বুদ্ধির শ্রেণীবিভাগ

Contents

বুদ্ধির শ্রেণীবিভাগ | বুদ্ধির প্রকারভেদ

আধুনিক মনোবিদগণের মতে , বিশেষভাবে এই প্রবণতা দেখা যায় যে বুদ্ধির নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নিরূপণের অসুবিধা থাকায় তারা বুদ্ধিকে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করেছেন বা পৃথক পৃথকভাবে প্রকৃতি নির্ণয় করেছেন ।

হেব এর মতে বুদ্ধির শ্রেণীবিভাগ 

A বুদ্ধি / তরল বুদ্ধি / জন্মগত বুদ্ধি :

হেব এর A বুদ্ধি , ক্যাটল এর তরল বুদ্ধি , জীববিজ্ঞানীদের মতে জন্মগত বুদ্ধির রূপের অনুরূপ । অর্থাৎ , বুদ্ধি হল জন্মগত মানসিক রূপের ক্ষমতা , যা জিন সংগঠনের মাধ্যমে পূর্বপুরুষের থেকে পাওয়া এমন এক শক্তি , যা ব্যক্তির মানসিক ক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে ।

B বুদ্ধি / কেলাসিত বুদ্ধি / প্রকাশিত বুদ্ধি :

হেব এর B বুদ্ধি , ক্যাটল এর কেলাসিত বুদ্ধি জীববিজ্ঞানীগণের প্রকাশিত রূপের অনুরূপ । এই বুদ্ধি জন্মগত নয় , অর্জিতও নয় । জন্মগত ক্ষমতা ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার ফল ব্যক্তির আচরণের মধ্যে যেভাবে প্রকাশিত হয় , তাই হল প্রকাশমান বুদ্ধি । পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বুদ্ধি পরিবর্তন লাভ করে ।

ভার্নন এর মতে বুদ্ধির শ্রেণীবিভাগ

মনোবিদ ভার্নন ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে C বুদ্ধির কথা বলেছেন । মনোবিদ ভার্নন পরীক্ষার দ্বারা বুদ্ধ্যাঙ্ক নির্ণয় করে যে বুদ্ধি প্রকাশ করেন , তাই হল C বুদ্ধি । 

থর্নডাইকের মতে বুদ্ধির শ্রেণীবিভাগ 

মনোবিদ থর্নডাইক বুদ্ধিকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন । যেমন – 

বিমূর্ত বুদ্ধি :

বিমূর্ত চিন্তনের জন্য যে বুদ্ধির প্রয়োজন হয় , তাই হল বিমূর্ত বুদ্ধি । অর্থাৎ , শব্দ , অক্ষর , সংখ্যা , চিন্তা , কল্পনা , যুক্তি , বিচারকরণ ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া করার যে ক্ষমতা তাই হল বিমূর্ত বুদ্ধি । 

কার্যকরী বুদ্ধি :

দৈনন্দিন জীবনে বাস্তবমুখী কাজ করার জন্য যে বুদ্ধির প্রয়োজন হয় , তাই হল কার্যকরী বুদ্ধি বা মুক্ত বুদ্ধি । 

সামাজিক বুদ্ধি : 

দৈনন্দিন জীবনে সামাজিক পরিস্থিতিতে যথাযথ ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার জন্য যে বুদ্ধির প্রয়োজন হয় , তাই সামাজিক বুদ্ধি । 

মনোবিদ গার্ডনারের মতে বুদ্ধির শ্রেণীবিভাগ 

মনোবিদ গার্ডনার ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর “ Theory of Intelligence ” বইতে সাত প্রকার বুদ্ধির কথা বলেছেন –

ভাষাগত বুদ্ধি :

ভাষামূলক দক্ষতা বিকাশের জন্য যে বুদ্ধির প্রয়োজন হয় , তাকে ভাষাগত বুদ্ধি বলে । 

যুক্তি নির্ভর গাণিতিক বুদ্ধি : 

যুক্তিবিদ্যা ও গণিতের কর্ম সম্পাদনের জন্য যে বুদ্ধির প্রয়োজন হয় , তাই হল যুক্তি নির্ভর গাণিতিক বুদ্ধি । 

স্থান সংক্রান্ত বুদ্ধি : 

স্থান সম্পর্কিত সংগঠন বা অনুরূপ ক্ষেত্রে দক্ষতা বিকাশের জন্য যে বুদ্ধির প্রয়োজন হয় , তাকে স্থান সংক্রান্ত বুদ্ধি বলে । 

সংগীতধর্মী বুদ্ধি :

সংগীতে দক্ষতা অর্জনের জন্য যে বুদ্ধির প্রয়োজন হয় , তাই হল সংগীতধর্মী বুদ্ধি । 

শরীর সংক্রান্ত বুদ্ধি :

শরীরের কোনো অংশকে যখন উদ্দেশ্যমূলক কর্ম সম্পাদনের জন্য ব্যবহার করতে যে বুদ্ধির প্রয়োজন হয় , তাকে শরীর সংক্রান্ত বুদ্ধি বলে ।

আন্তর্ব্যক্তিত্ব বুদ্ধি :

ব্যক্তির নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে জানার জন্য যে বুদ্ধি প্রয়োজন হয় , তাকে আন্তর্ব্যক্তিত্ব বুদ্ধি বলে । আন্তর্ব্যক্তিত্ব বুদ্ধি কোনো ব্যক্তি কর্তৃক অন্যান্য ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানার জন্য যে বুদ্ধির প্রয়োজন হয় , তাই হল আন্তর্ব্যক্তিত্ব বুদ্ধি । 

আধুনিক এই বুদ্ধির শ্রেণীবিভাগ আলোচনা থেকে দেখা যায় যে পরবর্তীকালে বুদ্ধি সম্পর্কে যা কিছু আলোচনা তা B বুদ্ধিকে নিয়ে । 

error: Content is protected !!