ব্রেইল পদ্ধতি
ব্রেইল পদ্ধতি
বর্তমানে সারা বিশ্বে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য ব্রেইল পদ্ধতি চালু রয়েছে । এটি এক বিশেষ প্রকার স্পর্শ পদ্ধতি । ফরাসি দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি লুই ব্রেইল ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে এই বিশেষ পদ্ধতির প্রচলন করেন । পদ্ধতিটি পরবর্তীকালে আরও উন্নত করা হয় ।
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের শিক্ষামূলক বিজ্ঞান ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংস্থা ( UNESCO ) বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় ব্রেইল পদ্ধতির প্রবর্তন করেন । বর্তমানে বাংলা ভাষায় উন্নতমানের ব্রেইল লেখা হয় । ব্রেইল ব্যবস্থায় পুরু কার্ড বোর্ড বা কাগজের ওপর যে শক্ত জিনিস দিয়ে উঁচু উঁচু ডট বা বিন্দু দেওয়া হয় , একে বলা হয় ‘ স্টাইলাস ’ ।
উঁচু উঁচু ছয়টি বিন্দুকে বিভিন্ন ভাবে সাজিয়ে ব্রেইল লেখা হয় । বাঁদিক থেকে ডানদিকে ব্রেইল লেখা হয় । ব্রেইলকে হাতের স্পর্শের মাধ্যমে পড়তে হয় । বৈজ্ঞানিক সংকেত , গণিত , সংগীতের স্বরলিপি প্রভৃতি ব্রেইলের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় । এখানে একটি ব্রেইলের সংকেত দেখানো হল :

ব্রেইলের ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা থাকে । ব্রেইল খুব ভারী হয় । তা ছাড়া ব্রেইলের ক্ষেত্রে বইয়ের তুলনায় অনেক বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় । ব্রেইলে দক্ষতা অর্জন করতে সময় বেশি লাগে । যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী ব্রেইল পাঠে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করে , তারা সর্বাধিক ৬০ টি শব্দ প্রতি মিনিটে পড়তে পারে । ব্রেইল পাঠে দক্ষতা অর্জন করার পর ছাত্রছাত্রীদের ব্রেইল লেখার শিক্ষাদান করা হয় । স্টাইলাসের সাহায্যে ছাত্রছাত্রীরা ব্রেইল লেখে ।
বর্তমানে সহজ উপায়ে দ্রুততার সঙ্গে ব্রেইল লেখার জন্য টাইপ মেশিন ব্যবহৃত হয় । এই মেশিনে ৬ টি বোতাম থাকে । ওই বোতামগুলি ৬ টি বিন্দুকে নির্দেশ করে । সুদক্ষ ব্রেইল লেখকরা প্রতি মিনিটে প্রায় ৬০ টি শব্দ টাইপ করতে পারে । ব্রেইল হাতেও লেখা যায় । বিশেষ ধরনের শ্লেট ও শক্ত স্টাইলাস দিয়ে লিখতে হয় । ইদানীং ছোটো আকারের ব্রেইল স্লেট ব্যবহার করা হয় । ওই ব্রেইল স্লেট পকেটেও রাখা যায় ।
বর্তমানে কম্পিউটারের সাহায্যেও ব্রেইল লেখার ব্যবস্থা হয়েছে । যেহেতু দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের ব্রেইলের মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হয় , তাই তাদের শিক্ষণ পদ্ধতি মূলত ব্ৰেইল ব্যবহারের কৌশলের ওপর নির্ভরশীল ।