কম্পিউটার কি শিক্ষকের বিকল্প হতে পারে
Contents
কম্পিউটার কি শিক্ষকের বিকল্প হতে পারে
শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিগণ সকলেই স্বীকার করবেন যে , কম্পিউটারের ব্যবহার শিক্ষা জগতে এক বিপ্লবের সূচনা করেছে । শিক্ষার বিভিন্ন দিক , যেমন — পাঠক্রম প্রণয়ন , শিক্ষা-শিখন প্রক্রিয়া , মূল্যায়ন , শিক্ষা-প্রশাসন এবং ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার শিক্ষার কার্যক্রমকে আরও সরল , সার্থক ও নিখুঁত করে তুলেছে । ফলে কম্পিউটারের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । তবে এ সবই হল শিক্ষার কাজে কম্পিউটারের সহায়কের ভূমিকা । অতি বড়ো আশাবাদীও কম্পিউটারকে শিক্ষকের বিকল্প হিসেবে চিন্তা করতে পারেন না ।
কারণ , শিক্ষক হলেন মেদ-মজ্জা সমেত রক্ত-মাংসের একজন ব্যক্তি যাঁর মধ্যে আবেগ আছে , আছে অনুভূতি এবং তিনি একজন সংবেদনশীল মানুষ । অন্যদিকে যতই উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন হোক না কম্পিউটার হল একটি যন্ত্র । শিক্ষা একটি পরিসেবামূলক মানবিক কাজ । মানবিক কাজ মানুষের দ্বারাই করা সম্ভব । যন্ত্র তার বিকল্প হতে পারে না । কেন কম্পিউটার শিক্ষকের বিকল্প হতে পারে না তার কয়েকটি কারণ নীচে উল্লেখ করা হল ।
মানবিক মিথস্ক্রিয়ার অভাব
নির্ভুল প্রতিক্রিয়ার জন্য শিক্ষার্থী কম্পিউটারের কাছ থেকে উৎসাহ পায় । কিন্তু সঠিক উত্তর দিলে শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষার্থী যে প্রশংসা পায় আর তার মধ্যে যে মানবিক স্পর্শ থাকে তা কম্পিউটার দিতে পারে না । কম্পিউটারের উৎসাহদান যান্ত্রিক , যেখানে শিক্ষকের প্রশংসা বা তাঁর তৃপ্তির অভিব্যক্তি শিক্ষার্থীর মধ্যে অনির্বচনীয় আনন্দ নিয়ে আসে ।
যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা
কম্পিউটারের মধ্যে যে প্রোগামগুলি করা আছে তার বাইরে কম্পিউটারের সঙ্গে কোনো প্রতিক্রিয়া করা যায় না । শিক্ষকের ক্ষেত্রে এই সীমাবদ্ধতা নেই , তিনি প্রয়োজন মতো শ্রেণিকক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করে যোগাযোগের পথ রচনা করতে পারেন । শ্রেণিকক্ষে অনেক সময় অনেক শিক্ষার্থী ( বিশেষ করে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ) অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন করে বসে । অভিজ্ঞ শিক্ষক সেই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিয়ে ছাত্রের কৌতূহল নিবারণ করতে পারেন বা পরে ছাত্রের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করে ছাত্রের জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে পারেন ।
সংবেদনশীলতার অভাব
শিক্ষক শিক্ষার্থীর মানসিক বা প্রাক্ষোভিক অবস্থা অনুভব করে প্রয়োজন অনুযায়ী বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন । কম্পিউটারের পক্ষে তা সম্ভব নয় ।
শ্রেণিকক্ষের আবহাওয়া
শ্রেণিশিক্ষণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যে আবেগ ও অনুভূতির সঞ্চালন হয় এবং তার ফলে শ্রেণিকক্ষে যে হৃদ্যতাপূর্ণ আবহাওয়া গড়ে ওঠে কম্পিউটারের মাধ্যমে তা সম্ভব নয় । এই হৃদ্যতাপূর্ণ আবহাওয়া শ্রেণি শিক্ষণে বিশেষ কার্যকরী ।
শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে তথ্য
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত মিথস্ক্রিয়ার ফলে শিক্ষক শিক্ষার্থী সম্পর্কে এমন অনেক তথ্য জানতে পারেন যার শিক্ষাগত মূল্য অনেক বেশি । কম্পিউটারের পক্ষে সেইসব তথ্য জানা সম্ভব নয় । এই ধরনের তথ্য হল , শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের সম্পর্ক , শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীর দৃষ্টিভঙ্গি , সম্প্রতি শিক্ষার্থী বিশেষ কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে কিনা ইত্যাদি ।
রোল মডেল
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছে ‘ রোল মডেল ’ , শিক্ষার্থীরা শিক্ষককে অনুকরণ করে । শিক্ষকের আদর্শ ও মূল্যবোধ শিক্ষার্থীদের পথ দেখায় । শিক্ষককে তাই বন্ধু , দার্শনিক ও পথ প্রদর্শক বলে অভিহিত করা হয় । কম্পিউটার কখনও ‘ রোল মডেল ’ এর ভূমিকা নিতে পারে না ।
পরামর্শদাতা
শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন । শিক্ষা জীবনে শিক্ষার্থীকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় । শিক্ষক শিক্ষার্থীর সেই সমস্যা সমাধানে পরামর্শদাতার ভূমিকা গ্রহণ করেন । কম্পিউটারের পক্ষে যা সম্ভব নয় ।
চরিত্র গঠন
পাঠক্রমের সঞ্চালনের মধ্যেই শিক্ষকের দায়িত্ব শেষ হয় না । শিক্ষার্থীর চরিত্র গঠনের দায়িত্ব তাঁকে গ্রহণ করতে হয় , যা কম্পিউটারের পক্ষে সম্ভব নয় ।
সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি
শিক্ষকের অন্যতম দায়িত্ব হল সহপাঠক্রমিক কাজে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেওয়া । কম্পিউটার এ দায়িত্ব নিতে পারে না ।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছোনো যায় যে , কম্পিউটার শিক্ষককে বা শিক্ষার অন্যান্য কর্মসূচিতে সাহায্য করে মাত্র , শিক্ষকের বিকল্প তা কখনোই হতে পারে না ।