমা পেরিয়ে এই সাম্রাজ্যবাদ অধীনস্থ দেশের শিক্ষা , সংস্কৃতি , সমাজ , অর্থনীতি সবকিছুকেই প্রভাবিত করতে থাকে । পরিবর্তিত এই সাম্রাজ্যবাদ ইউরােপীয় ইতিহাসে নয়া সাম্রাজ্যবাদ নামে পরিচিত ।

Punch Rhodes Colossus
নয়া সাম্রাজ্যবাদ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নয়া সাম্রাজ্যবাদের দায়িত্ব

অর্থনৈতিক ভিত্তির মাধ্যমে :

অনেকের মতে নয়া সাম্রাজ্যবাদ উত্থানের জন্য অর্থনীতি ছিল সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য কারণ । এই কারণকে আবার চারভাগে ভাগ করা হয়েছে —

  1. পুঁজির বিনিয়ােগের ক্ষেত্র ,
  2. উৎপন্ন দ্রব্যাদি বিক্রির বাজার ,
  3. কাঁচামাল সংগ্রহের ক্ষেত্র ,
  4. নতুন বাসস্থান ইত্যাদি ।

উক্ত বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করেই সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি পরস্পরের মধ্যে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়ে , যা বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল । উনিশ শতকের শেষভাগে ইউরােপের প্রতিটি দেশেই শিল্পায়ন সম্পূর্ণ হওয়ার ফলে পুঁজিপতিদের হাতে প্রচুর মূলধন জমে যায় । সেই মূলধনের বিনিয়ােগ , নিজ নিজ দেশের কলকারখানার জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ এবং ওইসব কারখানায় উৎপন্ন পণ্যাদি বিক্রির জন্য বাজার দখলকে কেন্দ্র করেই এই নতুন সাম্রাজ্যবাদের উৎপত্তি ।

রাজনৈতিক ভিত্তির মাধ্যমে :

সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি একে অপরকে সন্দেহ ও অবিশ্বাস করায় তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয় । কারণ রাজনৈতিক নেতৃবর্গ মনে করেন , জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা , দেশের প্রগতি ও সমৃদ্ধি এবং স্বয়ম্ভরতা অর্জনের জন্যই সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রয়ােজন । তাই এশিয়া , আফ্রিকার অনধিকৃত অঞ্চলগুলিতে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য ইউরােপীয় শক্তিগুলির মধ্যে শুরু হয় তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা । লেনিন বলেছেন ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সাম্রাজ্যবাদেরই অংশমাত্র । পারস্পরিক সংঘর্ষই হল এর পরিণতি ।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘটনার মাধ্যমে :

নয়া সাম্রাজ্যবাদের উল্লেখযােগ্য কয়েকটি আন্তর্জাতিক বিবাদ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি রচনায় সাহায্য করে । যেমন — মিশর ( ইজিপ্ট ) -কে কেন্দ্র করে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে বিবাদ , পারস্য নিয়ে ব্রিটেন ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব , বলকান অঞ্চলকে নিয়ে জার্মানিরাশিয়ার মধ্যে বিরােধ , চিনকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও জাপানের মধ্যে বিবাদ , মরক্কো নিয়ে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে বিবাদ ইত্যাদি ।

স্থায়ী সাম্রাজ্যলিস্পা :

এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ইংল্যান্ড , ফ্রান্স , বেলজিয়াম , ইতালি , রাশিয়া , জার্মানি , জাপান , আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মতাে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য স্থাপনের দ্বন্দ্ব বিশ্বকে অতি দ্রুত এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের দিকে এগিয়ে দেয় , প্রস্তুত করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্র ।

ব্যক্তি বিশেষের ভাবের মাধ্যমে :

বণিকরা বাণিজ্যিক স্বার্থে , যাজকরা ধর্মপ্রচারের লক্ষ্যে , অভিযাত্রী দল অজানা – অচেনা অঞ্চলকে জানার আগ্রহে , রাষ্ট্রনায়কগণ উপনিবেশ স্থাপনের লক্ষ্যে এবং শিল্পপতিগণ কাঁচামাল সংগ্রহ আর উৎপাদিত পণ্যের বাজার তৈরির লক্ষ্যে একে অপরের দেশে নিজের আধিপত্য কায়েম করতে চাইলে দ্বন্দ্ব বাঁধে । পারস্পরিক এই দ্বন্দ্বই উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পেয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!