উদ্ভিদ বিজ্ঞান বা উদ্ভিদবিদ্যা এবং তার বিভিন্ন শাখা
Contents
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বা উদ্ভিদবিদ্যা এবং তার বিভিন্ন শাখা
উদ্ভিদবিদ্যা জীববিদ্যার একটি শাখা । উদ্ভিদ সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞানই হল উদ্ভিদবিজ্ঞান বা উদ্ভিদবিদ্যা । ব্যাপক অর্থে যে বিদ্যা আমাদের সমস্ত প্রকার উদ্ভিদের আকার , গঠন , প্রকৃতি , শ্বসন , পুষ্টি , রেচন , বৃদ্ধি , জনন , বাসস্থান ইত্যাদি বিস্তারিত ভাবে জ্ঞানার্জনে সাহায্য করে তাকে উদ্ভিদবিজ্ঞান বা উদ্ভিদবিদ্যা বলে । ‘Botany’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘Botane’ ( plant ) থেকে উদ্ভব হয়েছে , যার অর্থ গাছপালা বা উদ্ভিদ ।

উদ্ভিদবিদ্যার শাখা ( Branches of Botany )
মূল বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে উদ্ভিদবিজ্ঞানকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে , যথা –
- বিশুদ্ধ বা মৌলিক উদ্ভিদবিজ্ঞান ( Pure or Basic Botany ) ,
- ফলিত উদ্ভিদবিজ্ঞান ( Applied Botany ) এবং
- বিশেষ উদ্ভিদবিজ্ঞান ( Special Botany ) ।
বিশুদ্ধ উদ্ভিদবিদ্যা ( Pure Botany )
উদ্ভিদবিজ্ঞানের যে শাখায় উদ্ভিদের গঠন , প্রকৃতি , জৈবনিক প্রক্রিয়াসমূহ , জীবনবৃত্তান্ত , অভিযােজন প্রভূতি তত্ত্বগত দিক সম্পর্কে আলােচনা করা হয় , তাকে মৌলিক উদ্ভিদবিদ্যা বা বিশুদ্ধ উদ্ভিদবিদ্যা বলে ।
বিশুদ্ধ উদ্ভিদবিজ্ঞানের শাখাগুলি নিম্নরূপ :
অঙ্গসংস্থান ( Morphology ) : এই শাখায় উদ্ভিদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে আলােচনা করা হয়।
কোশতত্ত্ব ( Cytology ) : এই শাখায় উদ্ভিদকোশের বিভিন্ন অংশের পরাণু গঠন , কার্যাবলি , কোশবিভাজন ইত্যাদি সম্পর্কে আলােচিত হয় ।
কলাতত্ত্ব ( Histology ) : এই শাখায় উদ্ভিদকলার আণুবীক্ষণিক গঠন ও কার্যাবলি সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
শারীরবিদ্যা ( Physiology ) : এই শাখায় উদ্ভিদ অঙ্গের বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে আলােচনা করা হয় , যেমন — সালােকসংশ্লেষ , শ্বসন ইত্যাদি ।
পুষ্টিতত্ত্ব ( Nutrition ) : এই শাখায় উদ্ভিদের পুষ্টি সম্পর্কে আলােচিত হয় ।
ভ্রূণতত্ত্ব ( Embryology ) : এই শাখায় উদ্ভিদ ভ্রূণের উৎপত্তি , গঠন ও বিকাশ সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
বংশগতিবিদ্যা ( Genetics ) : এই শাখায় উদ্ভিদের বংশগতি সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
বাস্তুসংস্থান ( Ecology ) : এই শাখায় উদ্ভিদের বাসস্থান , পরিবেশের ওপর প্রভাব এবং অন্যান্য জীবের সঙ্গে আন্তঃসম্পর্ক সম্বন্ধে আলােচনা করা হয় ।
ভূ – উদ্ভিদবিদ্যা ( Biogeography ) : এই শাখায় উদ্ভিদের ভৌগােলিক বিস্তার সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
প্রত্ন – উদ্ভিদবিদ্যা ( Palaeobotany ) : এই শাখায় উদ্ভিদের জীবাশ্ম সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
উদ্ভিদ ট্যাক্সোনোমি ( Phyto – taxonomy ) : এই শাখায় উদ্ভিদের নামকরণ , শ্রেণিবিভাগ , শনাক্তকরণ ইত্যাদি আলােচনা করা হয় ।
উদ্ভিদ – রসায়নবিদ্যা ( Phyto – chemistry ) : এই শাখায় উদ্ভিদকোশের বিভিন্ন রাসায়নিক গঠন , বিপাক ইত্যাদি সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
