বিকলাঙ্গ শিশু কাকে বলে

বিকলাঙ্গ শিশু কাকে বলে

যেসব শিশুদের কোনো না কোনো শারীরিক বৈকল্য আছে তাদের বলা হয় বিকলাঙ্গ শিশু । কোনো না কোনো শারীরিক অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঠিক কার্যকারিতার অভাব এদের প্রতিবন্ধকতার কারণ । 

বিকলাঙ্গ শিশুদের শ্রেণিবিন্যাস 

বিকলাঙ্গ শিশুদের নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা – [ 1 ] চলাফেরায় অক্ষম , [ 2 ] শ্বাসযন্ত্রের ত্রুটি সম্পন্ন , [ 3 ] হৃদযন্ত্রে ত্রুটি সম্পন্ন এবং [ 4 ] মস্তিষ্কের ত্রুটি সম্পন্ন । 

বিকলাঙ্গ শিশুদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

বিকলাঙ্গ শিশুরা আমাদের সমাজেরই একটি অংশ । তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বিবেচনা করে তাদের জন্য বিশেষ ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত । বিকলাঙ্গ শিশুদের বিশেষ শিক্ষার জন্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের যুক্তি হল : 

[ 1 ] বিকলাঙ্গ শিশুরা তাদের অঙ্গ ঘটিত প্রতিকূলতার জন্য সাধারণ বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না । শ্রবণ জনিত ত্রুটির কারণে সাধারণ শ্রেণি শিখনের সময়ে তারা শিক্ষক শিক্ষিকার কথা শুনতেই পায় না । আর যারা দৃষ্টিহীন তারা সাধারণ শ্রেণি শিখনে শিক্ষক শিক্ষিকার ব্ল্যাকবোর্ডের ওপর লেখা বা বইয়ের লেখা দেখতেই পায় না । সেই জন্য তাদের বিশেষ ধরনের শিক্ষার দরকার হয় । 

[ 2 ] বিকলাঙ্গ শিশুরা খুবই আবেগপ্রবণ হয় । ফলে সাধারণ শ্রেণি শিখনের সময় তাদের আচার আচরণ দেখে স্বাভাবিক শিশুরা হাসাহাসি করলে তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা তৈরি হয় , তাদের আত্মবিশ্বাস কমতে থাকে । তাই তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন । বিশেষ শিক্ষা তাদের হীনম্মন্যতা থেকে মুক্তি দেয় এবং আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে । 

[ 3 ] বিকলাঙ্গ শিশুদের জন্য বিশেষ ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা করলে বিকলাঙ্গরা ভাবে সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং সংবেদনশীল । ফলে তারা শিক্ষায় আগ্রহী হয় এবং সমাজের প্রতি , দেশের প্রতি সম্ভব মতো কর্তব্য পালন করার চেষ্টা করে । 

[ 4 ] বিকলাঙ্গ শিশুদের ক্ষেত্রে এমন কিছু অসুবিধা দেখা যায় যার ফলে তাদের সাধারণ শ্রেণিকক্ষে সাধারণ নিয়মে শিক্ষাদান সম্ভব হয় না । যেমন সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন বা বোবা শিক্ষার্থীদের জন্য চাহিদা মতো শিক্ষার ব্যবস্থা করতে না পারলে , সাধারণ বিদ্যালয় শিক্ষা তাদের কোনো কাজে লাগে না । এই কারণেও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা করার দরকার হয় । 

[ 5 ] বিকলাঙ্গ শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাহিদা দেখা যায় । সেই সমস্ত চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার ব্যবস্থা করতে গেলে সাধারণ শ্রেণি শিক্ষণের পরিবর্তে তাদের উপযোগী বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন হয় । 

[ 6 ] সর্বোপরি , সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত যে কোনো শিক্ষক শিক্ষিকাকে দিয়ে বিকলাঙ্গ শিশুদের পড়ানোও সম্ভব নয় । এর জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও আন্তরিক শিক্ষক শিক্ষিকার প্রয়োজন হয় । ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় , প্রতিটি বিকলাঙ্গ শিশুর পৃথক পৃথক সমস্যা , চাহিদা , প্রবণতা প্রভৃতি বুঝে তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষার আয়োজন করা উচিত ।

error: Content is protected !!