প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কি
Contents
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কি
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা হল শিক্ষার সেই স্তর যেখানে শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ ঘটে এবং তাকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের উপযোগী করে তোলা হয় । অতীতে শিক্ষার প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে সাধারণত জন্মের পর থেকে বিদ্যালয়ে ভরতি হওয়ার আগে পর্যন্ত শিশুকে পরিবারের মধ্যেই যে শিক্ষাদান করা হত তা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষারই নামান্তর ।
বর্তমানে , নিয়ন্ত্রিত বা প্রথাগত প্রাথমিক শিক্ষা শুরুর আগের স্তরকে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা বলে । এই শিক্ষা মোটামুটি ভাবে দু-বছর বয়সে শুরু হয় এবং ছয় বছর বয়সের আগে শেষ হয় । প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন শ্রেণি হল নার্সারি , কেজি ওয়ান , কেজি টু , কেজি থ্রি কিংবা ইনফ্যান্ট ওয়ান , ইনফ্যান্ট টু , ইনফ্যান্ট থ্রি বা প্রিপেরেটারি ওয়ান , প্রিপেরেটারি টু , প্রিপেরেটারি থ্রি ইত্যাদি ।
কোঠারি কমিশনের মতে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য
কোঠারি কমিশন প্রাপ্রাথমিক শিক্ষার যেসব উদ্দেশ্য স্থির করেছেন সেগুলি হল—
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গঠন :
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিশুদের মধ্যে সু-অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করা । ছোটো থেকে সু-অভ্যাস গড়ে উঠলে , ভাবী জীবনে তা চরিত্র গঠনে সহায়ক হয় ।
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা :
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার আর একটি উদ্দেশ্য হল শিশুদের মধ্যে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা । সমাজে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে হলে প্রয়োজন বিভিন্ন প্রকার সামাজিক গুণের যথাযথ বিকাশ ।
প্রাক্ষোভিক পরিণমনে সাহায্য :
শৈশবে শিশু তার রাগ , ভয় , হিংসা প্রভৃতি মানসিক আবেগগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না । প্রাক প্রাথমিক স্তরে শিশুকে তার এই সমস্ত আবেগকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা দেওয়া শিক্ষক শিক্ষিকার কর্তব্য । পাশাপাশি শিশুর প্রাক্ষোভিক পরিণমনে সাহায্য করা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য ।
ভাষার বিকাশ সাধন :
এই স্তরে শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভাষারও দ্রুত বিকাশ ঘটে । শিশু নতুন নতুন শব্দ ব্যবহার করতে শেখে , বাক্য গঠন করতে শেখে । তাই এই স্তরের শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিশুকে শব্দের নির্ভুল উচ্চারণে এবং শব্দের ও ভাষার যথাযথ ব্যবহারে সহায়তা করা ।
সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটানো :
শিশুর মধ্যে সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটানো প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের আর একটি বিশেষ লক্ষ্য । নানারকম কাজকর্মের মধ্য দিয়ে শিশুর সৌন্দর্যবোধের বিকাশ ঘটলে পরিবেশকে সে সুন্দরভাবে দেখতে শিখবে ।
শৃঙ্খলাবোধের বিকাশ সাধন :
শৈশবে শিশুর আচরণগুলি অসংযত এবং বিশৃঙ্খল অবস্থায় থাকে । তাই প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের উদ্দেশ্য হল শিশুর মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ গড়ে তোলা । তবে মনে রাখতে হবে , শিশুর ওপর বাইরে থেকে শৃঙ্খলা চাপিয়ে দেওয়া এই শিক্ষার উদ্দেশ্য নয় । বরং শিশুর মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শৃঙ্খলাবোধ জাগানোই এই শিক্ষার লক্ষ্য ।
আত্মপ্রকাশে সহায়তা :
শিশুর স্বাধীন চিন্তা এবং সৃজনশীল ক্ষমতার বিকাশের মাধ্যমে তাকে আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দেওয়া প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার আর একটি বিশেষ লক্ষ্য ।
কৌতূহলের বিকাশ ঘটানো :
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল শিশুদের মধ্যে কৌতূহল প্রবৃত্তির বিকাশ ঘটানো ।
দৈহিক বিকাশ সাধন :
প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল শিশুর দৈহিক বিকাশ । সেই কারণে প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে এমন সব দৈহিক সঞ্চালনমূলক কাজকর্মকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে , যাতে শিশুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও ইন্দ্রিয় সুপরিণত এবং শক্তিশালী হয় ।
ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় , প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর তথা শিশুর সর্বাঙ্গীণ এবং যথাযথ বিকাশে সহায়তা করা । শিশুর জন্মগত প্রবণতার ভিত্তিতে তাকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সংগতি বিধানের উপযোগী করে গড়ে তোলা এই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য ।