স্বদেশী আন্দোলনের তাৎপর্য / গুরুত্ব
Contents
স্বদেশী আন্দোলনের তাৎপর্য / গুরুত্ব
ভারতের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশি আন্দোলন এক স্মরণীয় অধ্যায় । সরকারি সাম্প্রদায়িক বিভেদ ও অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার জন্য এই আন্দোলন পরিপূর্ণভাবে সফল না হলেও জাতীয় ইতিহাসে এর বিশেষ গুরুত্ব আছে ।

স্বদেশী আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব
নবযুগের সূচনায় :
স্বদেশি আন্দোলন ছিল ভারতের জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে প্রথম পূর্ণাঙ্গ ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলন । স্বদেশি আন্দোলনের মধ্যেই প্রথম স্বরাজের আদর্শ উচ্চারিত হয় । এর মাধ্যমেই ভারত ইতিহাসে নবযুগ সূচিত হয় ।
কংগ্রেসের বিভাজনে :
এই আন্দোলন নীতিগত ক্ষেত্রে পরিবর্তন নিয়ে এসে জাতীয় কংগ্রেসকে ‘ নরম পন্থী ’ ও ‘ চরমপন্থী ’ দুটি সুস্পষ্ট ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছিল । ১৯০৭ – এর সুরাট অধিবেশনে এই বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয় ।
বঙ্গভঙ্গ রদে :
জাগ্রত জনমতের প্রবল চাপ উপেক্ষা করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে সরকার বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা রদ করতে বাধ্য হয় । তবে বাংলা প্রেসিডেন্সি তার আয়তন যেমন হারায় , তেমনি ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয় ( ১৯১১ খ্রি. ) ।
সর্বক্ষেত্রে আলোড়ন :
স্বদেশি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে স্বদেশি শিল্প , সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক জগতে যে উজ্জীবন ঘটেছিল , জাতীয় আন্দোলনের আর কোনাে পর্যায়ে তা দেখা যায়নি । সাহিত্য , বিজ্ঞান , শিল্পসহ প্রতিটি ক্ষেত্র এর ফলে সমৃদ্ধ হয় । পরবর্তীকালের জাতীয় আন্দোলন গড়ে তােলার অনুপ্রেরণা দেয় স্বদেশি যুগের কবিতা , গান ও নাটকগুলি ।
ভবিষ্যৎ সংগ্রামের পথনির্দেশে :
বঙ্গভঙ্গ রদ করার এই প্রয়াস শীঘ্রই ভারতে ইংরেজ শাসন অবসানের প্রচেষ্টায় রুপান্তরিত হয় । এর আগে আর কোনাে ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলন এত গতিশীল ও সংগ্রামশীল হতে দেখা যায়নি । জাতীয় নেতৃবৃন্দ এই রূপান্তরের মধ্যে দিয়েই ভবিষ্যৎ সংগ্রামের পথনির্দেশ পান ।
মর্লে মিন্টো সংস্কার প্রণয়নে :
আন্দোলনের স্বতঃস্ফূর্ততায় ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করে যে , ভারতীয়দের হাতে কিছু শাসনতান্ত্রিক অধিকার ছেড়ে দিতে হবে । ফলে প্রবর্তিত হয় ‘ মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন ’ ( ১৯০৯ খ্রি. ) ।
নিষ্ক্রিয় প্রতিরােধের ক্ষেত্রে :
এই আন্দোলনের নিষ্ক্রিয় প্রতিরােধের মন্ত্র পরবর্তীকালে গান্ধিজির অসহযােগ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ভারতব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে । এখানে প্রযুক্ত ‘ ধর্মঘট ’ গান্ধিজির আমলে ‘ হরতাল ‘ হয়ে দেখা দেয় ।
নারী সমাজের অংশ গ্রহণে :
বঙ্গভঙ্গের বর্বরােচিত সিদ্ধান্ত নারী চেতনার জাগরণ ঘটালে নারী সমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বদেশি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে । সরলাদেবী চৌধুরানি , অম্বুজা সুন্দরী দাশগুপ্ত , নগেন্দ্ৰবালা ঘােষ , লীলাবতী মিত্র , লাবণ্যপ্রভা দত্ত সহ অজস্র নারী বিদেশি দ্রব্য বর্জন ও স্বদেশি দ্রব্য ক্রয়ের পাশাপাশি অরন্ধন কর্মসূচি পালন ও রাখীবন্ধন উৎসবে যােগদানের মাধ্যমে বঙ্গভঙ্গের বিরােধিতা করেন ।
মন্তব্য
স্বদেশি আন্দোলন যথার্থই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি দিকচিহ্ন হয়ে আছে । স্বদেশি আন্দোলনের সময় থেকেই ‘ অহিংস ’ ও ‘ সহিংস ’ এই দু – ধারার আন্দোলন পাশাপাশি চলতে থাকে । গান্ধিজি নিজেও স্বীকার করেছেন — বঙ্গভঙ্গের পরেই ভারতের প্রকৃত নবজাগরণ ঘটেছে , এই বঙ্গবিভাগই ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিভাগের কারণ হবে ।