ইতিহাস

ভারতে সুতিবস্ত্র শিল্প বিকাশে ইউরোপীয় ও ভারতীয় উদ্যোগ

Contents

ভারতে সুতিবস্ত্র শিল্পের বিকাশে ইউরােপীয় ও ভারতীয় উদ্যোগ

Spinning room in indian orchard cotton mill
ভারতে সুতিবস্ত্র শিল্প

উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতীয় মূলধনে যে শিল্পটি সবচেয়ে বেশি উন্নতিসাধন করেছিল তা হল বস্ত্র শিল্প । এই শিল্পের কেন্দ্রস্থল ছিল বােম্বাই । কলকাতাকে কেন্দ্র করে ইউরােপীয় মালিকানায় যে সময় পাট শিল্পের প্রসার ঘটে, সেই সময় বােম্বাইকে কেন্দ্র করে ভারতীয় মালিকানায় প্রসার ঘটে বস্ত্র শিল্পের।

ভারতে সুতিবস্ত্র শিল্প বিকাশে ইউরোপীয় উদ্যোগ

ইংরেজ তথা ইউরােপীয় পুঁজিপতিরা এদেশে সুতিবস্ত্র শিল্পে মূলধন বিনিয়ােগে একেবারে নিশ্চেষ্ট ছিল না । বরং ভারতের প্রথম কার্পাস শিল্পকেন্দ্রটি গড়ে উঠেছিল ইউরোপীয় উদ্যোগেই । ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল হাওড়ার বাউড়িয়া কটন মিল । এরপর ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি উদ্যোগে পণ্ডিচেরিতে এবং ১৮৫৩  খ্রিস্টাব্দে জেমস ল্যান্ডন নামে জনৈক ইংরেজ শিল্পোদ্যোগীর প্রয়াসে ব্রোচে একটি সুতােকাটা কল স্থাপিত হয় ।

ভারতে সুতিবস্ত্র শিল্প বিকাশে ভারতীয় উদ্যোগ

ভারতে সুতিবস্ত্র শিল্প বিকাশে ভারতীয় শিল্প উদ্যোগের কারণ :

বস্ত্র শিল্পে দেশীয় উদ্যোগের উল্লেখযােগ্য কয়েকটি কারণ হল  一

  1. ভৌগােলিক সুবিধা নিয়ে বােম্বাই ও গুজরাতের পারসি এবং মাড়ােয়ারি ব্যবসায়ীরা তাদের মূলধন বিনিয়ােগ করার জন্য বস্ত্র শিল্পকেই সবার আগে বেছে নেয় ।
  2. গুজরাত ও বােম্বাই অঞ্চলে প্রথম রেলপথের সূচনার সুবিধাকে কাজে লাগায় দেশীয় বস্ত্র শিল্পপতিরা । 
  3. বস্ত্র শিল্পের প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল তুলাের চাষ দক্ষিণ ভারতে বেশি হওয়ায় দেশীয় শিল্পপতিরা বস্ত্র শিল্পে মূলধন বিনিয়ােগে উৎসাহী হয়ে ওঠে ।
  4. পারসি বস্ত্র শিল্প ব্যবসায়ীরা আগে থেকেই আফ্রিকা ও চিনের সঙ্গে তুলাের ব্যাবসা গড়ে তােলায় সেই অভিজ্ঞতা  কাজে লাগে ভারতের বস্ত্রশিল্পের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ।

শিল্প স্থাপন :

  1. ভারতীয় উদ্যোগে বােম্বাইয়ে প্রথম ভারতের বৃহত্তম বস্ত্রশিল্প ‘ বােম্বে স্পিনিং অ্যান্ড উইভিং কোম্পানি ’ স্থাপন করেন ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে পারসি শিল্পপতি কাউয়াসজি নানাভাই দাভর । 
  2. রণছােড়লাল ছেপটলাল নামে এক গুজরাতি ব্রাহ্মণ আমেদাবাদে একটি কাপড়ের কল প্রতিষ্ঠা করেন ( ১৮৫৯ খ্রি. ) ।
  3. বিশিষ্ট ভারতীয় শিল্পপতি জামশেদজি টাটার উদ্যোগে নাগপুরে স্থাপিত হয় ‘ এম্প্রেস মিল ‘ ( ১৮৭৭ খ্রি. ) ।

ভারতে সুতিবস্ত্র শিল্পের প্রসার

ভারতীয় উদ্যোগে কাপড়ের কলের সংখ্যা উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে । বিশেষ করে ‘ বয়কট ‘  ও ‘ স্বদেশি ‘ আন্দোলনের প্রভাবে দেশে সুতিবস্ত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে এই শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে । দেখা গেছে ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে যেখানে কাপড়ের কলের মােট সংখ্যা ছিল ৫৮টি , সেখানে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০৬টিতে । ওই কলগুলিতে প্রায় দু – লক্ষ শ্রমিক কাজ করত ।

উপসংহার

ভারতীয় বস্ত্র শিল্পপতিদের প্রচেষ্টায় বহির্বিশ্বের বাজারে ভারতীয় সুতিবস্ত্র ম্যাঞ্চেস্টার – জাত  সুতিবস্ত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়ায় । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে বিশ্বে বস্ত্র রপ্তানিতে ব্রিটেনের পরই ভারত দ্বিতীয় স্থান দখল করে নেয় । একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে , প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ভারতে মােট ৩৩৫টি সুতােকলের মধ্যে ৩২৬টিই ছিল সম্পূর্ণ ভারতীয় মালিকানায় পরিচালিত ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!