জীবন বিজ্ঞানভৌত বিজ্ঞান

জৈব যৌগের ভূমিকা আলোচনা করো

Contents

জৈব যৌগের ভূমিকা আলোচনা করো

জীবদেহের বেশির ভাগ অংশই জৈব যৌগ দ্বারা গঠিত । তাই জীবের জীবন ক্রিয়ার সাথে জৈব যৌগের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে । জীবন ক্রিয়া অব্যাহত রাখতে জীবের জন্ম , পুষ্টি , বৃদ্ধি , ক্ষয়পুরণ , বংশবৃদ্ধি , বংশধারা রক্ষণ প্রভৃতি বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়ার প্রয়ােজন হয় আর এইসব জৈবিক ক্রিয়ার মূলে আছে বিভিন্ন জৈব যৌগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা । আমাদের দেহের পুষ্টি , বৃদ্ধি ও ক্ষয়পুরণের জন্য আমরা যে কার্বোহাইড্রেট , ফ্যাট , প্রােটিন ও ভিটামিনযুক্ত খাবার খাই তা সবই হল জৈব যৌগ । আমাদের ফুসফুস থেকে দেহের প্রতি কোষে প্রয়ােজনীয় অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যায় হিমােগ্লোবিন নামক একটি জৈব যৌগ । জীবদেহের মধ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া ঘটে এনজাইম নামে প্রােটিন জাতীয় জৈব যৌগের উপস্থিতিতে । দেহের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয় হরমােন নামে জৈব যৌগ যা দেহের স্বাভাবিক ও সুষম বৃদ্ধি ঘটায় । জীবের বংশধারা রক্ষার মূলে আছে ডি – অক্সি রাইবাে নিউক্লিক অ্যাসিড ( DNA ) এবং রাইবাে নিউক্লিক অ্যাসিড ( RNA ) নামক দু’প্রকার জটিল জৈব যৌগ । রােগ নিরাময় ও চেতনানাশক হিসাবে ব্যবহৃত নানারকম ওষুধ তৈরি করা হয় জৈব যৌগ থেকে । এছাড়া মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের জন্য আবিষ্কৃত হয়েছে হাজারাে রকমের জৈব যৌগ ।

v78Qi
জৈব যৌগ

জৈব অণু ( Biomolecule ) 

যে সকল অণু জীবদেহ গঠনে ও কার্যকারিতায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে তাকে জৈব অণু বলে । নীচে কয়েকটি জৈব অণু সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করা হল —

কার্বোহাইড্রেট ( Carbohydrate ) :

কার্বন , হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দ্বারা গঠিত বিশেষ এক শ্রেণির প্রাকৃতিক যৌগসমুহকে কার্বোহাইড্রেট বলে । দ্রাক্ষাশর্করা বা গ্লুকোজ , স্টার্চ বা শ্বেতসার , সেলুলােজ এবং এদের নিকট সম্পর্কযুক্ত পদার্থসমুহ নিয়ে গঠিত এই কার্বোহাইড্রেট জগৎ । সরল কার্বোহাইড্রেটগুলির নামের শেষাংশে _ওজ ( –ose ) যুক্ত করা হয় । যেমন — গ্লুকোজ , ফ্রুকটোজ , মলটোজ প্রভৃতি হল কার্বোহাইড্রেট ।

অ্যামিনাে অ্যাসিড ( Amino acid ) :

কার্বন , হাইড্রোজেন , অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন দ্বারা গঠিত জৈব যৌগ যার মধ্যে অ্যামােনিয়ার জাতক অ্যামিনাে ( –NH ) এবং অ্যাসিড ( –COOH ) উভয় গ্রুপই বর্তমান তাকে অ্যামিনাে অ্যাসিড বলে । প্রােটিন জাতীয় জটিল জৈব যৌগ এই অ্যামিনাে অ্যাসিড দ্বারা গঠিত হয় । গ্লাইসিন , অ্যালানিন প্রভৃতি হল অ্যামিনাে অ্যাসিড ।

প্রােটিন ( Protein ) :

জীবদেহের গঠন ও কার্যকারিতায় যে সব জৈব অণুর প্রয়ােজন হয় তাদের মধ্যে প্রােটিনের স্থান সম্ভবত সবার প্রথমে । গ্রিক শব্দ ‘ proteros ’ এর অর্থ ‘ প্রথম ’ । এই শব্দ থেকেই প্রােটিনের নামকরণ করা হয়েছে । মাছ , মাংস , ডিম , ডাল , ছানা প্রভৃতি প্রােটিনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস । আমাদের পেশি , ত্বক , চুল , নখ প্রভৃতি প্রােটিন দ্বারা গঠিত । প্রােটিন হল নাইট্রোজেন ঘটিত জটিল জৈব যৌগ । বহুসংখ্যক অ্যামিনাে অ্যাসিড অণু যুক্ত হয়ে প্রােটিন অণু গঠন করে ।

DNA ( Deoxyribonucleic acid ) এবং RNA ( Ribonucleic acid ) :

DNA এবং RNA হল জটিল জৈব যৌগ । এগুলি জীব কোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যস্থিত ক্রোমােজোমে এবং ভাইরাসের মধ্যে দেখা যায় । এদের অণুগুলি মােচড় দেওয়া লম্বা সুতাের মতাে এবং হেলিক্যাল ( helical ) বা কুণ্ডলী আকারবিশিষ্ট শৃঙ্খলযুক্ত হয় । জীবের বংশগতির ধারা বা জেনেটিক কোড ( genetic code ) বহন করতে এই অণুগুলি সাহায্য করে । একটি ভাইরাস থেকে বহু ভাইরাস সৃষ্টির মূলেও রয়েছে এই অণুগুলির প্রধান ভূমিকা ।

অ্যাডেনােসিন ট্রাইফসফেট ( ATP ) :

প্রাণীদেহের চলাচল ও পেশি সঞ্চালনের জন্য প্রয়ােজনীয় শক্তি এই ATP নামক যৌগে সঞ্চিত থাকে । জোনাকির দেহে আলাে সৃষ্টি বা সমুদ্রে বৈদ্যুতিক মাছের দেহে বিদ্যুৎশক্তি সৃষ্টির মূলে রয়েছে এই ATP যৌগ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!