প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান

Contents

প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতি ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান অবিস্মরণীয় । বিদ্যাসাগরের কালে প্রাথমিক শিক্ষা ছিল অত্যন্ত অবহেলিত । তিনি দেশজ বিদ্যালয়গুলির শোচনীয় অবস্থা উপলব্ধি করে , সেগুলির সংস্কারের জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করেন । ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে তিনি একটি প্রতিবেদন পেশ করেন । তৎকালীন বড়োলাট লর্ড ডালহৌসি বিদ্যাসাগরের প্রতিবেদনের সুপারিশগুলি সমর্থন করেন ।

বিদ্যাসাগর প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশের জন্য যেসব সুপারিশ করেছিলেন , তার মূল বিষয়গুলি হল :  

শিক্ষার মাধ্যম : 

বিদ্যাসাগর প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষাকে ব্যবহার করার সপক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন । 

পাঠ্য বিষয় : 

প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে পড়াশোনার জন্য বিদ্যাসাগর সাধারণ গাণিতিক হিসাব , ভূগোল , ইতিহাস , জীবন বৃত্তান্ত , জ্যামিতি , প্রকৃতি বিজ্ঞান , নীতিবিজ্ঞান , শারীরতত্ত্ব , রাষ্ট্রবিজ্ঞান , প্রারম্ভিক লেখাপড়া ইত্যাদি বিষয়ের উল্লেখ করেন । 

মডেল স্কুল স্থাপন : 

বিদ্যাসাগর প্রত্যেকটি জেলায় ৩ থেকে ৫ শ্রেণি যুক্ত মডেল স্কুল স্থাপনের সুপারিশ করেন । তিনি ওই সমস্ত বিদ্যালয়ে কমপক্ষে একজন প্রধান শিক্ষক ও দুজন সহকারী শিক্ষক নিযুক্ত করার কথা বলেন । 

পরিদর্শন ব্যবস্থা : 

বিদ্যালয়গুলির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রতি দুটি জেলার জন্য একজন করে পরিদর্শক নিয়োগ করার সুপারিশ করেন তিনি । তিনি আরও উল্লেখ করেন যে , সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ অবৈতনিকভাবে পরিদর্শকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন । 

প্রশাসনিক ব্যবস্থা : 

বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের ক্ষেত্রে যাতে সুবিধা হয় সেজন্য বিদ্যাসাগর সার্কেল প্রথা চালু করার সুপারিশ করেন । 

শিক্ষক শিক্ষণের ব্যবস্থা : 

বিদ্যাসাগর লক্ষ করেছিলেন , দেশে ভালো শিক্ষকের খুবই অভাব । সেই কারণে নর্মাল স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে তিনি শিক্ষক শিক্ষণের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেন । 

বিদ্যাসাগরের এই সমস্ত সুপারিশ বড়োলাট লর্ড ডালহৌসি এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নর মি. হ্যালিডে অনুমোদন করেন । বর্ধমান , হুগলি , নদিয়া ও মেদিনীপুর জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে কিছুটা দূরে মডেল স্কুল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । স্থির করা হয় , এই চারটি জেলার জন্য দুজন পরিদর্শক নিযুক্ত হবেন । ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষক-শিক্ষণের জন্য একটি নর্মাল স্কুল স্থাপন করা হয় , অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন অক্ষয় কুমার দত্ত । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ওই সময় দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যালয় পরিদর্শকের দায়িত্ব নেন । বিদ্যাসাগরের চেষ্টায় বর্ধমান , হুগলি , নদিয়া এবং মেদিনীপুর জেলার প্রত্যেকটিতে ৫ টি করে মোট ২০ টি মডেল স্কুল খোলা হয় ।

error: Content is protected !!