ভৌত বিজ্ঞান

শক্তির মোট কয়টি রূপ এবং কি কি

Contents

শক্তির মোট কয়টি রূপ এবং কি কি

কাজ করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে । কোনাে বস্তু কাজ করতে সক্ষম হলে বলা হয় যে বস্তুটির শক্তি আছে । কোনাে বস্তু যে পরিমাণ কাজ করতে পারে তার দ্বারা ওই বস্তুর শক্তির পরিমাপ করা হয় । কোনাে বস্তু কাজ করলে তার শক্তি কমে এবং যে বস্তুর উপর কাজ করা হয় তার শক্তি বাড়ে । সুতরাং কাজ ও শক্তি একই ধরনের রাশি । শক্তির মান আছে কিন্তু অভিমুখ নেই । তাই শক্তি একটি স্কেলার রাশি । প্রকৃতিতে শক্তি নানারূপে দেখা যায় । যেমন — যান্ত্রিক শক্তি , তাপশক্তি , শব্দশক্তি , আলােক শক্তি , তড়িৎ শক্তি ইত্যাদি । প্রকৃতির বিভিন্ন ঘটনা লক্ষ করলে দেখা যায় যে ওই সব ঘটনার পিছনে রয়েছে শক্তির একরূপ থেকে অন্যরূপে পরিবর্তনের খেলা । আবার বিভিন্ন প্রকার শক্তি অবশেষে তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়

7b16bd8bfaf1f479
শক্তির বিভিন্ন রূপ


যান্ত্রিক শক্তি ( Mechanical energy )

কোনাে বস্তু তার গতি , অবস্থান বা আকৃতির জন্য যে শক্তির অধিকারী হয় তাকে যান্ত্রিক শক্তি বলে । এই শক্তি দুই প্রকার —

  1. গতিশক্তি ও
  2. স্থিতিশক্তি ।

গতি শক্তি :

কোনাে গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য যে শক্তি অর্জন করে তাকে এই বস্তুর গতিশক্তি বলে । যেমন — বায়ুপ্রবাহের শক্তি দিয়ে পালতোলা নৌকা চালানাে , জলস্রোতের শক্তি দিয়ে টারবাইন ঘােরানাে প্রভৃতি হল গতিশক্তির উদাহরণ ।

স্থিতি শক্তি :

কোনাে বস্তুর স্বাভাবিক অবস্থান বা আকৃতির পরিবর্তন করলে বস্তু যে শক্তি অর্জন করে তাকে স্থিতিশক্তি বলে । যেমন — কোনাে স্প্রিংকে সংকুচিত করলে স্প্রিং – এর মধ্যে স্থিতিশক্তি সঞ্চিত হয় । ছেড়ে দিলে স্প্রিং এই সঞ্চিত শক্তি ব্যয় করে তার স্বাভাবিক আকৃতি ফিরে পায় । কোনাে বস্তুকে নীচ থেকে উপরে তুললে বস্তুর মধ্যে স্থিতিশক্তি সঞ্চিত হয় । ছেড়ে দিলে বস্তু এই সঞ্চিত শক্তি ব্যয় করে নীচে নেমে আসে । এখানে উল্লেখযােগ্য এই যে সকল বস্তুই সর্বনিম্ন স্থিতিশক্তির অবস্থানে থাকতে চায় , বস্তুর সুস্থিত সাম্যাবস্থায় স্থিতিশক্তি সর্বনিম্ন হয় ।

তাপশক্তি ( Heat energy )

যে শক্তি গ্রহণ করলে বস্তু গরম হয় এবং বর্জন করলে বস্তু ঠান্ডা হয় তাকে তাপশক্তি বলে । বস্তুর মধ্যে অণু – পরমাণুদের গতি , পারস্পরিক ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়া প্রভৃতির জন্য বস্তুর যে অভ্যন্তরীণ শক্তি হয় তার কিছু অংশ তাপশক্তি হিসাবে এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে সঞ্চালিত হয় । যেমন — গরম জলে আঙুল ডােবালে আমাদের গরম লাগে কারণ গরম জল থেকে কিছু তাপশক্তি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে ।

শব্দশক্তি ( Sound energy )

কোনাে বস্তুর যান্ত্রিক কম্পনের ফলে এক ধরনের শক্তি সৃষ্টি হয় যা মাধ্যমের মধ্য দিয়ে বিস্তার লাভ করে এবং অবশেষে আমাদের কানের পর্দায় কম্পন সৃষ্টি করে এবং শ্রবণের অনুভূতি জাগায় । এই শক্তিকে শব্দশক্তি বলে ।

আলােক শক্তি ( Light energy )

যে শক্তি আমাদের চোখে দর্শনের অনুভূতি জাগায় তাকেই আমরা সাধারণত আলােক শক্তি বলি । বৃহত্তর অর্থে এটি ‘ তড়িৎ – চুম্বকীয় তরঙ্গ ’ যা মাধ্যম ছাড়াও একস্থান থেকে অন্যস্থানে চলাচল করতে পারে । সব ধরনের আলােই চোখে দর্শনের অনুভূতি জাগায় না । পদার্থের মধ্যস্থিত অণু – পরমাণুগুলি যখন উত্তেজিত অবস্থা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে তখন তাদের অতিরিক্ত শক্তি এই আলােক শক্তি হিসাবে নির্গত হয় ।

তড়িৎ শক্তি ( Electrical energy )

পরিবাহী তারের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনের প্রবাহের ফলে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে তড়িৎ শক্তি বলে । আলাে জ্বালানাে , ফ্রিজ , টিভি , পাখা চালানাে , ট্রেন চালানাে , মােটরের সাহায্যে পাম্প চালিয়ে জল তােলা প্রভৃতি অসংখ্য কাজ এই তড়িৎ শক্তির সাহায্যে করা যায় ।

চৌম্বক শক্তি ( Magnetic energy )

কোনাে চুম্বক লােহা , নিকেল , কোবাল্ট প্রভৃতি পদার্থকে আকর্ষণ করতে পারে । এর সাথে সংশ্লিষ্ট শক্তিকে চৌম্বক শক্তি বলে ।

রাসায়নিক শক্তি ( Chemical energy )

অণু বা পরমাণুর মধ্যে সঞ্চিত শক্তির যে অংশ রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় নির্গত হয় তাকে রাসায়নিক শক্তি বলে ।

পারমাণবিক শক্তি ( Atomic energy )

ইউরেনিয়াম , প্লুটোনিয়াম প্রভৃতি ভারী মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে নিউট্রন দিয়ে আঘাত করলে নিউক্লিয়াসটি বিভাজিত হয়ে প্রায় সমান ভরের দুটি নতুন মৌল গঠন করে । একে নিউক্লীয় বিভাজন ( Nuclear fission ) বলে । এই প্রক্রিয়ায় কিছু পরিমাণ ভর বিলুপ্ত হয় যা বিপুল পরিমাণ শক্তি সৃষ্টি করে । পারমাণবিক বােমায় বা পারমাণবিক চুল্লিতে এই প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপন্ন হয় । আবার একাধিক হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে হিলিয়াম নিউক্লিয়াস গঠন করলে কিছু পরিমাণ ভরের বিলুপ্তি ঘটে এবং বিপুল পরিমাণ শক্তির সৃষ্টি হয় । একে নিউক্লীয় সংযােজন ( Nuclear fusion ) বলে । সূর্য ও অন্যান্য নক্ষত্রের শক্তির উৎস হল এই নিউক্লীয় সংযােজন প্রক্রিয়া । নিউক্লীয় সংযােজন ও বিভাজন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট শক্তিকে পারমাণবিক শক্তি বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!