ইতিহাস

আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র

Contents

আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র

সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে স্টুয়ার্ট বংশের রাজত্বকালে ধর্মীয় অনাচারের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে বহু ব্রিটিশ স্বদেশ ছেড়ে আমেরিকায় এসে বসবাস শুরু করে । বংশপরম্পরায় এদের মধ্যে ব্রিটিশবিরােধী মনােভাব বজায় ছিল। স্টুয়ার্ট বংশীয় রাজা দ্বিতীয় চার্লসের আমলে যে নেভিগেশন আইন ( ১৬৬০ খ্রি. ) পাস হয় , তা  ব্রিটিশ সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের পর আমেরিকার উপনিবেশগুলিতে প্রয়ােগ করতে শুরু করে । এরই সূত্র ধরে একে একে জারি হয় সুগার অ্যাক্ট ( ১৭৬৪ খ্রি. ) , স্ট্যাম্প অ্যাক্ট ( ১৭৬৫ খ্রি. ) , ঘােষণার আইন ( ১৭৬৬ খ্রি. ) যা উপনিবেশবাসীদের আরও ব্রিটিশবিরোধী করে তোলে।

Declaration of Independence canvas rotunda John Trumbull July 4 1776
আমেরিকার স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র

প্রথম মহাদেশীয় সম্মেলন ( ১৭৭৪ খ্রি. ৫ সেপ্টেম্বর )

জর্জিয়া বাদে আমেরিকার ১২টি উপনিবেশের ৫১ জন প্রতিনিধি ফিলাডেলফিয়া শহরে আয়ােজিত প্রথম মহাদেশীয় সম্মেলনে যােগ দেন । এই সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা দুটি দলে ভাগ হয়ে যায় । ম্যাসাচুসেটসের প্রতিনিধি স্যাম অ্যাডামস ও জন অ্যাডামস এবং ভার্জিনিয়ার প্রতিনিধি পেট্রিক হেনরি ও রিচার্ড হেনরি লি প্রমুখ চরমপন্থী নেতৃবর্গ এই সম্মেলনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন । এই দুই দলের প্রতিনিধিরা ব্রিটিশ-রাজ তৃতীয় জর্জের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন —

  1. উপনিবেশ জুড়ে ব্যাবসাবাণিজ‍্যে যেসব বিধিনিষেধ আরােপ করা হয়েছে , সেসব তুলে নিতে হবে ।
  2. উপনিবেশবাসীদের অনুমতি না নিয়ে কোনাে জিনিসের ওপর কর চাপানাে যাবে না ।
  3. ব্রিটেনের সঙ্গে সকলপ্রকার ব্যাবসাবাণিজ্য বন্ধ করা হবে ।

অভিযােগ ও অধিকার বিষয়ক এক ঘােষণাপত্র রচনা করে তা ব্রিটেনের রাজার কাছে এবং এই ঘােষণাপত্রের অনুলিপি ইংল্যান্ড , কানাভা ও ১৩টি উপনিবেশবাসীর কাছে পাঠানাে হয় । এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার বোস্টনে প্রচুর সেনাবাহিনী মােতায়েন করলে তাদের সঙ্গে উপনিবেশবাসীর সংঘর্ষ বাধে ।

দ্বিতীয় মহাদেশীয় সম্মেলন ( ১৭৭৫ খ্রি. ১০ মে )

বােস্টনের কাছে লেক্সিংটনকনকর্ড নামক স্থানে ব্রটিশ সেনারা গুলি চালালে তার প্রতিবাদস্বরূপ আমেরিকার ১৩টি উপনিবেশের প্রতিনিধিরা ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনে  মিলিত হন । এই অধিবেশনে উপনিবেশবাসীরা ব্রিটিশবিরােধী সংঘর্ষকে সমর্থন জানান । বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন , টমাস জেফারসন  প্রমুখের আক্রমণাত্মক নীতি মেনে এই সম্মেলনে যুদ্ধনীতি ভােটে গৃহীত হয় এবং যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় ম্যাসাচুসেটসকে । জন অ্যাডামসের প্রস্তাব মতো জর্জ ওয়াশিংটনকে উপনিবেশগুলির সেনাধ্যক্ষ (commander in chief ) নিযুক্ত করা হয় ।

তৃতীয় মহাদেশীয় সম্মেলন ( ১৭৭৬ খ্রি. ৪ জুলাই )

জর্জ ওয়াশিংটনকে তাদের সেনাপতি নির্বাচিত করে ১৩টি উপনিবেশের প্রতিনিধিগণ তৃতীয় মহাদেশীয় সম্মেলনে যােগ দেন । এই অধিবেশনে টমাস জেফারসন  রচিত  ‘ স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র ’ ( Declaration of Independence ) গৃহীত হলে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম পর্বের অবসান ঘটে ।

স্বাধীনতার ঘােষণাপত্রের বিষয়

স্বাধীনতার ঘােষণাপত্রটি দুটি ভাগে বিভক্ত । প্রথম ভাগ উপক্রমণিকা ( preamble ) – তে মানুষের স্বভাবগত অধিকারের তত্ত্ব , বিপ্লবের অধিকার বর্ণিত আছে ।

  1. প্রত্যেক মানুষই ঈশ্বরের কাছ থেকে এমন কতকগুলি অধিকার নিয়ে জন্মেছে যা কেড়ে নেওয়া যায় না । যেমন — বেঁচে থাকার অধিকার , সূখান্বেষণের অধিকার ও স্বাধীনতার অধিকার । 
  2. শাসিতের সম্মতির ওপরই শাসকের প্রকৃত ও ন্যায্য ক্ষমতা নির্ভর করে ।
  3. প্রয়ােজনে বলপ্রয়ােগে অত্যাচারী ও অযােগ্য শাসককে উচ্ছেদ করে জনগণের গ্রহণযােগ্য সুশাসন চালু করা সম্পূর্ণ বিধিসংগত । অর্থাৎ জনগণের বিপ্লব করার অধিকার আছে । আর ঘােষণাপত্রটির দ্বিতীয় ভাগে দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকাবাসীর প্রতি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের নিদারুণ শােষণ ও শাসনের কথা বলা আছে ।

উপসংহার

স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র জারির মাধ্যমে আমেরিকাবাসী তাদের ঔপনিবেশিক সংগ্রামে ছেদ টানতে চেয়েছিল । তাই এই ঘােষণাপত্রটি স্বাধীনতার পূর্বাভাস ছিল বলা চলে । বিধিপ্রদত্ত অবিচ্ছেদ্য অধিকার , জনগণগ্রাহ্য শাসন ও বিপ্লবের অধিকারের ওপর ভিত্তি করে রচিত স্বাধীনতার ঘােষণাপত্রে বলা হয়েছিল : আমেরিকার উপনিবেশগুলি একত্রে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!