প্যারি কমিউন এর তাৎপর্য আলোচনা করো
Contents
প্যারি কমিউন এর তাৎপর্য আলোচনা করো
১৮৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ মার্চ প্যারিসের শ্রমজীবীশ্রেণি রাষ্ট্রপতি তিয়ের – এর নেতৃত্বাধীন বুর্জোয়া সরকারের বিরুদ্ধে যে গণ অভ্যুত্থান ঘটায় তা প্যারিস কমিউন বা প্যারি কমিউন নামে পরিচিত । পাশাপাশি প্যারি কমিউনের এই জেহাদ জার্মান সেনাদলের ফ্রান্স অধিকারের বিরুদ্ধেও ঘােষিত হয়েছিল । প্যারি কমিউনের সংগ্রাম ২৮ মে’র মধ্যে থেমে গেলেও এই ঘটনার তাৎপর্য ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ।

বিপ্লবী ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে
প্যারিসবাসীর বৈপ্লবিক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল প্যারি কমিউন । ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই ফরাসি বিপ্লব এবং ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের ১০ আগস্ট প্যারিসের জনতা কর্তৃক রাজপ্রাসাদ টুইলারিজ আক্রমণের ( জর্জ লেফেভারের মতে দ্বিতীয় বিপ্লব ) পরে শেষবারের মতাে প্যারিস নগরী ফ্রান্সকে বিপ্লবের পথ দেখিয়েছিল ।
শ্রমিক আন্দোলনের প্রসারে
প্যারিস কমিউনের স্বল্পমেয়াদি শাসনে বেশ কিছু শ্রমকল্যাণমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয় । সকল কর্মচারীকে সমহারে বেতনদানের পাশাপাশি কারখানা বন্ধ থাকাকালীনও শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় । শ্রমিকদের হাতে কলকারখানার মালিকানা তুলে দেওয়া হয় । প্রায় দু মাস ধরে চলা ( ১৮ মার্চ থেকে ২৮ মে , ১৯৭১ খ্রি. ) প্যারি কমিউনের সাম্যবাদী কার্যকলাপ পরবর্তীকালে বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষকে শ্রমিক আন্দোলনে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিল ।
সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার পথিকৃৎ হিসেবে
প্যারিসে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় গড়ে – ওঠা কমিউনিস্ট , সমাজতান্ত্রিক , জ্যাকোবিন ও নৈরাজ্যবাদী দল প্যারিস কমিউনের উত্থানে সাহায্য করেছিল । প্যারি কমিউন বা প্যারিসের শ্রমিকদের সরকার অল্প সময়ের জন্য হলেও প্যারিস নগরীতে এক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিল , যা ছিল বিশ্বে প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস । এর দেখাদেখি ফ্রান্সের অন্যান্য প্রদেশগুলিতেও কমিউন বা শ্রমিকদের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় । সমাজতান্ত্রিক আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্যারি কমিউন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রেরণা জোগায় ।
প্রজাতন্ত্র রক্ষায়
শেষপর্যন্ত প্যারি কমিউনের অবসান ঘটানাের জন্য তিয়েরের সেনারা জার্মানি থেকে মুক্তি পাওয়া ফরাসি সেনাদের সঙ্গে হাত মেলায় । তারা প্যারিসে প্রবেশ করে ( ২১ মে ) সাতদিন একটানা সংঘর্ষের পর বিদ্রোহীদের দমন করে ( ২৮ মে ) । প্যারি কমিউনের অবসান ঘটানাে হলেও এটা ঠিক যে এই বিদ্রোহ না ঘটলে প্রজাতন্ত্র রক্ষা পেত না । কারণ কমিউনের ভাবাদর্শগত প্রভাবেই ফ্রান্সে তৃতীয় প্রজাতন্ত্রের শাসনধারা ( ১৯১৯ খ্রি. পর্যন্ত ) অক্ষুন্ন ছিল ।
শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাসে
প্যারি কমিউনের ঘটনা পরবর্তীকালে শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলে । প্যারি কমিউনের ঘটনায় উদ্দীপ্ত হয়ে কার্ল মার্কস রচনা করেন ‘ দ্য সিভিল ওয়ার ইন ফ্রান্স ’ ( The Civil War in France ) নামে এক ইস্তাহার । এই ইস্তাহার পরবর্তীকালে শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারে পরিণত হয় । মার্কস প্যারি কমিউনের ঘটনাকে সর্বহারাশ্রেণির প্রথম বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের মর্যাদা দেন । মার্কস বলেন — প্যারি কমিউনের ঘটনা শ্রেণিসংগ্রামের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে ।
I want a pdf copy.