কিন্ডারগার্টেন বলতে কী বোঝায়
Contents
কিন্ডারগার্টেন বলতে কী বোঝায়
জার্মান শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল এর শিক্ষাদর্শ থেকেই কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ের উদ্ভব হয়েছে । ‘ কিন্ডারগার্টেন ’ একটি জার্মান শব্দ । এই শব্দটির অর্থ হল ‘ শিশু উদ্যান ‘ । অর্থাৎ এই ধরনের বিদ্যালয়ে ছোটো ছোটো ফুলের মতো শিশুরা শিক্ষক শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়ে ওঠে । সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সের শিশুরা এই বিদ্যালয়ে যায় । এইসব বিদ্যালয়ে ছড়া , গান , খেলাধুলা , উপহার প্রদান ও কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করা হয় ।
ফ্রয়েবেল মনে করতেন , শিশুরা খেলার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করতে ভালোবাসে । তাই কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ে গিফট এবং অকুপেশনের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয় । বহির্জগতের জ্ঞান ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে শিশুরা গ্রহণ করে । তাই দর্শন ও স্পর্শেন্দ্রিয়কে সতেজ রাখার জন্য তিনি নানা প্রকারের উপহার ( gift ) ও কাজের ( occupation ) ব্যবস্থা করেন ।
কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ের পাঠক্রম
পঠন :
এখানে শিশুর পঠনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় । শিশুর কাজে যাতে কোনো একঘেয়েমি না আসে এবং পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মায় , সেজন্য রঙিন ছবিওয়ালা বইয়ের সাহায্যে পড়ানো হয় ।
লিখন :
পঠনের পাশাপাশি লিখনেরও বিশেষ দরকার আছে বলে ফ্রয়েবেল মনে করতেন । সেজন্য এখানে লিখনের জন্য একাধিক বস্তু ব্যবহার করা হয় ।
অঙ্কন :
ফ্রয়েবেল অঙ্কন পদ্ধতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন । তিনি বলেছেন , অঙ্কনের মধ্য দিয়ে শিশুর সৃজনশীলতা এবং মনের ভাব প্রকাশ পায় । শুধু মনের ভাবই নয় , রঙের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিশু মনের সৃজনশীলতা এবং সৌন্দর্যবোধের বিকাশও ঘটে ।
প্রকৃতি পরিচয় :
ফ্রয়েবেল প্রকৃতি পরিচয়ের ( Nature study ) ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন । তিনি মনে করতেন , প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান শিশুর মধ্যে ঈশ্বরের অনুভূতি জাগাতে সাহায্য করবে । তাই প্রকৃতি পাঠকে তিনি পাঠক্রমে বিশেষ স্থান দিয়েছেন ।
নীতি শিক্ষা :
নীতি শিক্ষার কথা বলতে গিয়ে ফ্রয়েবেল বলেছেন যে , বিভিন্ন নীতি শিক্ষামূলক গল্পের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে নৈতিক বোধ জাগাতে হবে । প্রকৃতি পাঠের মধ্য দিয়েও শিশুর নীতিবোধ বিকশিত হয় ।
মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা :
মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ওপর ফ্রয়েবেল বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন , কারণ শিশু তার মনের ভাব একমাত্র মাতৃভাষার মাধ্যমেই প্রকাশ করে থাকে । তিনি পড়ার থেকে কথা বলার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন , কারণ কথা বলার মধ্য দিয়েই যোগাযোগ সম্পন্ন হয় ।
গণিত শিক্ষা :
ফ্রয়েবেল গণিত শিক্ষার ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন । তিনি বলেছেন , মানুষের বৌদ্ধিক শক্তিকে গণিত থেকে পৃথক করা যায় না , যেমন যায় না ধর্মকে মানুষের হৃদয় থেকে পৃথক করা ।
নান্দনিক বিষয় :
শিশুর নান্দনিকতার বিকাশ ঘটানোর জন্য নাচ , গান ইত্যাদি বিষয় এই পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয় । নার্সারি ছড়া , গান এবং মাদার প্লে কিন্ডারগার্টেনের পাঠক্রমে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ।
কায়িক শ্রম :
ফ্রয়েবেল খেলা ও কাজের মাধ্যমে কায়িক শ্রমকে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত এইভাবে ফ্রয়েবেল কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে শিশু শিক্ষার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন ।