ভিয়েনা সম্মেলনের শক্তিসাম্য নীতি
Contents
ভিয়েনা সম্মেলনের শক্তিসাম্য নীতি
ইউরােপকে পুনর্গঠিত করতে চেয়ে ভিয়েনার নেতৃবর্গ যে তিনটি মৌলিক নীতি গ্রহণ করেন তার মধ্যে অন্যতম ছিল শক্তিসাম্য নীতি ( Principle of Balance of Power ) । শক্তিসাম্যের অর্থ হল বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শক্তির সমতা বজায় রাখা । ভিয়েনা সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবর্গ পারস্পরিক সন্দেহ , বিদ্বেষ এবং স্বার্থবােধের বশবর্তী হয়ে এবং ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ আক্রমণের হাত থেকে ইউরােপকে রক্ষার জন্য শক্তিসাম্য নীতি প্রয়ােগের সিদ্ধান্ত নেন । ইংল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যাসলারি এবং ফ্রান্সের প্রতিনিধি ট্যালিরাঁ ছিলেন শক্তিসাম্য নীতির প্রবক্তা ।

মূলকথা
ভবিষ্যতে ফ্রান্স যাতে আবার শক্তি সঞ্চয় করে ইউরােপের শান্তি ভঙ্গ করতে না পারে এবং বিজয়ী শক্তিবর্গ যাতে একে অন্যের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে না ওঠে , সেদিকে লক্ষ রাখা ।
উদ্দেশ্য
প্রধানত তিনটি দিকে লক্ষ রেখে ‘ শক্তিসাম্য নীতি ’ গৃহীত হয়—
- ফ্রান্সের সঙ্গে অন্যান্য দেশের শক্তির সমতা বজায় রাখা ।
- অন্যান্য দেশের সামরিক শক্তিতে সমতা আনা ।
- প্রাশিয়া , রাশিয়া , অস্ট্রিয়া প্রভৃতি দেশকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রেও ভারসাম্য বজায় রাখা ।
গৃহীত পদক্ষেপ
মিত্রপক্ষের সেনাদল মােতায়েন :
ফ্রান্সের সীমারেখা বিপ্লব – পূর্ব অবস্থার নিরিখে নির্দিষ্ট করা হয় এবং ফ্রান্সের সেনাবাহিনী ভেঙে দিয়ে ফ্রান্সের খরচে পাঁচ বছরের জন্য সেখানে মিত্রপক্ষের সেনাদল মােতায়েন করা হয় ।
রাষ্ট্রবেস্টনী গঠন :
ফ্রান্সের চারপাশে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রবেষ্টনী গড়ে তােলা হয় ।
নেদারল্যান্ডের আত্মপ্রকাশ :
উত্তর – পূর্বে অবস্থিত বেলজিয়ামকে হল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করে সার্বভৌম নেদারল্যান্ড – এর আত্মপ্রকাশ ঘটানাে হয় ।
অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রাধান্য :
উত্তর – পশ্চিম জার্মানিতে প্রাশিয়ার প্রাধান্য , দক্ষিণ জার্মানি ও উত্তর ইতালিতে অস্ট্রিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা হয় । ফ্রান্সের পূর্ব সীমান্তে রাইন প্রদেশগুলি প্রাশিয়ার সঙ্গে যােগ করা হয় ।
স্বাধীন সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠা :
ফ্রান্সের দক্ষিণ – পূর্বে সুইজারল্যান্ডকে ফ্রান্সের তিনটি জেলা প্রদান করে স্বাধীন সুইজারল্যান্ড রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করা হয় ।
রাষ্ট্রবেস্টনী গঠন :
ফ্রান্সের দক্ষিণ সীমান্তে সার্জিনিয়ার সঙ্গে জেনােয়াকে যােগ করে ফ্রান্সের চারপাশে রাষ্ট্রবেষ্টনী গঠন সম্পূর্ণ করা হয় ।
উপসংহার
শক্তিসাম্য নীতি দ্বারা অস্ট্রিয়া , প্রাশিয়া , রাশিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে যাতে সমান ক্ষমতা বণ্টিত হয় , সে ব্যাপারে বিশেষ লক্ষ রাখা হয় । ইউরােপের বৃহৎ শক্তিবর্গগুলি বুঝেছিল যে , শক্তিসাম্য বজায় না থাকলে ভবিষ্যতে যুদ্ধ বাঁধতে পারে । তাই গুলিক লিখেছেন — ভিয়েনা হল ইউরােপের শেষ শান্তি সম্মেলন যেখানে সচেতনভাবে ভারসাম্য নীতি অনুসরণ করা হয়েছিল (‘ Vienna represented the last great European peace settlement conciously based on the principle of the balance of power ’) ।