ফা হিয়েন
Contents
ফা হিয়েন

ফা হিয়েন ছিলেন বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক । ভারতে বৌদ্ধ তীর্থস্থানগুলি পরিভ্রমণ , সংস্কৃত ও বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন এবং বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে ভারতে আসেন । ৪০০ থেকে ৪১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ( মতান্তরে ৪০৫-৪১১ খ্রি. ) তাঁর ভারত – ভ্রমণের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি লিখেছিলেন ‘ ফো কুয়াে কি ‘ নামক গ্রন্থ , যা গুপ্তযুগের ভারত – ইতিহাস রচনার অন্যতম উপাদান । ফা হিয়েন তাঁর গ্রন্থটিতে পাটলিপুত্র নগর তথা সেখানকার নগর সভ্যতা , গুপ্ত শাসন ব্যবস্থা , গুপ্ত নৌশক্তি ও বাণিজ্য এবং জনজীবনের একটি অসাধারণ আলেখ্য তুলে ধরেছেন ।
ফা হিয়েনের বিবরণীতে পাটলিপুত্র নগর
পাটলিপুত্র নগর এবং সেখানকার নাগরিক সভ্যতা ফা হিয়েনের বিবরণীতে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পেয়েছে , প্রশংসিত হয়েছে পাটলিপুত্র ও গুপ্ত শাসিত সাম্রাজ্যের অন্যত্র সরকারি ব্যয়ে সরাইখানা , চিকিৎসালয় ও অনাথ আশ্রমগুলি পরিচালনার উদ্যোগ । মৌর্যদের ধ্বংসপ্রায় কাঠের রাজপ্রাসাদের গঠন নৈপুণ্য ও শিল্পরীতি তাঁকে বিস্মিত করেছিল ।
ফা হিয়েনের বর্ণনায় গুপ্ত শাসনব্যবস্থা
দায়িত্বশীল কর্মচারীদের হাতে ছিল দেশের শাসন ভার , তারা অকারণে প্রজাপীড়ন করত না । দণ্ডবিধি লঘু হওয়া সত্ত্বেও দেশে চোর ডাকাতের উৎপাত ছিল না । এ ছাড়া করভার বেশি না হওয়ায় প্রজারাও ছিল সুখী ও সচ্ছল ।
গুপ্ত নৌবল ও বাণিজ্য সম্পর্কে ফা হিয়েনের অভিমত
‘ ফো কুয়াে কি ’ গ্রন্থে গুপ্ত নৌবহর ও বাণিজ্য – সংক্রান্ত তথ্যও রয়েছে । পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত সােপারা ও পূর্ব উপকূলে তাম্রলিপ্ত বন্দর দিয়ে ভারতীয় বাণিজ্যতরী যেত সিংহল ও দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়ার দেশগুলােতে ।
ভারতীয় জনজীবন সম্পর্কে ফা হিয়েনের ভাষ্য
ভারতীয়দের নীতিবােধ , সংযত চরিত্র ও উচ্চ নৈতিকতা নিয়ে ফা হিয়েন প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত , তবে জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতার কড়াকড়িতে ভারতীয় সমাজ যে জর্জরিত ছিল ফা হিয়েন তার উল্লেখ করতে ভােলেননি । অধিকাংশ ভারতীয়ই ছিল নিরামিষভােজী ও অহিংসায় বিশ্বাসী । মধ্যদেশে ব্রাক্ষণ্যধর্ম প্রবল হলেও পাঞ্জাব ও বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম ছিল জনপ্রিয় । দেশের সর্বত্র হিন্দু ও বৌদ্ধদের মধ্যে প্রীতির সম্পর্ক বিরাজ করত ।