মগধের উত্থানের কারণ
Contents
মগধের উত্থানের কারণ

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভারতের রাজনৈতিক ইতিকার্সে বৃহত্তম শক্তি হিসেবে মগধের আত্মপ্রকাশ ঘটে । মগধের এই উত্থানের মূলে ছিল—
অবস্থানগত সুবিধা ও প্রাকৃতিক সুরক্ষা
মগধের প্রাচীন রাজধানী রাজগৃহের চারদিকে ছিল বৈহার , বরাহ , বৃষভ , ঋষিগিরি ও চৈত্যক — এই পাঁচটি পাহাড় ও একটি উঁচু পাথরের পাঁচিল । গঙ্গা , শোন ও গণ্ডক নদী পরবর্তী রাজধানী পাটলিপুত্রকে প্রাকৃতিক সুরক্ষা দিয়েছিল । এই সুরক্ষিত প্রাকৃতিক পরিবেশ মগধের রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের এক প্রধান কারণ ।
মগধের আর্থিক সমৃদ্ধি
উন্নত কৃষি , পর্যাপ্ত খনিজ সম্পদ এবং বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির কারণে আর্থিক দিক থেকে মগধ অন্যান্য মহাজনপদগুলি থেকে ছিল বহুগুণে এগিয়ে ।
( i ) পলি বিধৌত উর্বর জমি , গঙ্গা , শােন ও গণ্ডক নদীর পর্যাপ্ত জল এবং লােহার তৈরি কৃষি সরঞ্জামের ব্যবহারের ফলে মগধে কৃষির উন্নতি ঘটেছিল ।
( ii ) স্থল ও জলপথে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে মগধের নিবিড় সংযােগ থাকায় বাণিজ্যেও সে ছিল সমৃদ্ধিশালী ।
( iii ) সে – যুগে ভারতের লােহা ও তামার খনিগুলাের অধিকাংশই ছিল মগধ ও তার পার্শ্ববর্তী ধলভূম ও সিংভূম অঞ্চলে । এই দুই খনিজ সম্পদের গুরুত্ব সম্পর্কে কৌটিল্য যথার্থই বলেছেন , রাজকোশ খনির ওপর নির্ভর করে এবং সেনাবাহিনী নির্ভর করে রাজকোশের ওপর ; খনিজ সম্পদই হচ্ছে যুদ্ধসম্ভারের গর্ভাশয় ।
সুযােগ্য নেতৃত্ব
বিম্বিসার , অজাতশত্রু , শিশুনাগ , মহাপদ্মনন্দ , চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও অশােক এই কয়েকজন রাজার সুযােগ্য নেতৃত্ব এবং বসসাকর , চাণক্য ও রাধাগুপ্ত — এই তিন মন্ত্রীর কূটনৈতিক দক্ষতায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে মগধ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিল ।
আর্য ও অনার্য সংস্কৃতির মিলনের প্রভাব
গাঙ্গেয় উপত্যকার মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় মগধ পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের আর্য সংস্কৃতি এবং নিম্ন গাঙ্গেয় অঞ্চলের অনার্য সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল । দুই সংস্কৃতির এই মিলন এখানকার মানুষের চিত্তবৃত্তি ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণকে প্রসারিত মগধকে একটি বৃহৎ সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল ।