শক্তির রূপান্তর সূত্র / শক্তির নিত্যতা সূত্র / শক্তির সংরক্ষণ সূত্র
Contents
শক্তির রূপান্তর সূত্র / শক্তির নিত্যতা সূত্র / শক্তির সংরক্ষণ সূত্র
শক্তি সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না , শক্তি শুধু একরূপ থেকে তন্যরূপে পরিবর্তিত হতে পারে । একে শক্তির রূপান্তর বলে । প্রকৃতির বিভিন্ন ঘটনা লক্ষ করলে দেখা যায় যে এইসব ঘটনার পিছনে রয়েছে শক্তির রূপান্তরের খেলা । তবে শক্তির রূপান্তর হলে অন্য ধরনের ঠিক সমপরিমাণ শক্তি পাওয়া যায় । অর্থাৎ , মােট শক্তি সর্বদা অপরিবর্তিত থাকে । সুতরাং বলা যায় যে , শক্তি অবিনশ্বর , এর সৃষ্টি বা বিনাশ নেই । কোনাে বিচ্ছিন্ন বস্তুসংস্থার বা মহাবিশ্বের মোট শক্তি সর্বদা অপরিবর্তিত থাকে । একে শক্তির নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র বলে । ধরা যাক , একটি পাথরখণ্ডকে উপর দিকে ছোঁড়া হল । ছোঁড়ার মুহূর্তে পাথরটির স্থিতিশক্তি শূন্য কিন্তু গতিশক্তি সর্বোচ্চ । পাথর যত উপরে ওঠে এর গতিশক্তি কমে এবং স্থিতিশক্তি বাড়ে । পাথরের সর্বোচ্চ অবস্থানে গতিশক্তি শূন্য কিন্তু স্থিতিশক্তি সর্বোচ । দেখানো যায় যে , যে কোনাে অবস্থানে পাথরের স্থিতিশক্তি ও গতিশক্তির যােগফল ধ্রুবক থাকে । অর্থাৎ , এখানে শক্তি সংরক্ষিত হয় ।

ভর ও শক্তির তুল্যতা সূত্র ( Mass – energy equivalence )
উনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে কোনাে বিচ্ছিন্ন বস্তুসংস্থার ভর ও শক্তি আলাদা আলাদা ভাবে সংরক্ষিত হয় । কিন্তু 1905 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তাঁর আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকে দেখালেন যে বস্তুর ভর ও শক্তি অভিন্ন । অর্থাৎ কিছু পরিমাণ ভরকে ধ্বংস করে শক্তি পাওয়া যেতে পারে , আবার শক্তি থেকে ভর সৃষ্টি করা যায় । যেমন — পরমাণু বােমায় পদার্থের ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয় । অপরপক্ষে , কোনাে আলােক কণা বা ফোটন ভারী নিউক্লিয়াসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ইলেকট্রন ও পজিট্রন নামে দুটি বস্তুকণায় পরিণত হয় । আইনস্টাইনের তত্ত্বানুযায়ী যদি m পরিমাণ ভর সম্পূর্ণভাবে শক্তিতে রূপান্তরিত হয় তাহলে শক্তির পরিমাণ হবে E = mc² যেখানে c = 3 X 108 মি / সে , শূন্য মাধ্যমে আলাের গতিবেগ । একে ভর ও শক্তির তুল্যতা বলে । অতি সামান্য পরিমাণ ভরকে শক্তিতে রূপান্তরিত করলে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় । আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বলা যায় যে বস্তুর ভর ও শক্তি অভিন্ন , তারা একই জিনিসের দুটি ভিন্ন রূপ । সাধারণ বলবিদ্যার আলােচনার ক্ষেত্রে বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভর ও শক্তির তুল্যতা বিচার করার কোনাে প্রয়োজন হয় না । যে সমস্ত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তাপ উৎপন্ন হয় , তাত্ত্বিকভাবে সেই বিক্রিয়ায় পদার্থের কিছুটা ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয় । কিন্তু ভরের এই পরিবর্তন এত কম যে তা মাপা যায় না । তাই আমরা রাসায়নিক বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভর ও শক্তির তুল্যতা বিচার না করে ভরের সংরক্ষণ নীতির কথা বলি । বস্তুর বেগ আলাের বেগের কাছাকাছি হলে বা পারমাণবিক বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভর ও শক্তির তুল্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয় । এইসব ক্ষেত্রে ভর ও শক্তি পৃথক পৃথক ভাবে সংরক্ষিত হয় না , কিন্তু ভর ও শক্তির মােট পরিমাণ সংরক্ষিত হয় । সুতরাং বলা যায় যে কোনাে বিচ্ছিন্ন বস্তুসংস্থায় বা মহাবিশ্বে ভর ও শক্তির মােট পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে । এটিই হল ভর বা শক্তির সংরক্ষণ নীতির সংশােধিত রূপ ।
