সংবিধানের শিক্ষা সংক্রান্ত ধারা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের অভিমত

সংবিধানের শিক্ষা সংক্রান্ত ধারা সম্পর্কে কোঠারি কমিশনের অভিমত

সংবিধানের শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধারার মধ্যে কোঠারি কমিশন সংবিধানের নির্দেশক নীতির ৪৫ নং এবং ৪৬ নং ধারা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অভিমত প্রকাশ করে । 

সংবিধানের নির্দেশক নীতির ৪৫ নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছিল যে , ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে আগামী দশ বছরের মধ্যে ৬ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত সব ছেলেমেয়ের শিক্ষাকে সর্বজনীন , অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করতে হবে । এই নির্দেশ অনুসারে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই লক্ষ্যে পৌঁছোনোর কথা ছিল । কেন্দ্রীয় সরকার বাস্তবে তা করে উঠতে পারেনি । কোঠারি কমিশন এর কারণ অনুসন্ধান করেছে এবং জানিয়েছে যে জনসংখ্যার অত্যধিক চাপ , মানুষের আর্থিক দুরবস্থা , পিতা-মাতার নিরক্ষরতা প্রভৃতি কারণের জন্য লক্ষ্যে পৌঁছোনো যায়নি । 

প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন , বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করার উদ্দেশ্যে কমিশন কতকগুলি সুপারিশ করেছে । এই সুপারিশগুলি হল —– 

( i ) প্রত্যেক রাজ্য সরকারকে প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তারের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে , 

( ii ) প্রয়োজন মতো আর্থিক সাহায্য দিতে হবে , 

( iii ) অপচয় এবং অনুন্নয়ন বন্ধ করতে হবে , 

( iv ) প্রত্যেক শিশুর বসবাস অঞ্চলের মধ্যে বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে ; 

( v ) অভিভাবক-অভিভাবিকারা যাতে প্রথম শ্রেণিতে প্রতিটি শিশুকে ভরতি করেন আইনের মাধ্যমে তা সুনিশ্চিত করতে হবে । 

সংবিধানের নির্দেশক নীতির ৪৬ নং ধারায় অনগ্রসর সম্প্রদায় , বিশেষত তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের শিক্ষার সুপারিশ করা হয় । কোঠারি কমিশন লক্ষ করেছিল তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার যথাযথভাবে ঘটেনি । তাই এই বিষয়ে ইউ. এন. ধেবরের সভাপতিত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশগুলি কোঠারি কমিশন গ্রহণ করে । যেই সুপারিশগুলি হল : 

( i ) তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য আগেকার সব সুযোগ সুবিধা বলবৎ থাকবে । 

( ii ) যাযাবর ও আধা যাযাবর সম্প্রদায়ের জন্য আরও বেশি সুযোগ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে , 

( iii ) তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য বিদ্যালয় এবং ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা করতে হবে । এ ছাড়া 

( iv ) আবাসিক বিদ্যালয় নির্মাণ , বৃত্তি হিসেবে আর্থিক সাহায্য প্রদান , উপজাতিদের ভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আদিবাসীদের জীবনের উপযোগী শিক্ষার বিষয়বস্তু নির্বাচনের ব্যবস্থা নিতে কমিশন সুপারিশ করে । 

সংবিধানের ৪৪ নং ধারায় সারা ভারতে সকলের জন্য একই আইনের ব্যবস্থা করা হবে ও ৩০ নং ধারায় ভাষা ও ধর্মের জন্য শিক্ষায় বৈষম্য করা হবে না বলে উল্লেখ আছে । জোর দিয়ে বলা হয়েছে , ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংহতির জন্য যে কোনো বৈষম্য পরিহার করতে হবে ।

error: Content is protected !!