বস্তুর ওজন বা ভার কাকে বলে
বস্তুর ওজন বা ভার কাকে বলে
ভূপৃষ্ঠের উপর বা কাছাকাছি থাকা সকল বস্তুকে পৃথিবী তার কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে । একে অভিকর্ষ বলে । এই অভিকর্ষের জন্যই কোনাে বস্তুকে হাতের উপর রাখলে আমরা নিচের দিকে বল অনুভব করি । একে বস্তুটির ওজন বা ভার ( weight ) বলে । অর্থাৎ কোনো বস্তুকে পৃথিবী যে বলে তার কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে তাকে ওই বস্তুর ওজন বা ভার বলে । কোনাে নির্দিষ্ট দিকে বেগ পরিবর্তনের হারকে ত্বরণ বলে । অভিকর্ষের প্রভাবে অবাধে পতনশীল বস্তুতে যে ত্বরণ সৃষ্টি হয় তাকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে । এটি g অক্ষর দ্বারা প্রকাশ করা হয় । কোনাে স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ g হলে ওই স্থানে m ভরের বস্তুর ওজন হয় m × g অর্থাৎ ওজন = ভর x অভিকর্ষজ ত্বরণ ।

বস্তুর ওজন পরিবর্তনশীল
নানা কারণে বিভিন্ন স্থানে বস্তুর ওজন বিভিন্ন হয় । যেমন —
- পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠের উপর কোনাে স্থানের দূরত্ব বেশি হলে অভিকর্ষ টান কম হয় । তাই কোলকাতার সমতল অপেক্ষা দার্জিলিং – এর পাহাড়ের মাথায় কোনাে বস্তুর ওজন কম হয় ।
- পৃথিবী সম্পূর্ণ গােলাকার নয় , মেরু অঞ্চল একটু চাপা এবং নিরক্ষীয় অঞ্চল একটু স্ফীত । পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে মেরু অঞ্চলের দূরত্ব কম এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলের দূরত্ব বেশি । তাই কোনাে বস্তুর ওজন নিরক্ষীয় অঞ্চলে যা হয় মেরু অঞ্চলে তার চেয়ে বেশি হয় ।
- ভূপৃষ্ঠের যত নীচে নামা যায় অভিকর্ষ টানও তত কমে যায় এবং পৃথিবীর কেন্দ্রে এই টান শূন্য হয় অর্থাৎ পৃথিবীর কেন্দ্রে কোনাে বস্তুর ওজন শূন্য হয় ।
- কোনাে বস্তু বৃত্তাকার পথে ঘুরলে বস্তুটির উপর ওই বৃত্তপথের কেন্দ্র থেকে বহির্মুখী একটি বল ক্রিয়া করে বলে মনে হয় যা বস্তুটিকে ছিটকে বাইরে নিয়ে যেতে চায় । একে অপকেন্দ্র বল বলে । পৃথিবী তার নিজ অক্ষের চারদিকে 24 ঘন্টায় একপাক খায় । ফলে মেরুবিন্দু দুটি ছাড়া পৃথিবী – পৃষ্ঠের অন্যত্র সকল বস্তুই বৃত্তাকার পথে ঘােরে । এইজন্য পৃথিবী পৃষ্ঠের সকল বস্তুর উপর অপকেন্দ্র বল ক্রিয়া করে যার মান নিরক্ষীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি এবং মেরু অঞ্চলে সবচেয়ে কম হয় । এর ফলে কোনাে বস্তুর ওজন অক্ষাংশের উপর নির্ভর করে এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে ওজন সবচেয়ে কম ও মেরু অঞলে ওজন সবচেয়ে বেশি হয় ।
- কোনাে বস্তুকে পৃথিবী থেকে অন্য কোনাে গ্রহ , উপগ্রহ বা নক্ষত্রে নিয়ে গেলে বস্তুর ওজন পাল্টে যায় । অন্য গ্রহ , উপগ্রহ বা নক্ষত্রের ভর পৃথিবীর ভরের তুলনায় বেশি হলে মহাকর্ষ টান বাড়ে , ফলে বস্তুর ওজনও বাড়ে । আবার ভর কম হলে মহাকর্ষ টান কমে ফলে বস্তুর ওজন কমে যায় । যেমন — চাঁদের ভর পৃথিবীর ভরের তুলনায় অনেক কম । হিসাব করে দেখা যায় যে চাঁদের মহাকর্ষ বল পৃথিবীর মহাকর্ষ বলের 6 ভাগের 1 ভাগ মাত্র । সুতরাং পৃথিবীতে কোনাে বস্তুর যা ওজন হবে চাঁদে তার 6 ভাগের 1 ভাগ মাত্র হবে ।
- আমরা যখন দাঁড়িয়ে থাকি তখন পৃথিবীর টানের জন্য মাটির উপর বল প্রযুক্ত হয় । নিউটনের তৃতীয় সূত্রানুযায়ী মাটিও আমাদের উপর সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেয় । এইজন্যই আমরা আমাদের ওজন অনুভব করি । অবাধ অবতরণের সময় আমাদের উপর কোনাে প্রতিক্রিয়া বল ক্রিয়া করে না তাই আমরা নিজেদের ভারশূন্য মনে করি ।
- কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর চারদিকে প্রচণ্ড গতিবেগে ঘােরে । উপগ্রহের উপর কোনাে ব্যক্তি বসে থাকলে তার মনে হবে বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল অপকেন্দ্র বল এবং পৃথিবীর অভিকর্ষজ টান সমান ও বিপরীত । আবার কৃত্রিম উপগ্রহের ভর কম হওয়ার ফলে এর নিজস্ব আকর্ষণ নগণ্য হয় । ফলে কৃত্রিম উপগ্ৰহের উপর সকল বস্তু ভারশূন্য হয়ে পড়ে ।
সুতরাং দেখা গেল যে বিভিন্ন স্থানে বস্তুর ওজন বিভিন্ন হয় কিন্তু বস্তুর ভর একই থাকে । কোনাে কারণে অভিকর্ষ টান লােপ পেলে বস্তুর ওজন শূন্য হয়ে যাবে কিন্তু বস্তুর ভর একই থাকবে । অতএব বলা যায় যে বস্তুর ওজন বস্তুর নিজস্ব বা স্বকীয় ধর্ম নয় ।
বস্তুর ওজনের একক
স্প্র্রিং তুলাযন্ত্র দিয়ে বস্তুর ওজন মাপা হয় । ওজনের মান ও অভিমুখ দুইই আছে , সুতরাং ওজন একটি ভেক্টর রাশি । ওজন একটি বল । সুতরাং SI পদ্ধতিতে ওজনের পরম একক হল নিউটন ( N ) । ওজনের অভিকর্ষীয় একক হল কেজি-ভার ( kg – wt ) । 1 কেজি ভরের কোনাে বস্তুকে পৃথিবী যে বলে তার কেন্দ্রের দিকে টানে তাকে কেজি-ভার বলে । সুতরাং 1 কেজি-ভার = 1 কেজি X অভিকর্ষীয় ত্বরণ = 1 কেজি X 9.81 মি / সে² = 9.81 নিউটন । একই ভাবে CGS পদ্ধতিতে ওজনের পরম একক ডাইন , অভিকর্ষীয় একক গ্রাম-ভার । 1 গ্রাম-ভার = 981 ডাইন ।