শক্তির রূপান্তরের উদাহরণ ( Examples of energy transformation )
গতিশক্তির স্থিতিশক্তিতে এবং স্থিতিশক্তির গতিশক্তিতে রূপান্তর :
একটি পাথর খণ্ডকে উপর দিকে ছুঁড়লে পাথরটি যত উপরে ওঠে তত তার গতিবেগ বা গতিশক্তি কমে এবং সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছালে তার প্রাথমিক গতিশক্তি পুরােপুরি স্থিতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয় । আবার পাথরটি যখন নীচে নামে তখন স্থিতিশক্তি কমে এবং গতিশক্তি বাড়ে এক্ষেত্রে স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
যান্ত্রিক শক্তি থেকে তাপশক্তি :
হাতের তালু দুটি পরস্পর ঘষলে হাতের তালু গরম হয়ে ওঠে । এখানে যান্ত্রিক শক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
যান্ত্রিক শক্তি থেকে শব্দশক্তি :
গিটার , সেতার , তবলা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রে যান্ত্রিক শক্তি শব্দশক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
যান্ত্রিক শক্তি থেকে আলােক শক্তি :
ছুরি , কাঁচি প্রভৃতি যন্ত্রে শাণ দেওয়ার সময় আগুনের ফুলকি বের হয় । এখানে যান্ত্রিক শক্তি আলােক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
যান্ত্রিক শক্তি থেকে তড়িৎ শক্তি :
ডায়নামােতে চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে তারের কুণ্ডলী ঘুরিয়ে তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয় । এখানে কুণ্ডলীর ঘূর্ণনজনিত যান্ত্রিক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
যান্ত্রিক শক্তি থেকে চৌম্বক শক্তি :
একটি লােহার দণ্ডকে চুম্বক দিয়ে উপযুক্ত পদ্ধতিতে বারবার ঘষলে দণ্ডটি চুম্বকে পরিণত হয় ।
যান্ত্রিক শক্তি থেকে রাসায়নিক শক্তি :
পটকা জোরে ছুঁড়ে মাটিতে মারলে পটকার মধ্যস্থিত রাসায়নিক দ্রব্যগুলির মধ্যে বিস্ফোরণ সহ রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে এবং রাসায়নিক শক্তি মুক্ত হয় ।
তাপশক্তি থেকে যান্ত্রিক শক্তি :
পেট্রোল , ডিজেল , কয়লা প্রভৃতি জ্বালানি পুড়িয়ে যে তাপশক্তি পাওয়া যায় তার সাহায্যে মােটর গাড়ি , এরােপ্লেন , স্টিম ইঞ্জিন প্রভৃতি চালানাে হয় ।
তাপশক্তি থেকে আলােক শক্তি :
প্লাটিনামের তারকে খুব উত্তপ্ত করলে এটি উজ্জ্বল হয়ে আলাে বিকিরণ করে ।
তাপশক্তি থেকে তড়িৎ শক্তি :
দুটি ভিন্ন ধাতুর তার দুই প্রান্তে জোড়া লাগিয়ে একটি প্রান্ত ঠান্ডা রেখে অন্য প্রান্তটি গরম করলে তারদুটির মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ হয় । একে তাপ-তড়িৎ বলে ।
তাপশক্তি থেকে রাসায়নিক শক্তি :
চুনাপাথরকে উত্তপ্ত করলে এটি ভেঙে গিয়ে ক্যালসিয়াম অক্সাইড ও কার্বন ডাই – অক্সাইড উৎপন্ন করে ।
তাপশক্তি থেকে শব্দশক্তি :
জলকে যথেষ্ট উত্তপ্ত করলে হিসহিস শব্দ শােনা যায় ।
শব্দশক্তি থেকে যান্ত্রিক শক্তি :
প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে জানালার কাচ ফেটে বা ভেঙে যায় ।
শব্দশক্তি থেকে তড়িৎ শক্তি :
টেলিফোন মাইক্রোফোনে কথা বললে একটি পাতলা ধাতব পর্দা একটি চৌম্বক ক্ষেত্রে কম্পিত হয় এবং এর ফলে শব্দশক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
