ইতিহাস

বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব আলোচনা করো

Contents

বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব আলোচনা করো

মিরকাশিম , অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা এবং মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে মিলিত জোটের সঙ্গে লর্ড ক্লাইভের ইংরেজ বাহিনীর বক্সারের প্রান্তরে যে যুদ্ধ বাধে তা বক্সারের যুদ্ধ নামে পরিচিত । মিরকাশিমের সেনাপতি মার্কার এবং সমরু ইংরেজ সেনাপতি মেজর হেক্টর মনরোর কাছে পরাজিত ( 1764 খ্রিস্টাব্দে 22 অক্টোবর ) হলে ব্রিটিশ শক্তি সুদৃঢ় হয় । এই প্রসঙ্গে জেমস স্টিফেন  বলেছেন 一 ভারতে ব্রিটিশ শক্তির উৎস হিসেবে বক্সারকে গণ্য করা হয় ।

buxar 1453117712 2
বক্সারের যুদ্ধ

ভাগ্য নির্ণায়ক যুদ্ধ হিসেবে 

বক্সারের যুদ্ধ ছিল ভারতের ইতিহাসে এক ভাগ্য নির্ণায়ক যুদ্ধ । এই যুদ্ধের ফলাফল যদি ইংরেজদের প্রতিকূলে যেত তাহলে ভারতের ইতিহাস অন্যরকম ভাবে লেখা হতো । ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্রের  মতে 一 “এই যুদ্ধটি ছিল ভারতের ইতিহাসে সর্বাধিক নিষ্পত্তি মুলক নির্ণায়ক ” (‘ This was one of the most decisive battles of Indian History ’)।

ঔপনিবেশিক শাসনের দৃঢ়তা

পলাশীর যুদ্ধে জিতে কোম্পানি ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছিল । কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে জিতে কোম্পানি ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে ।

বাংলায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠা

বক্সারের যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীনচেতা নবাব মিরকাশিমের পরাজয় ঘটায় ব্রিটিশ শক্তিকে বাধা দেওয়ার মত আর কোনো শাসক রইল না । এর ফলে বাংলায় কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ নিষ্কণ্টক হল ।

উত্তর ভারতের আধিপত্যের সূচনা

বক্সারের যুদ্ধে জিতে কোম্পানি বাংলার আধিপত্যকে দৃঢ় করে উত্তর ভারতের দিকে নজর দেয় । অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা কোম্পানির অনুগত হন এবং নামসর্বস্ব মোগল বাদশা কোম্পানির দয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । এর ফলে সমগ্র উত্তর ভারত জুড়ে কোম্পানির আধিপত্যের সূচনা ঘটে । স্যার আলফ্রেড লায়াল ( Alfred Lyall ) এর মতে 一 এই যুদ্ধের ফলে ইংরেজ শক্তি উত্তর ভারতে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয় ।

আর্থিক লুন্ঠনের সূচনায়

বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর বাংলার বাণিজ্য ও অর্থনীতির ওপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার প্রতিষ্ঠিত হয় । বাংলায় কোম্পানির অবাধ অর্থনৈতিক লুন্ঠন শুরু হয় । কোম্পানির উচ্চপদস্থ আমলারা নতুন নবাব নজম উদ্দৌলার কাছ থেকে 15 লক্ষ টাকা উপঢৌকন হিসেবে আদায় করে । এর পাশাপাশি যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলার কাছ থেকে 50 লক্ষ টাকা আদায় করা হয়।

দেওয়ানি লাভের ক্ষেত্রে 

বক্সারের যুদ্ধের চরম প্রাপ্তি হিসেবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা , বিহার , উড়িষ্যায় দেওয়ানি লাভ করেছিল। দেওয়ানি লাভের ফলে একদিকে বাংলা রাজনীতিতে কোম্পানির কর্তৃত্ব গঠিত হয়েছিল , অপরদিকে কোম্পানির আর্থিক স্বাচ্ছল্য বহুগুণ বেড়েছিল।

উপসংহার 

বক্সারের যুদ্ধের পরেই বণিকের মানদণ্ড শাসকের রাজদণ্ড রূপে দেখা দিয়েছিল। বক্সারের যুদ্ধে জেতার পর থেকেই ভারতের ইতিহাসে প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা হয়। এ প্রসঙ্গে র‍্যামসে ম্যুর  তাঁর ‘Making of British India’ গ্রন্থে লিখেছেন 一 “ বক্সার বাংলার ওপর কোম্পানির শাসন-শৃঙ্খলাকে চূড়ান্তভাবে স্থাপন করেছিল ” ( ‘Buxar finally reveted the shakles of company rule upon Bengal’ )।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!