জীবন বিজ্ঞান

বৃদ্ধি কাকে বলে 

Contents

বৃদ্ধি কাকে বলে 

জীবকোশের প্রোটোপ্লাজম সংশ্লেষণের ফলে জীবদেহে যে প্রক্রিয়ায় আকার, আয়তন ও শুষ্ক ওজন স্থায়ীভাবে বাড়ে তাকে বৃদ্ধি বলে।

2284ed24 03dd 4829 9b32 e0f460ead0db

বৃদ্ধির পদ্ধতি (Process of growth)

বৃদ্ধি প্রধানত তিন ভাবে ঘটে, যেমন-

অক্সেনটিক বৃদ্ধি (Auxentic growth) :

প্রোটোপ্লাজমীয় বস্তু সংশ্লেষিত হওয়ার ফলে কোশের আয়তনের বৃদ্ধিকে অক্সেনটিক বৃদ্ধি বলা হয়।

মাল্টিপ্লিকেটিভ বৃদ্ধি (Multiplicative growth) :

কোশ বিভাজিত হয়ে কোশের সংখ্যা বাড়ে এবং এর ফলে জীবের বৃদ্ধি ঘটে। একে মাল্টিপ্লিকেটিভ বৃদ্ধি বলা হয়।

অ্যাক্রেশনারি বৃদ্ধি (Accretionary growth) :

যোগকলার ধাত্র, তত্ত্ব প্রভৃতিতে সঞ্চয়ের ফলে যে বৃদ্ধি ঘটে তাকে অ্যাক্রেশনারি বৃদ্ধি বলা হয়।

বৃদ্ধির প্রকৃতি (Nature of growth)

প্রাণীর বৃদ্ধির সময়কাল নির্ধারিত (Determinate) এবং সব স্থানেই একই সঙ্গে ঘটে; আজীবন বৃদ্ধি চলে না- নির্দিষ্ট সময় উত্তীর্ণ হলে বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু উদ্ভিদদেহে এই বৃদ্ধি অনির্ধারিত (Indeterminate), কারণ এই বৃদ্ধি আজীবন চলে এবং একটি নির্দিষ্ট স্থানে (মূল ও কান্ডের অগ্রভাগ, পত্রমূলে) ঘটে। বৃদ্ধির ফলে উদ্ভিদদেহে নতুন অঙ্গের সৃষ্টি হয়। ভাজক কলার বিভাজন, অপত্য কোশেব রূপান্তর ও পরিবর্তনের ফলেই এই নতুন অঙ্গের সূচনা হয়।

বৃদ্ধির স্থান (Site of growth)

উদ্ভিদের ক্ষেত্রে :

এককোশী উদ্ভিদে কোশটির ধীরে ধীরে আয়তন বেড়ে বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু বহুকোশী ও উন্নত উদ্ভিদের ক্ষেত্রে উদ্ভিদ দেহের বৃদ্ধি সব স্থানে সমান ভাবে হয় না। সাধারণত বৃদ্ধি কাণ্ড ও মূলের শীর্ষে, পত্রবৃত্তে এবং কুঁড়িতে সীমাবদ্ধ থাকে। এসব বৃদ্ধি অঞ্চলগুলিতে মেরিস্টেম (Meristem) বা ভাজককলা থাকে। ভাজককলার কোশগুলি স্বাভাবিকভাবে ক্রমাগত বিভাজিত হয় এবং কোশের সংখ্যা বাড়ে এবং পরিণত হয়ে সংশ্লিষ্ট অঙ্গের সৃষ্টি করে।

উন্নত উদ্ভিদের বৃদ্ধি (Growth in higher plants) : 

উন্নত উদ্ভিদের বৃদ্ধির তিনটি পর্যায় থাকে, যেমন-

1. ভ্রুণের বৃদ্ধি (Development of embryo)- নিষেকের পর ভ্রূণাণু বিভাজিত হয়ে ভ্রুণ গঠন করে। বীজের বীজপত্রে বা সস্যে সঞ্চিত খাদ্য সংগ্রহ করে ভ্রুণ পরিণত হয় এবং তৃণমূল, তৃণাক্ষ ও ভ্রূণ মুকুল গঠন করে।

2. অঙ্কুরোদগম (Germination)- জল, অক্সিজেন, উষ্ণতা , হরমোন (জিব্বারেলিন) ইত্যাদির প্রভাবে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে চারা গাছে রূপান্তরিত হয়।

3. চারা গাছের বৃদ্ধি (Growth of seedling)- অনুকূল পরিবেশে চারাগাছের কোশগুলি বিভাজিত হয়ে আয়তনে বাড়ে এবং নির্দিষ্ট কলা ও কলাতন্ত্র গঠন করে। এর পর চারাগাছটি পরিণত হয়।

