ভারতে ব্যাহত দৃষ্টি সম্পন্ন শিশুদের বর্তমান অবস্থা 

ভারতে ব্যাহত দৃষ্টি সম্পন্ন শিশুদের বর্তমান অবস্থা 

আমাদের দেশে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সূত্রপাত করেন সেবাধর্মে ব্রতী মিশনারিরা । তাঁরা সর্বপ্রথম ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে অমৃতসর শহরে দৃষ্টিহীনদের জন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন । ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে দেরাদুনের রায়পুরে স্থানান্তরিত করা হয় ।

বর্তমানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আমাদের দেশের দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের জন্য প্রতিষ্ঠিত সর্বাপেক্ষা বৃহৎ বিদ্যালয় । বর্তমানে এটির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকার হাতে নিয়েছে । এই বিদ্যালয়টি ছাড়াও দক্ষিণ ভারতে একই সময়ে আরও দু-একটি ‘ ব্লাইন্ড স্কুল ‘ গড়ে ওঠে । 

পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার বেহালায় ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ ব্লাইন্ড স্কুল ‘ । অ্যানা মিলার্ডের প্রচেষ্টায় ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে দাদার এর ব্লাইন্ড স্কুলটি স্থাপিত হয় । পরবর্তীকালে এগুলিতে সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয় । ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু করে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয় ৩৪ টি ব্লাইন্ড স্কুল । স্বাধীনতার ঠিক পরে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আরও ২৬ টি ব্লাইন্ড স্কুল গড়ে তোলা হয় । সব মিলিয়ে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ব্লাইন্ড স্কুলের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৬০ এ । বর্তমানে ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে ব্লাইন্ড স্কুল ও ওই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৩৫ থেকে ১৪০ এর মধ্যে । 

ভারতে দৃষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা ঠিক কত তা সঠিক ভাবে সমীক্ষা করা হয়নি । নমুনা সমীক্ষা থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে বলা যায় এদেশে দৃষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা চল্লিশ লক্ষের বেশি । এদের মধ্যে বিদ্যালয় যাওয়ার উপযোগী বয়সের ছেলেমেয়ে কমপক্ষে চার লক্ষ । বর্তমানে দেশে যে ক-টি অন্ধ বিদ্যালয় আছে , তাতে মোট পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ের পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে । 

অর্থাৎ ব্লাইন্ড স্কুলগুলিতে মাত্র ১ % দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়ের পাঠ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে । অবশিষ্ট ৯৯ % এর জন্য কোনো পরিকাঠামো নেই । তা ছাড়া যে বিদ্যালয়গুলি রয়েছে তার বেশির ভাগের পাঠক্রম প্রাথমিক স্তরেই শেষ । তারপর কিছু বৃত্তি শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে । রয়েছে কিছু সংগীত শিক্ষার ব্যবস্থা । কিন্তু উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা সব বিদ্যালয়ে নেই । 

পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায় । দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়গুলির অধিকাংশই স্বেচ্ছাব্রতী প্রতিষ্ঠানের । রাজ্য সরকার এক্ষেত্রে কিছু আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে । তবে , এই সাহায্য ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশ । এখানে শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থাও ঠিকমতো নেই । বছরে মাত্র ৫০ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিতে পারেন । আমাদের রাজ্যে নরেন্দ্রপুরে শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে । নরেন্দ্রপুরে ব্রেইল প্রেসও রয়েছে । বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে মফস্সল শহরেও দৃষ্টিহীনদের জন্য কয়েকটি বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে এবং সেখানে ব্রেইলের কাজও হচ্ছে । 

error: Content is protected !!