ভারতীয় শিল্পে শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব ও বিকাশ
Contents
ভারতীয় শিল্পে শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব ও বিকাশ
উনিশ শতকের শেষার্ধে শিল্পায়নের ফলে ভারতীয় সমাজে দুটি শ্রেণির উত্থান ঘটে যথা — পুঁজিপতি ও শ্রমিকশ্রেণী । ভারতে শিল্পায়ন দেরিতে শুরু হওয়ার জন্য শিল্পকেন্দ্রিক শ্রমিকদের উত্থানও ধীরগতিতে হয়েছিল । ভারতে শিল্পায়ন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে দৈহিক শ্রমের প্রয়ােজন হয় । ওইসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত শ্রমজীবী মানুষরাই শিল্প – শ্রমিক নামে পরিচিত । ভারতের বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে নিয়ােজিত শ্রমিকদের আর্থিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত শােচনীয় ।

ভারতীয় শিল্পে শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব
আসাম ও উত্তর বাংলার চা – বাগিচায় , বাংলার পাটশিল্পে , বিহার ও বাংলার কয়লা খনিতে , দক্ষিণ ভারতের কফি – বাগিচায় , পশ্চিম ভারতের বস্ত্র কারখানায় কী বিদেশি , কী স্বদেশি উভয় পুঁজিপতি সম্প্রদায়ই শ্রমজীবীদের নিয়ােগ করত । উল্লেখযােগ্য যে , কলকাতা তথা বাংলা দেশের শ্রমজীবী মানুষের একটা বড়াে অংশই ছিল ভিন রাজ্যের । এরা আসত উত্তরপ্রদেশ , বিহার ও মাদ্রাজ অঞ্চল থেকে । অন্যদিকে গুজরাত ও বােম্বাই – এর শ্রমজীবীরা অধিকাংশই ছিল স্থানীয় বাসিন্দা । এইভাবেই ভারতে শিল্প – শ্রমিকের উদ্ভব হয় ।
ভারতীয় শিল্পে শ্রমিক শ্রেণীর বিকাশ
শিল্প প্রসারের ধীর গতি :
ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামােয় ভারতে শিল্প প্রসারের গতি ধীর ছিল বলে শ্রমিক শ্রেণির বিকাশের গতিও ছিল খুব শ্লথ । একটি সমীক্ষায় দেখা যায় , ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জনসংখ্যা যেখানে ছিল ৩০ কোটি ৩০ লক্ষ , সেখানে সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ছিল মাত্র ২১ লক্ষ ।
পেশাগত পরিবর্তন :
গ্রামের মানুষ তাদের চিরাচরিত পেশা কৃষি ও হস্ত শিল্পকে ছেড়ে কর্ম সংস্থানের জন্য শহরের কলকারখান ভিড় জমায় । প্রথম দিকে ঠিকেদাররাই শ্রমিকদের গ্রাম থেকে শহরে আনত । এভাবেই শ্রমিক শ্রেণি চুক্তির মাধ্যমে ঠিকাদারদের হয়ে শ্রম বিনিময়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করত ।
সচেতনতা :
শ্রমিকদের, শহরে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ও ঘিঞ্জি পরিবেশে বাস করত হত। এছাড়া শ্রমিকদের দিনে পনেরো থেকে আঠারো ঘন্টা কাজ করানো হতো। এইসব সমস্যা শ্রমিকশ্রেণীকে সচেতন করে তোলে।
শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিবাদ আন্দোলন
পুঁজিপতিদের শোষণ ভারতীয় শ্রমিকরা একেবারেই মুখ বুজে সহ্য করেনি। ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনেক আগেই তারা প্রতিবাদ জানাতে ধর্মঘটে শামিল হয়েছিল। এ ব্যাপারে ভারতের প্রথম শ্রমিক ধর্মঘটটির কথা উল্লেখ করতেই হয়। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের এই ধর্মঘটে হাওড়া রেল স্টেশনের শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে শামিল হয়েছিল। তবে ঐ সমস্ত বিক্ষোভ যেমন ছিল অসংগঠিত, তেমনি ছিল আকস্মিক। যন্ত্রপাতি ভেঙে ফেলা, কথা না শুনে দল বেঁধে কাজ ছেড়ে চলে যাওয়া ইত্যাদি ছিল তাদের প্রতিবাদের ধরণ। পরবর্তীকালে স্বদেশী আন্দোলনের সময়ে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রেও একটা জোয়ার এসেছিল ।