প্রাণীদের ক্ষেত্রে :

নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সর্বাঙ্গব্যাপী বৃদ্ধি চলে। উদ্ভিদের ন্যায় কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ থাকে না। ভ্রূণের পরিস্ফুরণে প্রাণীদেহের অঙ্গগুলি সংযোজিত হয় অর্থাৎ জন্মানোর পরই সব অঙ্গগুলি প্রাণীদেহে থাকে, কোনো নতুন অঙ্গের সৃষ্টি হয় না। কোশ বিভাজন ও কোশের আয়তন বেড়ে প্রাণীদেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটে।

বৃদ্ধির ফলাফল

1. একটি কোশ থেকে কোশবিভাজনের মাধ্যমে জীবদেহে অনেকগুলি কোশের সৃষ্টি হয়। এর ফলে দেহের আকার ও আয়তন বেড়ে যায়।

2. কোশ বিভাজনের মাধ্যমে সৃষ্ট অপত্য কোশগুলি নানা প্রকার কলা গঠন করে এবং দেহের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটে। 

3. কোশে উপচিতিমূলক বিপাকীয় ক্রিয়া সম্পন্ন হলে, প্রোটোপ্রাজমের ভর ও আয়তন বাড়ে, ফলে জীবদেহের বৃদ্ধি ঘটে।

4. কোশের মধ্যে বিভিন্ন প্রকাব নির্জীব বস্তু সঞ্চিত হয়। যেমন উদ্ভিদকোশে- কোশপ্রাচীরে লিগনিন, সুবেরিন, কিউটিন প্রভৃতি জমে কোশের আয়তনকে বাড়ায়। তা ছাড়া কোশে (প্রাটিন, লিপিড বা ফ্যাট সঞ্চিত হয়ে কোশের আয়তন ও ওজন গড়তে থাকে। প্রাণীর অস্থি কলায়- ক্যালসিয়াম, ফসফরাস প্রভৃতি সঞ্চিত হয় ফলে অস্থির আকার, আয়তন ও ওজন বাড়ে। সুতরাং জীব কোশে নানা প্রকার পদার্থ সঞ্চিত হয়ে জীব দেহ বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ বলা যায় ।

বৃদ্ধির প্রকারভেদ 

প্রকৃতি অনুসারে জীবের বৃদ্ধি সাধারণত তিন প্রকার, যেমন- ( i ) অঙ্গজ বৃদ্ধি, ( ii ) পুনরুৎপাদনকারী বৃদ্ধি এবং ( iii ) জননগত বৃদ্ধি।

অঙ্গজ বৃদ্ধি (Vegetative growth) :

যে প্রক্রিয়ায় কোশ বিভাজন, কলা গঠন, কোশীয় সঞ্চয় প্রভৃতি কারণে, এককোশী জাইগোট বেড়ে বহুকোশী পূর্ণাঙ্গ জীবদেহ গঠন করে যাতে জীবদেহের আকার, আয়তন ও ওজন বাড়ে তাকে অঙ্গজ বৃদ্ধি বলে।

পুনরুৎপাদনকারী বৃদ্ধি (Growth of regeneration) :

যে বৃদ্ধিতে জীবদেহের ক্ষতস্থান নিরাময় হয়ে জীব স্বাভাবিক আকৃতিতে ফিরে আসে, তাকে পুনরুৎপাদনকারী বৃদ্ধি বলে।

জননগত বৃদ্ধি (Reproductive growth) :

জীবদেহের জনন অঙ্গগুলির পূর্ণতা ও সক্রিয়তা লাভের জন্য যে বৃদ্ধি ঘটে, তাকে জননগত বৃদ্ধি বলে। উদাহরণ-উদ্ভিদের পুংস্তবক, স্ত্রী স্তবক এবং প্রাণীর শুক্রাশয় ও ডিম্বাশয়ের বৃদ্ধি।

বৃদ্ধির গুরুত্ব 

(i) বৃদ্ধির ফলে জীবের দৈহিক ও জৈবিক পরিপূর্ণতা আসে।

(ii) বৃদ্ধি প্রাপ্ত জীব বংশ বিস্তারের সুযোগ লাভ করে।

(iii) বৃদ্ধির ফলে পরিণত হয়ে জীব প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার ক্ষমতা অর্জন করে। 

(ⅳ) পুনরুৎপাদনের ফলে নিম্নশ্রেণীর প্রাণী বংশ বৃদ্ধি ও আত্মরক্ষার সুযোগ পায়।

error: Content is protected !!