রাজ্য সচিবালয়ের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী
Contents
রাজ্য সচিবালয়ের গঠন ক্ষমতা ও কার্যাবলী
রাজ্য প্রশাসনিক ব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে রাজ্যের সচিবালয় । এই সচিবালয় হল রাজ্য সরকারের মুখ্য শাসন বিভাগীয় সংস্থা । সরকারের বিভিন্ন বিভাগের রাজনৈতিক প্রধান হলেন মন্ত্রীরা আর প্রশাসনিক প্রধান হলেন সচিব । আর এই বিভিন্ন দপ্তরের সচিবদের নিয়ে গঠিত হয় রাজ্য সচিবালয় । রাজ্য সরকারের যাবতীয় প্রশাসনিক নীতি , কর্মসূচি , আদেশ ও নির্দেশ বাস্তবে রূপায়ণের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে রাজ্য সচিবালয় ।
রাজ্য সচিবালয়ের গঠন
রাজ্য সচিবালয়ের অধীনে বিভিন্ন দপ্তর রয়েছে । প্রতিটি দপ্তরের প্রশাসনিক প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন এক একজন সচিব । অবশ্য অনেক সময় একাধিক দপ্তরের দায়িত্বও একজন সচিবের ওপর ন্যস্ত থাকে । রাজ্য সচিবালয়ে সচিব ছাড়াও উপসচিব , অধস্তন সচিব , সহকারী সচিবরা রয়েছেন । বৃহৎ দপ্তরগুলিতে অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্ম সচিবরা থাকেন ।
রাজ্য সচিবালয়ের দপ্তরগুলির সংখ্যা সব রাজ্যে সমান নয় । তবে সাধারণত সবরাজ্যেই কমবেশি ৩০ থেকে ৪০ টি দপ্তর রয়েছে । অধিকাংশ রাজ্যে সচিবালয়ের যে দপ্তরগুলি রয়েছে সেগুলি হল স্বরাষ্ট্র , অর্থ , রাজস্ব , শিল্প , শিক্ষা , পূর্ত , পঞ্চায়েত , সেচ ও বিদ্যুৎ , শ্রম ও নিয়োগ , আবগরি ও কর প্রভৃতি ।
সরকারের কার্য নির্বাহী প্রশাসনিক দপ্তরগুলি সংশ্লিষ্ট সচিবদের অধীনে কাজ করে । এই দপ্তরগুলির শীর্ষে থাকেন বিভাগীয় প্রধান । যেমন — শিক্ষা দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান হলেন শিক্ষা অধিকর্তা , তিনি শিক্ষা সচিবের অধীনে কাজ করেন ।
রাজ্য সচিবালয়ের ক্ষমতা ও কার্যাবলী
রাজ্য বিশেষে রাজ্য সচিবালয়ের কাজ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে । তবে সাধারণ প্রশাসন , অর্থনীতি ও অন্যান্য পরিসেবা সম্পর্কিত কাজকর্ম সব রাজ্য সচিবালয়কেই সম্পাদন করতে হয় । সুতরাং , সচিবালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে—
সাধারণ প্রশাসন সম্পর্কিত কার্যাবলী :
( i ) রাজ্যের মন্ত্রীদের রাজ্য প্রশাসন সম্পর্কিত নীতি ও কর্মসূচি নির্ধারণে এবং তা রূপায়ণে সাহায্য করা ।
( ii ) কেন্দ্রীয় সরকার , অন্যান্য রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করা ।
( iii ) সরকারি কর্মসূচি রূপায়ণের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা ।
( iv ) রাজ্যের অধিকর্তার কার্যালয় ও ক্ষেত্র সংগঠনগুলিকে সরকারি কর্মসূচি রূপায়ণে প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও পরামর্শ দেওয়া ।
( v ) রাজ্য বিধানসভায় প্রস্তাবিত বিলের বা আইনের খসড়া প্রস্তুত করা ।
( vi ) কেন্দ্রীয় সরকার আয়োজিত সর্বভারতীয় সম্মেলনগুলিতে এবং রাজ্যস্তরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠানোর ব্যবস্থা করা ।
( vii ) প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক তথ্য ও সংবাদ সংগ্রহ করা এবং তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের সুপারিশ করা ।
( viii ) রাজ্য প্রশাসনের সমন্বয়কারী সংস্থা হিসেবে কাজ করা ।
অর্থনৈতিক কার্যাবলী :
( i ) অর্থ দপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সরকারের বাৎসরিক আয় ব্যয় বা বাজেট রচনায় সাহায্য করা ।
( ii ) সরকারি অনুদান সম্পর্কিত শর্ত স্থির করা ।
( iii ) বাজেট অনুযায়ী ব্যয় হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা ।
( iv ) সরকারি গাণিতিক কমিটি , আনুমানিক ব্যয় হিসাব কমিটি এবং রাজ্য আইনসভায় উত্থাপিত বিভিন্ন আর্থিক বিষয় সংক্রান্ত প্রশ্নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উত্তর তৈরি করা ।
( v ) রাজ্যের আকস্মিক ব্যয় তহবিল এবং সঞ্চিত তহবিল থেকে অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন করা ইত্যাদি ।
নিয়োগ বা চাকরি সংক্রান্ত কার্যাবলী :
( i ) রাজ্যের সরকারি অধিকর্তাদের নিয়োগ , বদলি , পদোন্নতি , ছুটি ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ।
( ii ) রাজ্য সরকারি কর্মীদের চাকরির নিয়মাবলি ও শর্তাদি অনুমোদন এবং সংশোধন করা ।
( iii ) রাজ্য সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে নতুন পদ তৈরি , পুনর্নিয়োগ , অবসর , বিশেষ বেতন ও ভাতা , অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি বিষয়ে সুপারিশ করা ।
উপসংহার
রাজ্য প্রশাসনে রাজ্য সচিবালয় একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান । জাতীয় ও রাজ্য রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে সচিবালয়ের ক্ষমতার সুদূর প্রসারী ব্যাপ্তি ঘটেছে । সচিব নির্ভর রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব বেড়ে গেছে বলে অনেকে মনে করেন । তবুও সচিবালয়ের গুরুত্বকে উপেক্ষা করা যায় না । ড. মাহেশ্বরী এই কারণে সচিবালয়কে সরকারের স্নায়ুকেন্দ্র বলে অভিহিত করেছেন ।