বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার উদ্দেশ্য
Contents
বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার উদ্দেশ্য
আধুনিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের জন্য পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করা । আবার ভারতীয় শিক্ষা কমিশনের ( ১৯৬৪-৬৬ ) রিপোর্টে বলা হয়েছে— “ Education should be developed as to increase productivity ” অর্থাৎ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে হবে । ভারতীয় শিক্ষা কমিশনে ( ১৯৬৪-৬৬ ) বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার যে উদ্দেশ্যগুলির কথা বলা হয়েছে তা নীচে আলোচনা করা হল :
উৎপাদনশীলতা
বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের একটি উৎপাদনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত করে সমাজ ও দেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা ।
অর্থনৈতিক নিরাপত্তা
বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীকে ভবিষ্যৎ জীবনে জীবিকা অর্জনের উপযোগী করে গড়ে তোলে । শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আনতে সাহায্য করে ।
জাতীয় আয় বৃদ্ধি
বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা যেহেতু উৎপাদন ভিত্তিক শিক্ষা , তাই এটি জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও দেশের উন্নয়নে সহায়তা করে ।
স্বনির্ভরতা
বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিটি শিক্ষার্থীকে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করে । কারণ এই শিক্ষার ফলে শিক্ষার্থী হয় কোনো চাকরির সুযোগ পায় নয়তো স্ব-নিযুক্ত কাজে যুক্ত হতে পারে ।
বিশেষ জ্ঞান
বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিকে কোনো বিশেষ বৃত্তি বা পেশা সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান সরবরাহ করা এবং উক্ত বৃত্তি ও পেশায় দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা ।
বিশেষজ্ঞ সৃষ্টি
বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার আর একটি উদ্দেশ্য হল বিশেষজ্ঞ সৃষ্টি করা । এই শিক্ষায় শিক্ষার্থীকে এমন কিছু জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করা হয় যার দ্বারা সে ভবিষ্যতে সেই নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করতে পারে ।
সমাজ ও দেশের চাহিদা পূরণ
এই শিক্ষার উদ্দেশ্য হল ব্যক্তি , সমাজ ও দেশের উন্নয়নের চাহিদা পূরণ করা । বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনশীল কাজের মাধ্যমে সমাজ ও দেশকে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে ।
শিক্ষার্থীর আগ্রহ , প্রবণতা ও বিশেষ ক্ষমতাকে কাজে লাগানো
বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীর বিশেষ ক্ষমতা , আগ্রহ ও প্রবণতাকে কাজে লাগানো । বিভিন্ন ধরনের বৃত্তির মধ্য থেকে শিক্ষার্থীর বিশেষ ক্ষমতা , আগ্রহ ও প্রবণতা অনুযায়ী বৃত্তি নির্ধারণ করে শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে ।
শ্রমের প্রতি মর্যাদা দান
বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল শ্রমের প্রতি মর্যাদা দান , কোনো কাজ যে ছোটো নয় , সব কাজেরই যে গুরুত্ব আছে এই বোধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাগিয়ে তোলা এই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য ।
শিক্ষার বৃত্তিমূলক লক্ষ্যকে বাস্তব রূপ দেওয়া
বর্তমানে শিক্ষার বৃত্তিমূলক লক্ষ্যকে সকলেই স্বীকার করে নিয়েছেন । এই লক্ষ্য পূরণে শিক্ষার্থীদের সামর্থ্য , প্রবণতা ও আগ্রহ বিচার করা হয় এবং উপযুক্ত বৃত্তির দিকে লক্ষ্য রেখে শিক্ষা দেওয়া হয় ।
ওপরের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করলে দেখা যায় , বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের বৃত্তির মধ্য থেকে নির্দিষ্ট বৃত্তিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে নির্দিষ্ট পেশার উপযুক্ত করে তোলা এবং তাদের আর্থিক দিক দিয়ে স্বনির্ভর করা । একইসঙ্গে দেশের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যায় এই শিক্ষা । প্রশিক্ষিত মানব সম্পদের জোগান দেওয়া বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষার লক্ষ্য ।