শব্দশক্তি থেকে রাসায়নিক শক্তি :
প্রবল শব্দের প্রভাবে অ্যাসিটিলিন গ্যাস বিয়ােজিত হয়ে কার্বন ও হাইড্রোজেনে পরিণত হয় ।
আলােক শক্তি থেকে যান্ত্রিক শক্তি :
কোনাে বস্তুর উপর আলাে চাপ প্রয়োগ করতে পারে । শূন্যস্থানে রাখা হালকা ঘূর্ণনক্ষম চাকার উপর তীব্র আলাে ফেললে চাকাটি ঘুরতে থাকে ।
আলােক শক্তি থেকে তাপশক্তি :
সূর্যালােক শােষণ করে পৃথিবী – পৃষ্ঠ গরম হয়ে ওঠে ।
আলােক শক্তি থেকে তড়িৎ শক্তি :
কিছু পদার্থের উপর উপযুক্ত প্রকৃতির আলাে ফেললে পদার্থ থেকে ইলেকট্রন নিঃসৃত হয় । একে আলােক তড়িৎ ক্রিয়া বলে । এই প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে সৌরকোষে সূর্যালােককে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয় ।
আলােক শক্তি থেকে রাসায়নিক শক্তি :
গাছের সবুজ পাতা সূর্যালােকের সাহায্যে সালােকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে ।
তড়িৎ শক্তি থেকে যান্ত্রিক শক্তি :
বৈদ্যুতিক পাখা , মােটর , ট্রেন প্রভৃতিতে তড়িৎ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
তড়িৎ শক্তি থেকে তাপশক্তি :
বৈদ্যুতিক হিটার , চুল্লি , ইস্ত্রি প্রভৃতিতে তড়িৎ শক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
তড়িৎ শক্তি থেকে শব্দশক্তি :
বৈদ্যুতিক ঘন্টায় তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে শব্দ উৎপন্ন হয় ।
তড়িৎ শক্তি থেকে আলােক শক্তি :
বৈদ্যুতিক বাল্বে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে তড়িৎ শক্তি আলােক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
তড়িৎ শক্তি থেকে রাসায়নিকশক্তি :
সামান্য অ্যাসিড মেশানাে জলের মধ্য দিয়ে প্লাটিনাম তড়িদ্দ্বারের মাধ্যমে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে জল বিশ্লিষ্ট হয়ে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন তৈরি করে ।
তড়িৎ শক্তি থেকে চৌম্বক শক্তি :
একটি লােহার দণ্ডের উপর জড়ানাে অন্তরিত তামার তারের মাধ্যমে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে লােহা চুম্বকে পরিণত হয় ।
চৌম্বক শক্তি থেকে যান্ত্রিক শক্তি :
একটি দণ্ডচুম্বক লােহার কুচিকে আকর্ষণ করে গতির সৃষ্টি করে ।
চৌম্বক শক্তি থেকে তাপশক্তি :
কোনাে লােহার দণ্ডকে বারবার চুম্বকিত ও বিচুম্বকিত করলে দন্ডটি গরম হয়ে ওঠে ।
চৌম্বক শক্তি থেকে শব্দশক্তি :
একটি ইস্পাতের দণ্ডকে একটি পরিবর্তী ( alternating ) চৌম্বক ক্ষেত্রের সাহায্যে চুম্বকিত করলে দণ্ডটির কম্পন হয় এবং শব্দশক্তি উৎপন্ন হয় ।
রাসায়নিক শক্তি থেকে তাপ ও আলােক শক্তি :
কয়লা , কেরােসিন , রান্নার গ্যাস পােড়ালে তাপ ও আলাে উৎপন্ন হয় ।
রাসায়নিক শক্তি থেকে শব্দশক্তি :
পটকা , বােমা , বারুদ প্রভৃতির বিস্ফোরণ ঘটলে রাসায়নিক শক্তি শব্দশক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
রাসায়নিক শক্তি থেকে তড়িৎ শক্তি :
বৈদ্যুতিক কোষ বা ব্যাটারিতে রাসায়নিক শক্তি তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
পারমাণবিক শক্তি থেকে তাপ , আলােক ও শব্দশক্তি :
পরমাণু বােমা বিস্ফোরণের ফলে প্রচুর পরিমাণে তাপ , আলােক ও শব্দশক্তি উৎপন্ন হয় ।
পারমাণবিক শক্তি থেকে তড়িৎ শক্তি :
পারমাণবিক চুল্লিতে নিয়ন্ত্রিত বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন করা হয় ।
thank you so much😍😍😍
Ka tumi
🥰🥰🥰🥰🥰🥰🥰🥰🥰🥰🥰