শিক্ষা বিজ্ঞান

প্রেষণা কাকে বলে 

Contents

প্রেষণা কাকে বলে 

‘ প্রেষণা ‘ এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘ Motivation ‘, ‘ Motivation ‘ শব্দটি লাতিন শব্দ ‘ Moveers ‘ থেকে এসেছে । ‘ Moveers ‘ কথাটির অর্থ ‘ Move ‘ অর্থাৎ ‘ চলন প্রক্রিয়া ‘ । অর্থাৎ মনের অভ্যন্তর থেকে যে শক্তি আমাদের চালনা করে তাই হল প্রেষণা ( Motivation ) । 

বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানীরা প্রেষণার যেসকল সংজ্ঞা দিয়েছেন । তা হল – 

স্কিনার ( B. E Skinner , 1947 ) বলেছেন , “ Motivation is school learning involves arousing , Persisting , sustaining and directing desirable behaviour . ” 

অর্থাৎ প্রেষণা হল এমন এক ধরনের শিখন যা বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও কাম্য আচরণগুলি জাগ্রত করতে , অনেক সময় ধরে রাখতে এবং সেগুলিকে পরিচালনা করতে সাহায্য করে । 

গুড ( C.W. Good , 1973 ) বলেছেন , “ Motivation is the Process of arousing , sustaining and regulating activity . ” 

অর্থাৎ প্রেষণা হল এমন একটি প্রক্রিয়া যা কর্মে উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে , দীর্ঘস্থায়ী ও নিয়ন্ত্রণ করে । 

মনোবিদ উডওয়ার্থ ( Woodworth ) বলেছেন , প্রেষণা হল ব্যক্তির এমন একটি প্রক্রিয়া যা কোনো লক্ষ্যপূরণ ও আচরণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে । 

( A Motive is a set which predisposes the individual for certain activities and fore seeking certain goals ) . 

মনোবিদ সুইফট ( Swift ) বলেছেন , প্রেষণা হল ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের চাহিদা পরিতৃপ্তির জন্য যে পরিবর্তনশীল । প্রক্রিয়া যা তার আচরণধারাকে সর্বদা নিয়ন্ত্রণ করে । ( Motivation is a dynamic process initiating and directing behaviour , continous but fluctuating in intensities , and aimed at satisfaction of the individuals needs . ) 

মনোবিদ ম্যাসলো ( Maslow ) বলেছেন , প্রেষণা হল সদা পরিবর্তনশীল ও জটিল বিষয় যা জৈবিক অবস্থার একটি সর্বজনীন বৈশিষ্ট্য । Maslow- এর মতে , “ Motivation is constant , never ending , fluctuating and complex and that it is an almost universal characteristic of particularly every C organismic state of affairs . ” 

প্রেষণা হল এমন এক মানসিক প্রক্রিয়া যা ব্যক্তির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কর্ম উদ্দীপনা জাগ্রত করে এবং বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও সেটিকে নিয়ন্ত্রিত পথে পরিচালনার মাধ্যমে লক্ষ্যের অভিমুখে নিয়ে যায় ।

প্রেষণার বৈশিষ্ট্য 

প্রেষণার সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে যে  সকল বৈশিষ্ট্য দেখা যায় তা হল – 

( ১ ) অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া : প্রেষণা হল অভ্যন্তরীণ একটি মানসিক প্রক্রিয়া । দেহের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি হয়ে থাকে । 

( ২ ) নির্বাচনমূলক : প্রেষণা মূলত নির্বাচনমূলক । ব্যক্তি একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বস্তুকে কেন্দ্র করে প্রয়োজনীয় আচরণ সম্পাদন করে । যেমন – ক্ষুধার্ত ব্যক্তি খাদ্যবস্তু অন্বেষণ করে ।

( ৩ ) ধারাবাহিক প্রক্রিয়া : প্রেষণা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া । ব্যক্তির একটি প্রেষণা সম্পূর্ণ হলে পরমুহূর্তে অপর আরও একটি প্রেষণার সৃষ্টি হয় । অর্থাৎ জন্মের পর থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত চলতে থাকে । 

( ৪ ) তুলনামূলক ভাবে স্থিতিশীল : ব্যক্তির মধ্যে যে প্রেষণার সৃষ্টি হয় তা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে । 

( ৫ ) উদ্দেশ্যমুখী : প্রেষণার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল লক্ষ্যবস্তু অর্জন । ব্যক্তির মধ্যে যে প্রেষণার সৃষ্টি হয় তা পূরণ করে একমাত্র লক্ষ্য । 

