জীবন বিজ্ঞান

আলোক শ্বসন কাকে বলে

Contents

আলোক শ্বসন কাকে বলে

যে প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের সবুজ কোশে আলোক ও অক্সিজেনের উপস্থিতিতে শ্বসনের হার স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়ে এবং অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয় তাকে আলোক শ্বসন বলে । 

আলোক শ্বসন কারী উদ্ভিদ

তামাক ( Nicotiana ) , মুগ ( Phaseolus ) , মটর ( Psium ) , পিটুনিয়া ( Petuma ) , তুলো ( Grossypium ) , লংকা ( Capsicum ) , ধান ( Oryza ) , সয়াবিন ( Glycine ) , সূর্যমুখী ( Helianthus ) প্রভৃতি সপুষ্পক সবুজ উদ্ভিদের কোশে এবং কারা ( Chara ) , নাইটেলা ( Nitella ) প্রভৃতি শৈবালে আলোক শ্বসন দেখা যায় । বর্তমানে জানা গেছে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘাস জাতীয় উদ্ভিদে এই শ্বসন ঘটে । সাধারণভাবে বলা যায় C3 সব উদ্ভিদে আলোক শ্বসন দেখা যায় । 

আলোক শ্বসনের স্থান  

ক্লোরোপ্লাস্ট , পারক্সিজোমমাইটোকনড্রিয়া নামে কোশীয় অঙ্গাণুগুলির মাধ্যমে আলোক শ্বসন ঘটে । 

( i ) শ্বসন বস্তু : সদ্য উৎপন্ন গ্লাইকোলেট বা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড । 

( ii ) মুখ্য উৎপাদিত যৌগ : গ্লাইকোলেট । এছাড়া গ্লাইসিন ও সেরিন নামে অ্যামাইনো অ্যাসিড । 

( iii ) C2 চক্র বলার কারণ : উৎপাদিত গ্লাইকোলেট হল 2 কার্বন যৌগ । 

আলোক শ্বসন প্রক্রিয়া 

ক্লোরোপ্লাস্ট , পারক্সিজোম ও মাইটোকনড্রিয়া আলোক শ্বসনের স্থান । কোশে এই তিনটি অঙ্গাণু একসঙ্গে কাছাকাছি থাকে । পারক্সিজোম ক্লোরোপ্লাস্ট সংলগ্ন ক্ষুদ্র গোলাকার অঙ্গাণু । কেলভিন চক্রের ফসফেট যুক্ত হেক্সোজ থেকে 2 কার্বন বিশিষ্ট ফসফোগ্লাইকোলিক অ্যাসিড ( Phosphoglycolic acid ) তৈরি হয় । 

ফসফোগ্লাইকোলিক অ্যাসিড ফসফোটেজ উৎসেচকের প্রভাবে গ্লাইকোলিক অ্যাসিডে ( Glycolic acid— CH3OHCOOH ) পরিণত হয় । গ্লাইকোলিক অ্যাসিড হল আলোক শ্বসনের প্রথম উপাদান । সালোকসংশ্লেষের সময় আলোর তীব্রতা , কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অক্সিজেনের পরিমাণের উপর গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের উৎপাদন নির্ভর করে । এই সময় বায়ুর কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ 1% এর কম থাকে । 

ফসফোগ্লাইকোলিক অ্যাসিডের উৎপাদন :

ক্লোরোপ্লাস্টে রাইবুলোজ 1.5 বিসফসফেট কার্বোক্সিলেজ উৎসেচক অক্সিজেনের উপস্থিতিতে রাইবুলোজ 1.5 বিসফসফেটকে 3 ফসফোগ্লিসেরিক অ্যাসিড এবং 2  ফসফোগ্লাইকোলিক অ্যাসিডে ভেঙে দেয় । সদ্য উৎপন্ন গ্লাইকোলিক অ্যাসিড আলোক শ্বসনের শ্বসন বস্তু হিসেবে কাজ করে এবং ক্লোরোপ্লাস্ট থেকে পেরক্সিজোমে যায় ।

ফসফোগ্লাইকোলিক অ্যাসিডের রূপান্তর এবং গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের উৎপাদন :

