ইতিহাস

ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্ট বলতে কি বোঝো আলোচনা করো

Contents

ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্ট বলতে কি বোঝো আলোচনা করো

১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে ফেব্রুয়ারি বিপ্লব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অস্ট্রিয়া – জার্মানিসহ ইউরােপের সব জায়গায় তার ভাবধারা ছড়িয়ে পড়ে । জার্মানির ব্যাভেরিয়া , হ্যানােভার , শ্লেজউইগ , হলস্টাইন অঞ্চলে উদারনৈতিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবিতে গণবিদ্রোহ শুরু হয় । আন্দোলনের তীব্রতায় হেস , স্যাক্সোনি , ব্যাভেরিয়া , হ্যানােভার , ক্যাসেল , ব্যাডেন অঞ্চলের শাসকরা উদারনৈতিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনে বাধ্য হন । এতে উৎসাহিত হয়ে জার্মান জাতীয়তাবাদীরা ফ্রাঙ্কফোর্ট শহরে প্রাপ্তবয়স্কদের ভােটে নির্বাচিত এক প্রতিনিধিসভার আহ্বান করেন ( ১৮৪৮ খ্রি. ) ।

220px Frankfurt am Main Barrikade 1848 1
ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্ট

ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টের গঠন

বিভিন্ন জার্মান রাজ্য থেকে অধ্যাপক , আইনজীবী , সাংবাদিক , বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে ৫৮৬ জন সদস্যবিশিষ্ট ( ১৮৪৮ খ্রি. ) ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্ট গঠিত হয় । এর বিপ্লবী জাতীয়তাবাদী আদর্শ ভবিষ্যৎ ঐক্যবদ্ধ জার্মানির স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছিল । তাই ঐতিহাসিক কেটেলবি  বলেছেন — ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্ট ছিল বিপ্লবী জাতীয়তাবাদের প্রস্ফুটিত ফুল ।

ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টের লক্ষ্য

ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্টের দুটি লক্ষ্য ছিল —

  1. জার্মানদের জন্য একটি সংবিধান রচনা করা ;
  2. সমগ্র জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করা ।

ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টের কার্যকলাপ

হাইনরিস ফন গ্যাগার্ন – এর সভাপতিত্বে , ৫৮৬ জন সদস্যবিশিষ্ট ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশনে ( ১৮৪৮ খ্রি. ৩১ মার্চ ) এই আশা প্রকাশ করা হয় যে – জার্মান রাজ্যগুলিকে একে একে পার্লামেন্ট তার অধীনে সংযুক্ত করে নিতে পারবে । কিন্তু দক্ষিণপন্থী গােষ্ঠীগুলি নিজ নিজ রাজ্যের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার দাবি জানায় । অপরদিকে রবার্ট ব্লাম – এর নেতৃত্বে চরম গণতন্ত্রীরা প্রজাতান্ত্রিক যুক্তরাজ্যের দাবি তােলেন । ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্টে যেসব প্রশ্নগুলি মীমাংসার জন্য উত্থাপিত হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল—

  1. রাজনৈতিক ঐক্য গঠন ,
  2. রাজতন্ত্র না প্রজাতন্ত্র কি ধরনের সরকার নির্বাচিত হবে — তা ঠিক করা ,
  3. নবগঠিত জার্মানির সীমানা নির্ধারণ ।
  4. অবশেষে ঐক্যবদ্ধ জার্মানির রাজপদ প্রাশিয়ার রাজা চতুর্থ ফ্রেডারিক উইলিয়মকে দেওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয় পার্লামেন্টে । কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রে আস্থা না থাকায় প্রাশিয়া – রাজ সে প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন । অবশেষে ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুন ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয় ।

ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টের পরিণতি

ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্ট ব্যর্থ হয়েছিল মূলত দুটি কারণে —

মতানৈক্য :

পার্লামেন্টকে অসংখ্য জটিল সমস্যার মুখােমুখি হতে হয় । এগুলির সমাধানসূত্র বের করতে গিয়ে পার্লামেন্টের সদস্যদের মধ্যে মতভেদ ও অনৈক্য দেখা দেয় ।

ব্যর্থতা :

পার্লামেন্ট তার নিজস্ব কোনাে সিদ্ধান্তকে কার্যকর করার বৈধ ক্ষমতা পায়নি । ফলে তাকে ব্যর্থতার মুখােমুখি হতে হয় । এই ব্যর্থতাকে শ্লেষের সুরে কার্ল মার্কস  বলেছেন — ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্ট আসলে বয়স্ক স্ত্রীলােকদের সভা ছিল । ঐতিহাসিক হ্যাজেন – এর মতে ,  ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্টের সদস্যদের ভ্রান্তনীতি , মতাদর্শগত পার্থক্য ও বাগাড়ম্বরতার জন্য এই মহাসভা ব্যর্থ হয় ।

ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টের গুরুত্ব

ফ্রাঙ্কফোর্ট পার্লামেন্ট জার্মানির ঐক্যের একটি বাস্তবধর্মী রূপ তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছিল । এর আদর্শগত ঐক্যের ধারণা ভবিষ্যৎ ঐক্যবদ্ধ জার্মানির স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছিল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!