মনোযোগ কাকে বলে
Contents
মনোযোগ কাকে বলে
সাধারণভাবে মনোযোগ বলতে বুঝি কোনো নির্বাচিত বিষয়কে চেতনার কেন্দ্রস্থলে নিয়ে আসা । মনোযোগ হল কোনো বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট একটি চেতনা । শিখনের ফলশ্রুতি হল মনোযোগ ।
প্রাচীন মনোবিদগণের মতে , মনোযোগ হল একটি মানসিক শক্তি , চর্চার সাহায্যে যার বৃদ্ধি ঘটে ।
আধুনিক মনোবিদগণের মতে , মনোযোগ হল একটি মানসিক প্রক্রিয়া কিন্তু এটি মানসিক শক্তি নয় ।
মরগান , কিং এবং রবিনসনের ( Morganand , King and Robinson ) মতে ( ১৯৮২ ) “ মনোযোগ বলতে বোঝায় অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারে নতুন কোনো বিষয় সংযোজনের জন্য কোনো নির্বাচনের প্রক্রিয়া । ” ( “ Attention is the term given to the processes that select certain inputs for inclusion in the focus of experience ” ) .
J.R. Ross ( 1951 ) -এর মতে , “ মনোযোগ হল এমন একটি মানসিক প্রক্রিয়া যা কোনো বিষয়কে সুস্পষ্ট চিন্তনের মাধ্যমে মনের সামনে তুলে ধরে । ” ( Attention is the process of getting an object of thought clearly before the mind . )
এক কথায় মনোযোগ হল উদ্দীপক নির্ভর , নির্বাচনধর্মী অস্থায়ী এবং পরিবর্তনশীল সচেতন মানসিক প্রক্রিয়া ।
মনোযোগের বৈশিষ্ট্য
মনোযোগের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল –
কেন্দ্রানুগ প্রক্রিয়া :
মনোযোগ হল একটি কেন্দ্রানুগ প্রক্রিয়া । যে বিষয়টি চেতনার কেন্দ্রস্থলে থাকে তার প্রতি আমরা মনোযোগী হই ।

‘ ক ’ হল চেতনার কেন্দ্র ।
i – x চেতনার প্রান্তের উদ্দীপক সমূহ
মনোযোগের অবস্থান চেতনার প্রান্তে i – x পর্যন্ত উদ্দীপক রয়েছে । এখানে i নং উদ্দীপকটিকে ব্যক্তি চেতনার প্রান্ত থেকে চেতনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে । অর্থাৎ , i নং উদ্দীপকটি প্রতি ব্যক্তির মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে ।
উদ্দীপক নির্ভর :
মনোযোগের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল উদ্দীপক নির্ভর । মনোযোগ আকর্ষণের জন্য ন্যূনতম উদ্দীপক শক্তির প্রয়োজন ।
পরিবর্তনশীলতা :
ব্যক্তির মনোযোগ এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে প্রতিনিয়ত স্থানান্তরিত হয় । অর্থাৎ , মনোযোগ হল পরিবর্তনশীল ।
নির্বাচনধর্মী :
মনোযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল উদ্দীপকের নির্বাচন । যেসব উদ্দীপক চেতনার প্রান্তে থাকে তার মধ্য থেকে একটি মাত্র উদ্দীপক নির্বাচন করে মনোযোগ দিয়ে থাকি ।
ইচ্ছামূলক মানসিক প্রক্রিয়া :
মনোযোগ হল একটি ইচ্ছামূলক সক্রিয় মানসিক প্রক্রিয়া । এই মানসিক প্রক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট দিকে চালিত হয়ে বস্তু নির্বাচন করে তার প্রতি মনোযোগ দেয় ।
সীমিত ক্ষেত্র :
মনোযোগের ক্ষেত্র বা পরিধি খুবই সীমিত । একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমরা একটি বস্তু বা বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে পারি , অধিক বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে পারি না ।
ইতিবাচক ও নেচিবাচক :
মনোযোগের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিক রয়েছে । মনোযোগের ইতিবাচক দিক বলতে বোঝায় একটি নির্দিষ্ট উদ্দীপকের প্রতি মনোযোগী হওয়া । অপরপক্ষে মনোযোগের নেতিবাচক দিক বলতে বোঝায় অন্যান্য উদ্দীপককে বর্জন করা । মনোযোগের ক্ষেত্রে দুটি দিকই সমান গুরুত্বপূর্ণ ।
অনুসন্ধানী :
অনুসন্ধানী দিক হল মনোযোগের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য । নতুন বা বৈচিত্র্যময় বিষয়বস্তুর প্রতি আমাদের মনোযোগ আকৃষ্ট হয় । বৈচিত্র্য খুঁজে বেড়ানোই মনোযোগের ধর্ম ।
উদ্দেশ্যমূলক :
মনোযোগ হল উদ্দেশ্যমূলক । মনোযোগ সবসময় উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে চালিত হয় । মনোযোগ অনির্দিষ্ট বস্তু বা বিষয়কে সুনির্দিষ্ট করে তোলে ।
ক্ষণস্থায়ী :
মনোযোগের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতি ; আমরা কোনো বস্তু বা ঘটনার প্রতি বেশিক্ষণ মনোযোগ দিতে পারি না ।
বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণমূলক প্রক্রিয়া :
মনোযোগ হল একটি বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণমূলক মানসিক সচেতন প্রক্রিয়া । কোনো একটি পাখির দিকে মনোযোগ দিতে গিয়ে তার বিভিন্ন অংশ যেমন পালক , রং , ডাক প্রভৃতির প্রতি মনোযোগী হতে পারি । আবার এই বিভিন্ন দিকগুলি সংযুক্ত করে সামগ্রিক রূপটি ফুটে ওঠে । অর্থাৎ , পাখিটি কী তার প্রতি আমরা মনোযোগ দিয়ে থাকি ।
ধারাবাহিক প্রক্রিয়া :
মনোযোগ হল একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া । কতগুলি বস্তু বা সংখ্যার প্রতি একসঙ্গে মনোযোগী হলে বিষয়গুলি ধারাবাহিকভাবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে দৃষ্ট হয় ।
মনোযোগ হল একটি উদ্দেশ্য নির্ভর , পরিবর্তনশীল , নির্বাচনধর্মী , উদ্দীপক নির্ভর , বিশ্লেষণধর্মী , ধারাবাহিক , কেন্দ্রানুগ ক্ষণস্থায়ী প্রক্রিয়া ।