জীবন বিজ্ঞান

উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশ

Contents

উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশ

3c320e2f 119a 49f7 8645 be40b297b198
বৃদ্ধি

উদ্ভিদের বৃদ্ধি আজীবন ঘটে। এই বৃদ্ধি সাধারণত মূল ও কাণ্ডের অগ্রভাগে সীমাবদ্ধ। এই ধরনের বৃদ্ধিকে অগ্রস্থ বৃদ্ধি (Apical growth) বলে। অগ্রস্থ ভাজক কলা বারবার বিভাজিত হয়ে নতুন নতুন অপত্য কোশ সৃষ্টি করে। এই নতুন কোশগুলির নিজস্ব বৃদ্ধিও ঘটে। প্রথম অবস্থায় কোশগুলির কোশপ্রাচীর পাতলা হয় এবং ঘন সাইটোপ্লাজমে পূর্ণ থাকে। এর পর আস্তে আস্তে কোশগুলি আকারে বড়ো হয় এবং কোশপ্রাচীরে নানা প্রকার পদার্থ জমে পুরু হয়। দেখা যায় কোশগুলি যে হারে বাড়ে, কোশের প্রোটোপ্লাজম সেই হারে বাড়ে না। উদ্ভিদের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কোশ গহ্বরের আবির্ভাব ঘটে। উদ্ভিদের বৃদ্ধি তিনটি দশায় দেখা যায়, যেমন-1. কোশ বিভাজন দশা 2. কোশ  দীর্ঘস্থায়ী দশা  এবং 3. পরিণতি দশা।

কোশ বিভাজন দশা 

এই দশায় ভাজক কলার কোশগুলি দ্রুত বিভক্ত হতে থাকে এবং বহু অপত্য কোশ সৃষ্টি হয়। সাধারণত মাইটোটিক কোশ বিভাজনের ফলে এইধরনের বৃদ্ধি হয়। জাইগোট থেকে পূর্ণাঙ্গ জীবদেহ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এবং উদ্ভিদের মূল বা কান্ডের শীর্ষের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই দশা দেখা যায়। এর ফলে নুতন কোশের সৃষ্টি হয়। 

দীর্ঘস্থায়ী দশা

এই দশায় অপত্য কোশগুলির আয়তন বাড়ে এবং প্রসারিত হয়, কোশের আয়তন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভ্যাকুওল বা গহবর সৃষ্টি হয়। ভ্যাকুওলে কোশরস থাকে যা কোশের রসস্ফীিতি চাপ বাড়তে সাহায্য করে। এতে কোশের আয়তন আরও বাড়ে। এই অঞ্চলের উদ্ভিদের সক্রিয় বৃদ্ধি ঘটে এবং উদ্ভিদ লম্বায় বাড়ে।

বিভেদ দশা 

এই দশাতে পরিণত কোশগুলি বিভিন্ন কলায় বিভেদিত হয়।

পরিণতি দশা 

শেষ দশায় কোশগুলির নানাপ্রকার কাজের জন্য পরিবর্তন ও রূপান্তর ঘটে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের কলা, অঙ্গ প্রভৃতির সৃষ্টি হয় এবং সেই সঙ্গে দেহের আয়তন বাড়ে। এই দশাতে কোশগুলি পূর্ণ আয়তন প্রাপ্ত হয়ে স্থায়ী অবস্থায় আসে।

সাধারণত উদ্ভিদের বৃদ্ধি দশাগুলিতে ঘটা সামগ্রিক বৃদ্ধিকে প্রাথমিক বৃদ্ধি (Primary growth) বলা হয়। কিন্তু বিশেষভাবে দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদে প্রাথমিক বৃদ্ধির পর কিছু কিছু পরিণত কলা, যেমন-ক্যাম্বিয়াম কলা পুনর্বিভাজন ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে বিভাজিত হয়। এর ফলে উদ্ভিদ প্রস্থে বাড়ে। এই ধরনের বৃদ্ধিকে গৌণ বৃদ্ধি (Secondary growth) বলে। প্রাথমিক ও গৌণবৃদ্ধির ফলে উদ্ভিদের অঙ্গজ বৃদ্ধি (Vegetative growth) হয়। অঙ্গজ বৃদ্ধির পর উদ্ভিদের জনন বৃদ্ধি (Reproductive growth) আরম্ভ হয়। এতে প্রথমে পুষ্পমুকুল এবং পরে ফুল ও ফল গঠিত হয়।

