দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব আলোচনা কর
Contents
দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব আলোচনা কর

বাদামির চালুক্য বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ নৃপতি ছিলেন দ্বিতীয় পুলকেশী ( ৬১০-৬৪২ খ্রি. ) । জৈনকবি রবিকীর্তি রচিত ‘ আইহােল প্রশস্তি ’ থেকে তাঁর রাজত্বকালের বিস্তৃত বিবরণ জানা যায় ।
প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা
দ্বিতীয় পুলকেশীর দক্ষতায় চালুক্যগণ দাক্ষিণাত্যে অপ্রতিহত শক্তিতে পরিণত হয়েছিল । তিনি উত্তর কোঙ্কনে মৌর্যদের পরাজিত করে পুরী দখল করেন । কাদম্ব , মহীশূর , মালব ও গুজরাতের রাজারা ; দক্ষিণে চোল , পাণ্ড্য এবং কেরল রাজ্যের রাজারাও তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন । তাঁর সাম্রাজ্য এত বিস্তৃত হয় যে , সাম্রাজ্যের পূর্বভাগ শাসন করার জন্য তিনি তাঁর ভাই বিষ্ণুবর্ধনকে নিযুক্ত করেন । বিষ্ণুবর্ধন বেঙ্গিনগরে রাজধানী স্থাপন করে নিজেকে স্বাধীন নরপতি বলে ঘােষণা করেন ।
হর্ষের বিরুদ্ধে জয়লাভ
‘ সকলােত্তরপথনাথ ‘ হর্ষবর্ধনকে নর্মদার যুদ্ধে পরাজিত করে তিনি দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে হর্ষের রাজ্যবিস্তার রােধ করেন । হর্ষের বিরুদ্ধে জয়ের ফলে মহাকোশল ও কলিঙ্গের রাজারা তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেন । এইভাবে দ্বিতীয় পুলকেশীর দক্ষতায় চালুক্যরা দাক্ষিণাত্যে এক অমােঘ শক্তিতে পরিণত হয় । হর্ষবর্ধনকে যদি ‘ উত্তরাপথনাথ ’ বলা হয় , তবে দ্বিতীয় পুলকেশীকে বলা যায় ‘ দক্ষিণাপথনাথ ‘ ।
পল্লবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
পল্লবরাজ মহেন্দ্রবর্মনও দ্বিতীয় পুলকেশীর হাতে পরাজিত হয়েছিলেন । অবশ্য পল্লবদের পরাজিত করলেও তিনি তাদের শক্তি বিনষ্ট করতে পারেননি । শেষ পর্যন্ত পল্লব রাজ নরসিংহবর্মন পুলকেশীকে পরাজিত ও হত্যা করে তাঁর রাজধানী দখল করেন ।
হিউয়েন সাঙের বিবরণ
চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ দ্বিতীয় পুলকেশীর রাজত্বকালে দাক্ষিণাত্য পরিভ্রমণ করেন । তিনি দ্বিতীয় পুলকেশীর প্রজাহিতৈষণা , সামরিক প্রতিভা ও উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন । তিনি বলেছেন , শত্রুর প্রতি নির্মম হলেও দ্বিতীয় পুলকেশী উপকারীর প্রতি ছিলেন কৃতজ্ঞ । পারস্যরাজ দ্বিতীয় খসরুর সঙ্গে তাঁর দূত বিনিময় হয় । ব্রাহ্মণ্যধর্মাবলম্বী হলেও তিনি পরধর্মসহিষ্ণু ছিলেন । তিনি ‘ পৃথিবীবল্লভ ’ , ‘ পরমেশ্বর ’ , ‘ পরম ভাগবত ’ প্রভৃতি উপাধি গ্রহণ করেন ।