ইতিহাস

ভারতে দেশীয় পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্পের বিকাশ

Contents

ভারতে দেশীয় পুঁজি বিনিয়োগের মাধ্যমে শিল্পের বিকাশ

ঔপনিবেশিক যুগে ভারতের আধুনিক শিল্পের যে বিকাশ ঘটে তা অনেকটা ব্যাপ্তি লাভ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়কাল থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত যেসব শিল্পে দেশীয় পুঁজির বিনিয়োগ শুরু হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম নাম ছিল বস্ত্র , পাট , চা , কয়লা , লৌহ- ইস্পাত , ইঞ্জিনিয়ারিং ও রাসায়নিক শিল্প ।

75226666 kruppessen1914 houlton
দেশীয় পুঁজিতে শিল্প

ভারতে দেশীয় পুঁজিতে শিল্পের বিকাশ

বস্ত্র শিল্প :

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত বস্ত্র শিল্পেই সবথেকে বেশি দেশীয় পুঁজির বিনিয়ােগ ঘটেছিল । পারসি শিল্পপতি  কাওয়াসজি নানাভাই দাভর ( ১৮১৪ – ১৮৭৩ খ্রি. ) ১৮৫৩ খ্রি. ভারতের প্রথম বৃহত্তর বস্ত্র মিল বােম্বে স্পিনিং অ্যান্ড উইভিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর একে একে আমেদাবাদ , শােলাপুর , নাগপুর ,  সুরাট,কানপুরসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কাপড়ের কল গড়ে উঠতে শুরু করে ।

  • পারসি শিল্পপতি জামশেদজি টাটার উদ্যোগে নাগপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় এম্প্রেস মিল ( ১৮৭৭ খ্রি. )।
  • রণছােড়লাল ছেপটলাল আমেদাবাদে একটি কাপড়ের কল প্রতিষ্ঠা করেন (১৮৫৯খ্রি.)।

পাট শিল্প :

১৮৫৫ খ্রি.  হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে রিষড়াতে সর্বপ্রথম যে পাটকলটি গড়ে ওঠে তার অংশীদার ছিলেন বাঙালি শিল্পপতি শ‍্যামসুন্দর সেন । দেশীয় উদ্যোগে এই সময় হুগলি নদীর দুই তীরে প্রচুর পাটকল গড়ে ওঠে । ১৮৮২ খ্রি. সারা ভারতে মোট ২০টি পাটকলের মধ্যে ১৮টি ছিল কলকাতার নিকটবর্তী অঞ্চল গুলিতে অবস্থিত। এগুলির বেশ কয়েকটির মালিক ছিলেন ভারতীয় শিল্পপতিরা।

চা শিল্প :

চা শিল্পেও ভারতীয় পুঁজির বিনিয়োগ শুরু হয় । আসাম টি কোম্পানিতে পরবর্তী সময় ব্রিটিশের পাশাপাশি ভারতীয় পুঁজিরও বিনিয়ােগ শুরু হয় । সম্পূর্ণ দেশীয় উদ্যোগে জয়চাঁদ সান্যাল জলপাইগুড়ি টি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন ( ১৮৭৮ খ্রি. ) । এর পাশাপাশি মােতিলাল শীল , প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর , মীর্জা ইস্পাহানি প্রমুখ চা শিল্পে পুঁজি বিনিয়ােগ করেন ।

কয়লা শিল্প :

কয়লা শিল্পে দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত কার অ্যান্ড টেগাের কোম্পানি উল্লেখযােগ্য ভূমিকা নেয় । তাঁর এই উদ্যোগের পরেই রানীগঞ্জ , আসানসােল , বরাকর , সীতারামপুর প্রভৃতি অঞ্চলে দেশীয় উদ্যোগে কয়লা খনিতে পুঁজি বিনিয়ােগ শুরু হয় । ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে , দেশীয় উদ্যোগে বর্ধমানের রানিগঞ্জ , আসানসােল , বরাকর , অন্ডাল সহ বিভিন্ন স্থানে চল্লিশটি এবং মানভুম , ছােটোনাগপুর জেলায় বাষট্টিটি ছােটো কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয় । দেশীয় মালিকানাধীন এইসব কয়লাখনি নিয়ে ইন্ডিয়ান মাইনিং ফেডারেশন গঠিত হয় ।

লৌহ ইস্পাত শিল্প :

পারসি শিল্পপতি জামশেদজি টাটা ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন টাটা আয়রন আন্ড স্টিল কোম্পানি ( TISCO) । নওয়াল কিশাের গড়ে তােলেন লক্ষ্মৌ আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি

ইঞ্জিনিয়ারিং ও রাসায়নিক শিল্প :

ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার মার্টিনের সঙ্গে মিলিত হয়ে বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার রাজেন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায় ১৮৯২ খ্রি. প্রতিষ্ঠা করেন মার্টিন আ্যন্ড কোম্পানি । এই কোম্পানির প্রচেষ্টাতেই প্রথম হাওড়া থেকে আমতা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে (১৮৯৭ খ্রি.) । এছাড়া হাওড়া থেকে শিয়াখালা লাইট রেলপথ (১৮৯৮ খ্রি.) গড়ে তোলে এই কোম্পানি। মাদ্রাজে চিদাম্বরম পিল্লাই একটি জাহাজ নির্মাণ কারখানা গড়ে তোলেন (১৯১১খ্রি.)। রাসায়নিক শিল্পের ক্ষেত্রে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠা করেন বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস। এছাড়াও ড. নীলরতন সরকার জাতীয় সাবান কারখানা গড়ে তোলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!