ইতিহাসে 1870 খ্রিস্টাব্দের গুরুত্ব আলোচনা করো
Contents
ইতিহাসে 1870 খ্রিস্টাব্দের গুরুত্ব আলোচনা করো
আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ নানা দিক থেকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ । ওই বছর সংঘটিত সেডানের যুদ্ধ ইউরােপে প্রবহমান রাজনৈতিক ধারার অবসান ঘটিয়ে একটা নতুন যুগের সূচনা করে —

জাতীয়তাবাদী আন্দোলন
ফরাসি বিপ্লবের পর নেপােলিয়ন বােনাপার্ট থেকে শুরু করে মেটারনিখ হয়ে তৃতীয় নেপােলিয়ন পর্যন্ত সকলেই জাতীয় রাষ্ট্র গড়ে তােলার পথে প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন । কিন্তু উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় শুরু থেকেই ইউরােপে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিভিন্ন রাজ্যে তীব্রভাবে গড়ে উঠতে থাকে , যা ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে তার সার্থক পরিণতি লাভ করে । এইসময় নতুন ভাবনার দ্বারা জাতীয়তাবাদী আন্দোলন প্রভাবিত হতে থাকে ।
নতুন শক্তিসাম্য
১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ইতালি ও জার্মানি পৃথক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে । বিশেষ করে জার্মানি ইউরােপে একটি প্রধান শক্তিতে পরিণত হয় । ফলে অন্যান্য ইউরােপীয় শক্তি শঙ্কিত হয়ে ওঠে । ইউরােপে এতদিনের শক্তির – ভারসাম্য টলে ওঠে । গড়ে ওঠে এক নতুন শক্তিসাম্য ।
ইউরােপীয় রাজনীতির নতুন দিক
এই সময় থেকে ফ্রান্স – জার্মানি সম্পর্ক ইউরােপীয় রাজনীতিকে এক নতুন পথে চালিত করে । সেডানের যুদ্ধে পরাজিত ও বিধ্বস্ত ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপােলিয়ন বন্দি হন । ফ্রান্স এই ঘটনাকে ‘ জাতীয় অপমান ’ বলে মনে করে । প্রতিশােধ নিতে পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন ঘটিয়ে সে ইউরােপে মিত্রশক্তির সন্ধানে উদগ্রীব হয়ে ওঠে ।
প্রাচ্যের সমস্যা
জাতীয়তাবাদের ঝােড়াে হাওয়ায় বহু জাতিগােষ্ঠীর মানুষ নিয়ে গড়ে ওঠা অস্ট্রিয়া সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে । জার্মানির ওপর প্রাধান্য সে ইতিপূর্বেই হারিয়েছিল । এখন নিজ গৌরব পুনরুদ্ধার করতে সে বলকান অঞ্চলে সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ করলে রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে পড়ে , ফলে প্রাচ্য সমস্যা ভয়ংকর জটিল হয়ে দাঁড়ায় ।
ব্রিটিশ – রাশিয়া শত্রুতা
প্যারিসের সন্ধিতে ( ১৮৫৪ খ্রি. ) রাশিয়ার ওপর চাপিয়ে দেওয়া সামুদ্রিক শর্তাবলি রাশিয়া সেডানের যুদ্ধের ( ১৮৭০ খ্রি. ) সুযােগে ভাঙতে শুরু করে । কৃষ্ণসাগরের তীরে রাশিয়া তার সামরিকীকরণ শুরু করে । ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার উপক্রম হলে দু-রাষ্ট্রের মধ্যে শত্রুতা বৃদ্ধি পেতে থাকে ।
জাতীয় চেতনার প্রকাশ
ইউরােপের ‘ রুগণ মানুষ ’ তুরস্কের সার্বিক দুর্বলতাকে কেন্দ্র করে পূর্বাঞ্চলীয় সমস্যা এই সময় থেকে প্রবল আকার ধারণ করে । আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবিতে বলকান অঞ্চলে বিভিন্ন জাতিগােষ্ঠী সােচ্চার হয়ে ওঠে ।
সামরিক শক্তিবৃদ্ধি
সেডানের যুদ্ধে বিজয়ী প্রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সমকক্ষ হয়ে ওঠার জন্য অন্যান্য ইউরােপীয় রাজ্য তাদের সামরিক শক্তির দ্রুত বৃদ্ধিতে মনােযােগী হয়ে ওঠে ।
অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ
এতদিনের প্রচলিত অর্থনৈতিক উদারতাবাদ ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে সারা ইউরােপে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদে রূপান্তরিত হতে থাকে ।