ভৌত বিজ্ঞান

বস্তুর ওজন বা ভার কাকে বলে

বস্তুর ওজন বা ভার কাকে বলে

ভূপৃষ্ঠের উপর বা কাছাকাছি থাকা সকল বস্তুকে পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে । একে অভিকর্ষ বলে । এই অভিকর্ষের জন্যই কোনাে বস্তুকে হাতের উপর রাখলে আমরা নিচের দিকে বল অনুভব করি । একে বস্তুটির ওজন বা ভার ( weight ) বলে । অর্থাৎ কোনো বস্তুকে পৃথিবী যে বলে তার কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে তাকে ওই বস্তুর ওজন বা ভার বলে । কোনাে নির্দিষ্ট দিকে বেগ পরিবর্তনের হারকে ত্বরণ বলে । অভিকর্ষের প্রভাবে অবাধে পতনশীল বস্তুতে যে ত্বরণ সৃষ্টি হয় তাকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে । এটি g অক্ষর দ্বারা প্রকাশ করা হয় । কোনাে স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ g হলে ওই স্থানে m ভরের বস্তুর ওজন হয় m × g অর্থাৎ ওজন = ভর x অভিকর্ষজ ত্বরণ

spring balance white background illustration 167445263
বস্তুর ওজন

বস্তুর ওজন পরিবর্তনশীল

নানা কারণে বিভিন্ন স্থানে বস্তুর ওজন বিভিন্ন হয় । যেমন —

  1. পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠের উপর কোনাে স্থানের দূরত্ব বেশি হলে অভিকর্ষ টান কম হয় । তাই কোলকাতার সমতল অপেক্ষা দার্জিলিং – এর পাহাড়ের মাথায় কোনাে বস্তুর ওজন কম হয়
  2. পৃথিবী সম্পূর্ণ গােলাকার নয় , মেরু অঞ্চল একটু চাপা এবং নিরক্ষীয় অঞ্চল একটু স্ফীত । পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে মেরু অঞ্চলের দূরত্ব কম এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলের দূরত্ব বেশি । তাই কোনাে বস্তুর ওজন নিরক্ষীয় অঞ্চলে যা হয় মেরু অঞ্চলে তার চেয়ে বেশি হয়
  3. ভূপৃষ্ঠের যত নীচে নামা যায় অভিকর্ষ টানও তত কমে যায় এবং পৃথিবীর কেন্দ্রে এই টান শূন্য হয় অর্থাৎ পৃথিবীর কেন্দ্রে কোনাে বস্তুর ওজন শূন্য হয়
  4. কোনাে বস্তু বৃত্তাকার পথে ঘুরলে বস্তুটির উপর ওই বৃত্তপথের কেন্দ্র থেকে বহির্মুখী একটি বল ক্রিয়া করে বলে মনে হয় যা বস্তুটিকে ছিটকে বাইরে নিয়ে যেতে চায় । একে অপকেন্দ্র বল বলে । পৃথিবী তার নিজ অক্ষের চারদিকে 24 ঘন্টায় একপাক খায় । ফলে মেরুবিন্দু দুটি ছাড়া পৃথিবী – পৃষ্ঠের অন্যত্র সকল বস্তুই বৃত্তাকার পথে ঘােরে । এইজন্য পৃথিবী পৃষ্ঠের সকল বস্তুর উপর অপকেন্দ্র বল ক্রিয়া করে যার মান নিরক্ষীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি এবং মেরু অঞ্চলে সবচেয়ে কম হয় । এর ফলে কোনাে বস্তুর ওজন অক্ষাংশের উপর নির্ভর করে এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে ওজন সবচেয়ে কম ও মেরু অঞলে ওজন সবচেয়ে বেশি হয় ।
  5. কোনাে বস্তুকে পৃথিবী থেকে অন্য কোনাে গ্রহ , উপগ্রহ বা নক্ষত্রে নিয়ে গেলে বস্তুর ওজন পাল্টে যায় । অন্য গ্রহ , উপগ্রহ বা নক্ষত্রের ভর পৃথিবীর ভরের তুলনায় বেশি হলে মহাকর্ষ টান বাড়ে , ফলে বস্তুর ওজনও বাড়ে । আবার ভর কম হলে মহাকর্ষ টান কমে ফলে বস্তুর ওজন কমে যায় । যেমন — চাঁদের ভর পৃথিবীর ভরের তুলনায় অনেক কম । হিসাব করে দেখা যায় যে চাঁদের মহাকর্ষ বল পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের 6 ভাগের 1 ভাগ মাত্র । সুতরাং পৃথিবীতে কোনাে বস্তুর যা ওজন হবে চাঁদে তার 6 ভাগের 1 ভাগ মাত্র হবে ।
  6. আমরা যখন দাঁড়িয়ে থাকি তখন পৃথিবীর টানের জন্য মাটির উপর বল প্রযুক্ত হয় । নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুযায়ী মাটিও আমাদের উপর সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেয় । এইজন্যই আমরা আমাদের ওজন অনুভব করি । অবাধ অবতরণের সময় আমাদের উপর কোনাে প্রতিক্রিয়া বল ক্রিয়া করে না তাই আমরা নিজেদের ভারশূন্য মনে করি ।
  7. কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর চারদিকে প্রচণ্ড গতিবেগে ঘােরে । উপগ্রহের উপর কোনাে ব্যক্তি বসে থাকলে তার মনে হবে বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল অপকেন্দ্র বল এবং পৃথিবীর অভিকর্ষজ টান সমান ও বিপরীত । আবার কৃত্রিম উপগ্রহের ভর কম হওয়ার ফলে এর নিজস্ব আকর্ষণ নগণ্য হয় । ফলে কৃত্রিম উপগ্ৰহের উপর সকল বস্তু ভারশূন্য হয়ে পড়ে ।

সুতরাং দেখা গেল যে বিভিন্ন স্থানে বস্তুর ওজন বিভিন্ন হয় কিন্তু বস্তুর ভর একই থাকে । কোনাে কারণে অভিকর্ষ টান লােপ পেলে বস্তুর ওজন শূন্য হয়ে যাবে কিন্তু বস্তুর ভর একই থাকবে । অতএব বলা যায় যে বস্তুর ওজন বস্তুর নিজস্ব বা স্বকীয় ধর্ম নয়

বস্তুর ওজনের একক

স্প্র্রিং তুলাযন্ত্র দিয়ে বস্তুর ওজন মাপা হয় । ওজনের মান ও অভিমুখ দুইই আছে , সুতরাং ওজন একটি ভেক্টর রাশি । ওজন একটি বল । সুতরাং SI পদ্ধতিতে ওজনের পরম একক হল নিউটন ( N ) । ওজনের অভিকর্ষীয় একক হল কেজি-ভার ( kg – wt ) । 1 কেজি ভরের কোনাে বস্তুকে পৃথিবী যে বলে তার কেন্দ্রের দিকে টানে তাকে কেজি-ভার বলে । সুতরাং 1 কেজি-ভার = 1 কেজি X অভিকর্ষীয় ত্বরণ = 1 কেজি X 9.81 মি / সে² = 9.81 নিউটন । একই ভাবে CGS পদ্ধতিতে ওজনের পরম একক ডাইন , অভিকর্ষীয় একক গ্রাম-ভার । 1 গ্রাম-ভার = 981 ডাইন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!