উদ্ভিদের বৃদ্ধি সম্বন্ধীয় কয়েকটি তথ্য

1. উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উষ্ণতা: উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য 25°-35°C উষ্ণতা প্রয়োজন। 

2. উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক পদার্থ: উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য খনিজ লবণ, অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, হরমোন প্রভৃতি মৌলিক পদার্থের প্রয়োজন।

3. উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য দায়ী কোশ: ভাজক কলা বিভাজিত হয়ে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটে। 

4. উদ্ভিদের বৃদ্ধির স্থান: কাণ্ড ও মূলের শীর্ষে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটে। অগ্রস্থ ভাজক কলার বিভাজনে উদ্ভিদ লম্বায় এবং পার্শ্বস্থ ভাজক কলার বিভাজনের ফলে উদ্ভিদ পাশে বাড়ে।

5. উদ্ভিদের দৈনিক বৃদ্ধির পরিবর্তন ও বৃদ্ধির ঋতুগত পরিবর্তন

(i) দৈনিক বৃদ্ধির পরিবর্তন :- উদ্ভিদের দিনে বৃদ্ধি খুব কম হয়। বৃদ্ধি সাধাবণত সন্ধ্যার পর শুরু হয়ে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে এবং ভোরে সবচেয়ে বেশি হয়। প্রত্যেক 24 ঘণ্টার বৃদ্ধির এই ধরনের পরিবর্তনকে দৈনিক বৃদ্ধির পরিবর্তন বলে। 

(ii) বৃদ্ধির ঋতুগত পবিবর্তন :- শীতকালে বেশির ভাগ উদ্ভিদের বৃদ্ধি কম হয় এবং বসন্তকালে সবচেয়ে বেশি হয়। একে বৃদ্ধির ঋতুগত পরিবর্তন বলে।

6. বৃদ্ধির প্রকৃতি :

(i) ক্ষয়পূরণজাত বৃদ্ধি (Regenerative growth):- উদ্ভিদের জীবন দশায় কোনো অঙ্গের ক্ষতি হলে বা অঙ্গহানি ঘটলে কোশ বিভাজনের মাধ্যমে তা পুনর্গঠিত হয়। অনেক সময় বহু উদ্ভিদে শুধু মাত্র মূল সজীব থাকলে অনুকূল পরিবেশে উদ্ভিদের বিটপ অংশ আবার গঠিত হয়। এই ধরনের বৃদ্ধিকে ক্ষয়পূরণজাত বৃদ্ধি বলে।

(ii) অঙ্গজ বৃদ্ধি (Vegetative growth):- উদ্ভিদের জনন অঙ্গ ছাড়া অন্যান্য অঙ্গের বৃদ্ধিকে অঙ্গজ বৃদ্ধি বলে।

(iii) জননগত বৃদ্ধি (Reproductive growth): উদ্ভিদ অঙ্গে পুষ্প মুকুল সৃষ্টি এবং পরে ফুল ও ফল গঠনের সময় যে বৃদ্ধি হয়, তাকে জনন বৃদ্ধি বলে।

7. উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে অক্সিজেনের ভূমিকা: উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য শক্তির প্রয়োজন। খাদ্য জারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন হয়। শ্বসন প্রক্রিয়ায় খাদ্য জারিত হয়। শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রতিটি কোশে অক্সিজেন সরবরাহ একান্ত প্রয়োজন। এজন্য জীবের বৃদ্ধির জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য বলা যায়।

error: Content is protected !!