উদ্ভিদ – পদার্থবিদ্যা ( Phyto – physics ) : এই শাখায় উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশের পারমাণবিক আকার ও গঠন সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
উদ্ভিদ – গণিতবিদ্যা ( Phyto – mathematics ) : এই শাখায় উদ্ভিদের নানাবিধ জৈবনিক ক্রিয়াকলাপের হার ও সম্পর্ক নির্ণয় , জন্ম – মৃত্যুর আনুপাতিক হার নির্ণয় ইত্যাদি আলােচনা করা হয় ।
সিস্টেমেটিক বটানি ( Systematic botany ) : উদ্ভিদবিজ্ঞানের এই শাখায় উদ্ভিদ জগতের বিভিন্ন গােষ্ঠীর মধ্যকার নানারকম সম্পর্ক নির্ণয় সম্পর্কে আলােচনা , পর্যালােচনা ও গবেষণা করা হয় ।
ফলিত উদ্ভিদ বিজ্ঞান ( Applied Botany )
উদ্ভিদবিজ্ঞানের যে শাখায় উপকারী উদ্ভিদদের সংরক্ষণ এবং ক্ষতিকর উদ্ভিদদের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানলাভ করা হয় , তাকে ফলিত উদ্ভিদবিজ্ঞান বলে ।
ফলিত উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শাখাগুলি নিম্নরূপ :
কৃষিবিজ্ঞান ( Agriculture ) : উদ্ভিদবিজ্ঞানের এই শাখায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
উদ্ভিদ প্রজননবিদ্যা ( Plant breeding ) : এই শাখায় কৃত্রিম উপায়ে উদ্ভিদের প্রজনন ঘটিয়ে উন্নততর বীজ ও উদ্ভিদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা করা হয় ।
উদ্ভিদ রােগতত্ত্ব ( Plant pathology ) : উদ্ভিদের বিভিন্ন রােগের কারণ , রােগলক্ষণ ও তাদের প্রতিকার সম্পর্কে আলােচনা করা এই শাখার প্রধান উদ্দেশ্য ।
বনবিদ্যা ( Forestry ) : এই শাখায় বন্য উদ্ভিদের সংরক্ষণ সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
উদ্যানবিদ্যা ( Horticulture ) : এই শাখায় নতুন বাগান নির্মাণ এবং পুরাতন বাগান সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে আলােচনা করা হয় ।
ভেষজবিদ্যা ( Pharmacy ) : এই শাখায় ওষুধ সৃষ্টিকারী উদ্ভিদের সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতি সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
অর্থকরী উদ্ভিদবিজ্ঞান ( Economic botany ) : এই শাখায় বিভিন্ন ধরনের অর্থকরী উদ্ভিদদের চাষ ও উপযােগিতা সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
বিশেষ উদ্ভিদবিজ্ঞান ( Special Botany )
বিশেষ বিশেষ উদ্ভিদদের ওপর ভিত্তি করে উদ্ভিদবিজ্ঞানের যেসব শাখা গড়ে উঠেছে তাদের বিশেষ উদ্ভিদবিজ্ঞান বলে।
বিশেষ উদ্ভিদবিজ্ঞানের শাখাগুলি নিম্নরূপ :
ভাইরােলজি ( Virology ) : এই শাখায় বিভিন্ন রকমের ভাইরাস সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
ব্যাকটেরিওলজি ( Bacteriology ) : এই শাখায় বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
ফাইকোলজি ( Phycology ) : এই শাখায় বিভিন্ন শৈবাল সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
মাইকোলজি ( Mycology ) : এই শাখায় বিভিন্ন ছত্রাক সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
ব্রায়ােলজি ( Bryology ) : এই শাখায় বিভিন্ন মস জাতীয় উদ্ভিদ সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
টেরিডােলজি ( Pteridology ) : এই শাখায় বিভিন্ন ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
জিমনােম্পার্ম ( Gymnosperm ) : এই শাখায় ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।
অ্যানজিওম্পার্ম ( Angiosperm ) : এই শাখায় গুপ্তবীজী উদ্ভিদ সম্পর্কে আলােচনা করা হয় ।