রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা
রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা
ভারতে অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং অনন্য ক্ষমতা হল স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা । স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার ক্ষেত্রগুলিতে রাজ্যপাল মন্ত্রীসভার সঙ্গে পরামর্শ করেন না । এসব ক্ষেত্রে তিনি স্ববিবেচনা অনুযায়ী চলতে পারেন । স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যায় না । সংবিধানের ষষ্ঠ তপশিলে উল্লিখিত কয়েকটি স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা হল—
1. অসমের রাজ্যপাল কর্তৃক খনিজ সম্পদের লাইসেন্স সংক্রান্ত রয়্যালটি বাবদ অসম সরকারের জেলা পরিষদকে প্রদেয় অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ ;
2. মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের রাজ্যপাল কর্তৃক রাজ্যের কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকার উন্নতির জন্য স্বতন্ত্র উন্নয়ন পর্ষদ গঠন ও পরিচালন :
3. নাগাল্যান্ডের রাজ্যপালের রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ দায়িত্ব পালন ;
4. সিকিমের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি সুনিশ্চিত করার জন্য সিকিম রাজ্যপালের বিশেষ দায়িত্ব পালন ইত্যাদি ।
সংবিধানের ষষ্ঠ তপশিলে উল্লিখিত এসব স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ছাড়া আরও অনেক বিষয়ে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের অবকাশ আছে । যথা—
i. মুখ্যমন্ত্রীর নিয়োগ ও অপসারণের বিষয়টি রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত । সংবিধানে এ কথা বলা হয়েছে যে , রাজ্যপালের সন্তুষ্টির উপর রাজ্যের মন্ত্রীদের কার্যকাল নির্ভরশীল । রাজ্য বিধানসভায় কোনো দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে রাজ্যপাল তার স্ববিবেচনা অনুযায়ী এমন কোনো সদস্যকে মুখ্যমন্ত্রী পদে নিয়োগ করতে পারেন যার পক্ষে অধিকাংশ সদস্যের সমর্থন আদায় করা সম্ভব ।
ii. বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষেত্রেও রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা রয়েছে ।
iii. রাজ্যের সাংবিধানিক অচলাবস্থা সম্পর্কিত রিপোর্টটি রাজ্যপাল মন্ত্রীসভাকে না জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন । এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা জারি হয়ে থাকে । রাজ্যপালের সুপারিশের ভিত্তিতে রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির বহু নজির ভারতের সাংবিধানিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ।
iv. রাজ্য বিধানসভার বিল সম্পর্কে কোনোরকম সিদ্ধান্ত না নিয়ে রাজ্যপাল তা রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দিতে পারেন ।