বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা কাকে বলে
Contents
বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা কাকে বলে
যে শিক্ষা শিক্ষার্থীকে কোনো বিশেষ বৃত্তি সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে এবং পূর্বার্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োগ ক’রে সেই বৃত্তিকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম করে তোলে তাকেই বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা বলে ।
অথবা , যে শিক্ষা বিশেষ ধরণের বৃত্তিমুখী ও কারিগরি কাজ করার জন্য পরিকল্পিত মানব সম্পদ সৃষ্টিতে অংশ নেয় , সেই শিক্ষাকেই বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা বলে ।
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার গুরুত্ব
ব্যক্তির ভবিষ্যৎ জীবনের রুজি রোজগারের সঙ্গে এই শিক্ষা বিশেষভাবে জড়িত । উপযুক্ত জীবিকা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীকে বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষায় অংশ নিতে হয় । হার্টস্রোন এই প্রকার শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেছেন— “ Vocational education is an education of most effective kind , for lack of which , those who merely go to school , suffer all their lives “.
অর্থাৎ বৃত্তিমূলক শিক্ষা হল এমনই এক ধরনের কার্যকরী শিক্ষা যা গ্রহণ না করলে শিক্ষার্থীকে সারা জীবন দুঃখ ভোগ করতে হয় । বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বা উপযোগিতাগুলি নীচে আলোচনা করা হল :
শিক্ষার্থীকে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করে :
বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে হাতেকলমে কাজ করার সুযোগ করে দেয় , যার ফলে সে ওই বিশেষ বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে । ফলে ভবিষ্যৎ জীবনে সে ওই বিষয়ে চাকরি করতে পারে বা স্বনিযুক্ত কাজে যুক্ত হতে পারে । এককথায় এই ধরনের শিক্ষা গ্রহণের ফলে শিক্ষার্থী স্বনির্ভর হতে পারে ।
শিক্ষার্থীকে আর্থিক স্বচ্ছলতা দান করে :
এই শিক্ষা শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যৎ জীবনে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দিতে সাহায্য করে । এই শিক্ষা উৎপাদনের পরিমাণ ও গুণগত মান বৃদ্ধি করে । অধিক উৎপাদন কেবলমাত্র ব্যক্তির স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করে তাই নয় , সমাজ ও দেশের আর্থিক উন্নয়নেও সাহায্য করে ।
শ্রমের প্রতি মর্যাদা দানে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেয় :
বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীদের শ্রমের প্রতি মর্যাদা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে । সমাজের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে অভিযোজনে এবং নৈতিক চরিত্র গঠনেও এই প্রকার শিক্ষার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে ।
শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সাহায্য করে :
পুথিগত , নিরস সাধারণ শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক ক্লান্তি এনে দেয় । বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষায় ব্যাবহারিক এবং হাতেকলমে কাজ করার সুযোগ থাকায় তা সহজে একঘেয়ে হয়ে যায় না । এর ফলে শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে , মানসিক তৃপ্তি আসে ।
বৃত্তিশিক্ষা গ্রহণকালে অর্থ উপার্জনের সুযোগ করে দেয় :
অনেক ক্ষেত্রে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষা গ্রহণকালে কিছু অর্থও উপার্জন করা যায় । ওই অর্থ পড়ার খরচ চালাতে সাহায্য করে । সেইদিক থেকে এই প্রকার শিক্ষার উপযোগিতা সাধারণ শিক্ষার তুলনায় অনেক বেশি ।
ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থীদের জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভে সাহায্য করে :
ব্যতিক্রমী বা প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের জন্য বৃত্তিমূলক শিক্ষা বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় , তাদের মধ্যে অনেকেই সাধারণধর্মী শিক্ষায় খুব একটা পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে না । এর পরিবর্তে কোনো বিশেষ বৃত্তিমূলক শিক্ষা নিলে হাতেকলমে তারা কিছু উৎপাদন করতে পারে এবং অর্থ উপার্জনে সক্ষম হয়ে ওঠে ।
কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে :
বর্তমানে অত্যধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিজ্ঞান ও শিল্পের দ্রুত উন্নয়নের ফলে সাধারণধর্মী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে রুজি রোজগারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে । তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি ।
অন্যদিকে বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত যুবক যুবতীদের চাকরির বাজার অপেক্ষাকৃত ভালো । দক্ষ ব্যক্তির চাকরির কোনো অভাব নেই । উপরন্তু চাকরি না পেলেও ব্যক্তি নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করতে পারে । বেকারত্বের জ্বালা তাকে ভোগ করতে হয় না ।
জাতির উন্নয়নের সাহায্য করে :
বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা জাতির উন্নয়নে সাহায্য করে । দেশ ও জাতির উন্নয়নে শিল্পের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি । শিল্পের জন্য প্রয়োজন দক্ষ কারিগরের । বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমেই দক্ষ কারিগর তৈরি করা সম্ভব । ওপরের আলোচনা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে , বৃত্তিমূলক , কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষার উপযোগিতা আজকের দিনে বিশেষ ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ।