শশাঙ্কের কৃতিত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর
Contents
শশাঙ্কের কৃতিত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর

শশাঙ্কের পূর্বজীবন অজ্ঞাত । বিহারের রােটাসগড়ে পাওয়া একটি সীলের ওপর নির্ভর করে অনুমান করা হয় যে , তিনি মহাসেনগুপ্তের অধীনে একজন মহাসামন্ত ছিলেন । সামান্য সামন্ত থেকে বাহুবলে শশাঙ্ক বিশাল সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হন । শশাঙ্কের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ ।
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা
প্রথমে তিনি বঙ্গদেশের সর্বত্র নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন । বঙ্গদেশের পাঁচটি জনপদের মধ্যে কজঙ্গল , পুণ্ড্রবর্ধন , কর্ণসুবর্ণ ও তাম্রলিপ্ত , দণ্ডভুক্তি , উৎকল ও গঞ্জাম তাঁর রাজ্যভুক্ত ছিল । মগধও সম্ভবত তিনি জয় করেছিলেন ।
শশাঙ্কের কনৌজ দখল
থানেশ্বরের রাজা প্রভাকরবর্ধনের কন্যা রাজ্যশ্রীর সঙ্গে মৌখরীরাজ গ্রহবর্মনের বিবাহ হলে কনৌজ ও থানেশ্বরের মধ্যে জোট গড়ে ওঠে । এতে শশাঙ্ক শঙ্কিত হন । কনৌজের ঘাের শত্রু মালবরাজ দেবগুপ্তের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে তিনি পালটা জোট গড়ে তােলেন । থানেশ্বররাজ প্রভাকরবর্ধন হঠাৎ মারা গেলে সিংহাসনে বসেন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র রাজ্যবর্ধন । শশাঙ্ক ও দেবগুপ্ত মিলিতভাবে থানেশ্বর – কনৌজ আক্রমণ করেন । যুদ্ধে মৌখরীরাজ গ্রহবর্মন পরাজিত ও নিহত হন । রাজ্যশ্রী বন্দিনী হন । শশাঙ্ক বারাণসী পর্যন্ত ভূ – ভাগ দখল করে নেন । এই পরিস্থিতিতে রাজ্যবর্ধন সসৈন্য মালবের দিকে এগিয়ে যান । শেষপর্যন্ত তিনি দেবগুপ্তকে পরাজিত করলেও শশাঙ্কের হাতে নিহত হন ।
হর্ষ শশাঙ্কের দ্বন্দ্ব
রাজ্যবর্ধনের মৃত্যুর পর তাঁর ছােটো ভাই হর্ষবর্ধন সিংহাসনে বসে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ও ভগ্নীপতির মৃত্যুর প্রতিশােধ নেওয়ার জন্য কামরূপরাজ ভাস্করবর্মনের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে শশাঙ্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করেন । যুদ্ধের ফলাফল জানা যায়নি । তবে প্রমাণ আছে যে শশাঙ্ক আমৃত্যু স্বাধীন ছিলেন । সম্ভব ৬৩৭ বা ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা যান ।
মূল্যায়ন
ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন , শশাঙ্কই প্রথম বাঙালি রাজা যিনি আর্যাবর্তে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন । তিনি ‘ নরেন্দ্রগুপ্ত ’, ‘ নরেন্দ্রাদিত্য ’ উপাধি গ্রহণ করেন । তিনি ছিলেন প্রজাহিতৈষী । মেদিনীপুরের দাঁতনে জলসেচের জন্য তিনি একটি দিঘি খনন করেন । তাঁর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েই পরবর্তীকালে পাল রাজারা বাংলাকে কেন্দ্র করে সাম্রাজ্য গঠনে প্রয়াসী হয়েছিলেন ।