গৌতমী পুত্র সাতকর্ণী কৃতিত্ব
Contents
গৌতমী পুত্র সাতকর্ণী কৃতিত্ব
নাসিক প্রশস্তিতে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীকে সাতবাহন – কুল – যশঃ প্রতিষ্ঠানকর বলে বর্ণনা করা হয়েছে । কারণ প্রথম সাতকর্ণীর মৃত্যুর পর ক্ষয়িষ্ণু সাতবাহন সাম্রাজ্যকে তিনি স্বমর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন । বিজেতা , প্রজাহিতৈষী রাজা , পরধর্ম সহিষ্ণু শাসক এবং বর্ণ ব্যবস্থার রক্ষক হিসেবে সাতবাহন ইতিহাসে তাঁর খ্যাতি ।
সফল বিজেতা
শকদের ক্ষহরত শাখার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাফল্য তাঁর উল্লেখযােগ্য কৃতিত্ব । শক শাসক নহপান ও তাঁর সেনাপতি ঋষভদত্তকে পরাস্ত করে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী মহারাষ্ট্র পুনরুদ্ধার করেন । এ ছাড়া শকদের কাছ থেকে সৌরাষ্ট্র , গুজরাট , মালব , বেরার ও উত্তর কোঙ্কন তিনি অধিকার করেছিলেন । নাসিক প্রশস্তিতে তাঁকে শক – যবন – পহ্লব – নিসূদন বলে বর্ণনা করা হয়েছে । পরে তিনি শকদের কার্দমক শাখার চষ্টন ও রুদ্রদামনের কাছে পরাস্ত হলে বহু অঞ্চল তাঁর হাতছাড়া হয় এবং তিনি রুদ্রদামনের মেয়ের সঙ্গে নিজের ছেলের বিয়ে দিয়ে নিজ রাজ্য রক্ষায় সচেষ্ট হন । কৃষ্ণা উপত্যকা থেকে কাথিয়াবাড় এবং বেরার থেকে কোঙ্কন পর্যন্ত গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর রাজ্য বিস্তৃত ছিল ।
প্রজাহিতৈষণা ও পরধর্মসহিষ্ণুতা
প্রজাহিতৈষী শাসকরূপেও গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর খ্যাতি ছিল । তিনি দরিদ্রশ্রেণির করভার লাঘবের উদ্দেশ্যে রাজস্ব ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস ঘটিয়েছিলেন । ব্রাহ্মণ্য ধর্মের দৃঢ় সমর্থক হলেও বৌদ্ধদের প্রতি তিনি ছিলেন উদার । নাসিক , কার্লে প্রভৃতি স্থানে বৌদ্ধ বিহারবাসীদের জন্য তিনি ভূমি ও গুহা দান করেছিলেন ।
বর্ণব্যবস্থা রক্ষায় প্রয়াস
ক্ষত্রিয়দের দর্পচূর্ণ করে রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ্য ব্যবস্থার দুই স্তম্ভ চতুর্বর্ণ ও বর্ণাশ্রমধর্মকে রক্ষা করতে তিনি সযত্ন প্রয়াস চালিয়েছিলেন । এ ছাড়া বর্ণ ব্যবস্থা রক্ষার তাগিদে বর্ণ সংমিশ্রণ যাতে না ঘটে সেদিকেও তিনি দৃষ্টি দিয়েছিলেন ।
গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর সময় সাতবাহনদের পুনর্জিত গৌরব তাঁর রাজত্বের শেষ দিকে ম্লান হয়ে গিয়েছিল । এই সত্যকে স্বীকার করে নিয়েও তাঁর সপক্ষে এ কথা বলা যায় যে , তিনি ছিলেন সেই মহান যোদ্ধা , যিনি প্রথম দাক্ষিণাত্যকে একটি বৃহৎ শক্তির মর্যাদা দান করেছিলেন ।