ক্লোরোপ্লাস্টে 2 ফসফোগ্লাইকোলিক অ্যাসিডজল ফসফাটেজ উৎসেচকের সাহায্যে ডিপফোরাইলেশন বিক্রিয়ায় ( ফসফোরিক অ্যাসিড বিয়োগ ) গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ( গ্লাইকোলেট ) ও ফসফোরিক অ্যাসিডে পরিণত হয় । 

গ্লাইঅক্সিলিক অ্যাসিডের উৎপাদন :

গ্লাইকোলিক অ্যাসিড অক্সিজেন পেরক্সিজোমে গ্লাইকোলেট অক্সিডেজ উৎসেচকের প্রভাবে জারিত হয়ে গ্লাইঅক্সিলিক অ্যাসিড ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডে রূপান্তরিত হয় । 

গ্লাইসিনের সংশ্লেষণ :

গ্লাইঅক্সিলিক অ্যাসিড গ্লুটামেট – গ্লাইঅক্সিলেট অ্যামিনোট্রান্সফারেজ উৎসেচকের সহায়তায় গ্লাইঅক্সালিক অ্যাসিড গ্লাইসিনে পরিণত হয় । গ্লাইসিন পরে কোশের সাইটোপ্লাজমের মধ্য দিয়ে মাইটোকনড্রিয়াতে যায় ।

সেরিন থেকে হাইড্রক্সিপাইরুভিক অ্যাসিডের রূপান্তর :

পেরক্সিজোমে সেরিন ও গ্লাইঅক্সালিক অ্যাসিড অ্যামাইনোট্রান্সফারেজ উৎসেচকের সাহায্যে হাইড্রোক্সিপাইরুভিক অ্যাসিড ও গ্লাইসিন উৎপন্ন করে । 

গ্লিসারিক অ্যাসিডের সংশ্লেষণ :

হাইড্রক্সিপাইরুভেট রিডাকটেজ উৎসেচকের সাহায্যে হাইড্রক্সিপাইরুভিক অ্যাসিড গ্লিসারিক অ্যাসিডে পরিণত হয় । বিক্রিয়ায় NADH + H+ জারিত হয় ।

গ্লিসারিক অ্যাসিডের ফসফোরীভবন :

এই গ্লিসারিক অ্যাসিড সাইটোসোলের মধ্য দিয়ে কোরোপ্লাস্টে যায় । এরপর ক্লোরোপ্লাস্টের মধ্যে গ্লিসারিক অ্যাসিড গ্লিসারিক অ্যাসিড কাইনেজ উৎসেচকের সাহায্যে ফসফেট যুক্ত হয়ে 3 ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিডে পরিণত হয় । এই ফসফো গ্লিসারিক অ্যাসিড কেলভিন চক্রে প্রবেশ করে ।

আলোক শ্বসনের তাৎপর্য 

1. কিসাকীর ( Kisaki ) মতানুসারে উদ্ভিদের পরিণত পাতা অপেক্ষা কচি পাতায় আলোক শ্বসন বেশি দেখা যায় । 

2. CO2 গ্রহণ না কবে , শুধু নির্গত হলেও উদ্ভিদে শর্করা সংশ্লেষিত হয় । 

3. CO2 গ্রহীতা রাইবিউলোজ বিসফসফেট জারিত হওয়ার ফলে আলোক শ্বসনের ফলে সালোকসংশ্লেষের হার কমে ।

4. আলোক শ্বসনে CO2 নির্গত হওয়ায় ক্লোরোপ্লাস্টে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ হ্রাস না পেয়ে সমতা বজায় থাকে । 

5. এই বিক্রিয়া পথে বিভিন্ন প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড উৎপন্ন হয় যা প্রোটিন সংশ্লেষে ব্যবহৃত হতে পারে । 

6. তীব্র আলোকের উপস্থিতিতে এবং আন্তঃকেশীয় CO2 কম ঘনত্বের কারণে সালোকসংশ্লেষীয় অঙ্গের যে ক্ষতি হতে পারত এই প্রক্রিয়া তার থেকে উদ্ভিদকে রক্ষা করে ( Kozaki and Takeba 1996 ) ।

error: Content is protected !!