( ৬ ) ভারসাম্যাবস্থা : প্রেষণা ব্যক্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে । অভাববোধের তাড়নায় ব্যক্তির দৈহিক বা মানসিক যে পরিবর্তন হয় বা ঘটে চাহিদার নিবৃত্তিতে ভারসাম্য ফিরে আসে । 

( ৭ ) প্রেষণার হ্রাস বৃদ্ধি : যে অভাব থেকে ব্যক্তির মধ্যে প্রেষণার সৃষ্টি হয় , সেই প্রেষণা পূরণ হওয়ার পর আরেকটি নতুন প্রেষণার উদ্ভব হয় । অর্থাৎ পূর্বের প্রেষণা হ্রাস পায় এবং পরের নতুন প্রেষণার তীব্রতা বৃদ্ধি পায় । 

( ৮ ) মাত্রাগত পার্থক্য : প্রেষণার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল মাত্রাগত পার্থক্য । যে প্রেষণার তীব্রতা বেশি সেই ক্ষেত্রে কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায় । অপরপক্ষে যে প্রেষণার তীব্রতা কম সেক্ষেত্রে কর্মতৎপরতা অনেক কম হয় । 

প্রেষণা প্রতিটি মানুষের জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে । চাহিদার তাড়নায় ব্যক্তির মানসিক যে পরিবর্তন ঘটে সেই পরিবর্তন প্রেষণার ফলে চাহিদার নিবৃত্তিতে ভারসাম্য ফিরে আসে ।

প্রেষণা কত প্রকার ও কি কি

শিখনের একটি উপাদান হল প্রেষণা । প্রয়োজন বা অভাববোধ থেকে প্রেষণার সৃষ্টি হয় এবং উদ্দেশ্য সাধনের দিকে পরিচালিত হয় , তাকে প্রেষণা ( Motivation ) বলে । বিভিন্ন মনোবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে প্রেষণার  শ্রেণীবিভাগ করেছেন । তবে বেশিরভাগ মনোবিজ্ঞানী প্রেষণাকে তিনভাগে ভাগ করেছেন ।

( ১ ) জৈবিক প্রেষণা , ( ২ ) ব্যক্তিগত প্রেষণা ও ( ৩ ) সামাজিক প্রেষণা ।

জৈবিক প্রেষণা : 

ব্যক্তির জৈবিক চাহিদাগুলি থেকে যে প্রেষণার উদ্ভব হয় , তাকে জৈবিক প্রেষণা বলে । 

যেমন – ক্ষুধা , তৃষ্ণা , যৌন প্রেষণা , মাতৃত্ব ইত্যাদি । জৈবিক প্রেষণাকে সহজাত বা জন্মগত প্রেষণাও বলা হয়ে থাকে । প্রাণী মাত্রই ক্ষুধার তাড়না অনুভব করে । খাদ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে সেই তাড়নার পূরণ ঘটে । শরীরবিজ্ঞানী ক্যানন 1934 খ্রিস্টাব্দে গবেষণার সাহায্যে প্রমাণ করেন , পাকস্থলীর সংকোচনের সঙ্গে ক্ষুধা অনুভূতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে । মা তাঁর শিশুকে আদর , স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে লালন পালন করেন । এইরূপ তাগিদকে মাতৃত্ব বলে । 

ব্যক্তিগত প্রেষণা : 

মানুষের আত্মসচেতনতাকে কেন্দ্র করে যেসকল মানসিক চাহিদা দেখা যায় , এর ফলে যে প্রেষণার সৃষ্টি হয় , তাকে ব্যক্তিগত প্রেষণা বলে । যেমন – আত্মশ্রদ্ধার প্রেষণা , আত্মপ্রকাশের প্রেষণা ইত্যাদি ।

সামাজিক প্রেষণা : 

সামাজিক চাহিদার ভিত্তিতে যে প্রেষণার সৃষ্টি হয় , তাকে সামাজিক প্রেষণা বলে । যেমন – নিরাপত্তা , ভালোবাসা , পারস্পরিক ক্রিয়া ইত্যাদি । 

মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন , মানুষের মধ্যে কতকগুলি সামাজিক চাহিদা থাকে । এই চাহিদাগুলির পরিতৃপ্তির মাধ্যমে সুস্থভাবে সামাজিক জীবন অতিবাহিত করা সম্ভব হয় । 

সুতরাং , প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে এই তিন ধরনের প্রেষণা লক্ষ করা যায় । শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে অধিক প্রেষণ সৃষ্টি করা সম্ভব হয় । এই সকল প্রেষণার মধ্যে কোনো কোনো প্রেষণা ক্ষণস্থায়ী আবার কোনো কোনো প্রেষণা দীর্ঘস্থায়ী , এমনকি সারাজীবন ধরে মানুষের কর্মস্পৃহা জোগান দিয়ে থাকে ।

error: Content is protected !!