অন্যান্য

বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু প্রবন্ধ রচনা

Contents

বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু প্রবন্ধ রচনা

বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের অগ্নিপুত্র ছিলেন শহিদ ক্ষুদিরাম । অকুতােভয় যুবকটির বৈপ্লবিক প্রয়াস আগামী প্রজন্মের যুবকদের কাছে অনুসরণযােগ্য ছিল । পরাধীন ভারতের মুক্তিযজ্ঞে আত্মাহুতির যে নিদর্শন ক্ষুদিরাম তাঁর সঙ্গী প্রফুল্ল চাকীকে নিয়ে রেখে গিয়েছেন তা সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ভিতকে আরও মজবুত করেছিল ।

66eb91f 1575350268870 cmprsd 40 1
বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু

ক্ষুদিরাম বসুর প্ৰথম জীবন :

এই মৃত্যুঞ্জয়ী কিশোরটি ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর মেদিনীপুর জেলার মৌবনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতার নাম ছিল ত্রৈলোক্যনাথ বসু , মাতা ছিলেন লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী । তাঁকে আঁতুর ঘর থেকে তাঁর বড়োদিদি অপরূপা তিন ক্ষুদ দিয়ে কিনে নেন বলে তাঁর নাম হয় ক্ষুদিরাম।

ক্ষুদিরাম বসুর শিক্ষাজীবন :

ক্ষুদিরামের শিক্ষাজীবন শুরু হয় হাটগাছিয়া পাঠশালায় । কিন্তু ভগ্নীপতি অমৃতলালবাবু তমলুক শহরে এলে ক্ষুদিরামকে  পুনরায় তমলুকের হ্যামিলটন স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে ভরতি করা হয় । সেখান  থেকে পরে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে তাঁকে ভরতি করা হয় । এই স্কুলে পড়াকালীন ক্ষুদিরাম হেমচন্দ্র কানুনগাে , জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু , সত্যেন্দ্রনাথ বসুর বিপ্লবী ভাবাদর্শে  উদ্বুদ্ধ হন । স্কুলের শেষ পরীক্ষায় পাস করে মেদিনীপুর কলেজে ভর্তি হলেও তিনি পড়াশােনা ছেড়ে দিয়ে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কাছে রাজনৈতিক দীক্ষা নেন ।

কিংসফোর্ডকে হত্যার দায়িত্ব

মজঃফরপুরের জেলা জৰ্জ ডি. এইচ. কিংসফোর্ডকে হত্যা করার জন্য ‘ যুগান্তর ‘ দলের পক্ষ থেকে বারীন্দ্রকুমার ঘােষ প্রথমে প্রফুল্ল চাকীকে দায়িত্ব দেন , কিন্তু পরে হেমচন্দ্র কানুনগোর অনুরোধে ক্ষুদিরামকে প্রফুল্ল চাকীর সহযােগী হিসেবে পাঠানাে হয় । ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকী কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য মজঃফরপুরের একটি ধর্মশালায় এসে ওঠেন ( ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৫ এপ্রিল ) । পাঁচদিন পর অর্থাৎ ৩০ এপ্রিল রাত ৮ টা ৩০ মিনিটে কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য তারা হাতে বােমা এবং পকেটে রিভলভার নিয়ে প্রস্তুত হয়ে থাকেন । ঘোড়ায় টানা ফিটন গাড়ি লক্ষ করে তাঁরা বােমা ছোঁড়েন । কিন্তু তাঁদের দুর্ভাগ্য যে গাড়ির মধ্যে কিংসফোর্ড ছিলেন না । কিংসফোর্ডের পরিবর্তে মারা গেলেন মিসেস কেনেডি ও মিস কেনেডি ।

ক্ষুদিরামের ফাঁসি

পুলিশের চোখে ধুলাে দিয়ে ক্ষুদিরাম নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না । ওয়ার্নি স্টেশনে ধরা পড়ে গেলেন ( ১৯০৮ খ্রি. ১ মে ) । মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ক্ষুদিরাম স্বীকারােক্তিতে বলেন 一 “ আমার ইচ্ছা ছিল রিভলবার থেকে গুলি ছুঁড়ে কিংসফোর্ডকে হত্যা করব ” । মজঃফরপুর জেলে ক্ষুদিরামের বিচার চলাকালীন ব্যারিস্টার কালিদাস বসু ক্ষুদিরামের হয়ে মামলা লড়লেও শেষরক্ষা করতে পারেননি । ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ / ১১৪ ধারায় ক্ষুদিরামের ফাঁসির হুকুম দিয়ে দায়রা জর্জ ই. এইচ.বার্থউড বলেন ー আসামি ক্ষুদিরাম বসুকে বিচারের রায় হিসেবে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হল (‘The sentence of the court is that the prisoner Kshudiram Basu be hanged by the neck ’) । ক্ষুদিরামের ফাঁসি ( ১৯০৮ খ্রি. ১১ আগস্ট ) হয়ে যাওয়ার পর পূর্ব ইচ্ছানুসারে তার পার্থিব দেহকে গণ্ডক নদীর তীরে দাহ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!