ইতিহাস

ভারতে শিল্পোৎপাদনে শুল্ক সংরক্ষণ নীতি

Contents

ভারতে শিল্পোৎপাদনে শুল্ক সংরক্ষণ নীতি

british1 1
শুল্ক সংরক্ষণ নীতি

ভারতীয় শিল্পপতি ও জাতীয়তাবাদীদের চাপে ১৯২০ থেকে ১৯৩০ খ্রি. মধ্যে ব্রিটিশ সরকার বিদেশি পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযােগিতায় বিপন্ন দেশীয় শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করে । ব্রিটিশ সরকার কখনো – কখনাে বিদেশি শিল্পদ্রবের ওপর আমদানি শুল্ক ধার্য করে কিংবা দেশীয় শিল্পকে কিছু রক্ষামূলক শুল্কের সুবিধা দিয়ে সংরক্ষিত শিল্পনীতি গ্রহণ করে । এই ব্যবস্থা শুল্ক সংরক্ষণ নীতি নামে পরিচিত ।

শিল্প কমিশন গঠন

ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক অর্থনৈতিক পরিকাঠামােয় বিদেশি পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযােগিতার হাত থেকে দেশীয় শিল্পগুলিকে রক্ষা করতে ভারতীয় শিল্পপতি ও জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ শুল্ক  সংরক্ষণ  নীতি প্রয়ােগের দাবি বহুদিন ধরে জানিয়ে আসছিলেন । এরই প্রেক্ষিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে স্যার টমাস হল্যান্ডের নেতৃত্বে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে সরকার একটি ‘ শিল্প কমিশন ’ গঠন করে ।

শিল্প কমিশনের সুপারিশ

কমিশনের সুপারিশ অনুসারে —

  1. ১৯২০ থেকে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এবং‌ পরেও সরকার দেশীয় শিল্পের বিকাশের পথে উদ্ভূত প্রতিবন্ধকতাগুলি দূর করতে সংরক্ষিত শিল্পনীতি গ্রহণ করে।
  2. লােহা , ইস্পাত , কাগজ , চিনি , সুতাে , লবণ , দেশলাই ইত্যাদি দ্রব্যের ওপর আমদানি শুল্ক আরােপ করা হয় ।
  3. শুল্কের হার প্রথমে ৩.৫ থেকে ৭.৫ শতাংশ এবং পরে ১১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয় ।
  4. কেন্দ্র ও প্রদেশগুলিতে আলাদা আলাদা শিল্প বিভাগ গঠন করা হয় , যাতে কেন্দ্র ও প্রদেশগুলিতে শিল্পের ব্যাপারে আলাদা আলাদা নীতি কার্যকারী করা যায় ।
  5. বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয়ে আরও বেশি সংখ্যক চাকরির সুযােগ বাড়ানাে এবং  যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ব্যবস্থা গৃহীত হয় ।

শুল্ক সংরক্ষণ নীতি এর ফলাফল

  1. এই নীতি গ্রহণের ফলে ভারতীয় শিল্পে স্বচ্ছলতা ফিরে আসে । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে যেখানে ভারতে প্রয়ােজনীয় বস্ত্রের মাত্র ২৮ শতাংশ ভারতীয় মিলগুলিতে উৎপন্ন হত , সেখানে যুদ্ধের পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬১ শতাংশে ।
  2. ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতের লৌহ – ইস্পাত শিল্প ৩৩ শতাংশ হারে রক্ষামূলক শুল্কের সুবিধা লাভ করে এবং টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি’র যথেষ্ট সম্প্রসারণ ঘটে । এইভাবে শুল্ক সংরক্ষণের ফলে ওই সময় ভারতীয় বিভিন্ন শিল্পের প্রভূত উন্নতি হয় ।
  3. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর চটকল , লৌহ ইস্পাত শিল্প , চা বাগান , ব্যাংকিং প্রভৃতি ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে ভারতীয় পুঁজির অনুপ্রবেশ ঘটেছিল ।

উপসংহার

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিদেশি শিল্পোদ্যোগীরা দেশীয় শিল্পের বাজারকে পুনরায় গ্রাস করতে উদ্যত হয় । তখন সরকারি তরফে ব্রিটিশ বাধ্য হয়ে যে শুল্ক সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করে তাতে দেশীয় শিল্পোদ্যোগীরা অনেক সহজভাবে শিল্প পরিকাঠামাের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভারতে শিল্পের প্রসার ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!