রাজ্য আইনসভার আইন প্রণয়ন পদ্ধতি
Contents
রাজ্য আইনসভার আইন প্রণয়ন পদ্ধতি
ভারতীয় সংবিধান অনুসারে , রাজ্যগুলির আইনসভার আইন প্রণয়নের পদ্ধতি পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন পদ্ধতির অনুরূপ । রাজ্য আইনসভাগুলি শুধুমাত্র রাজ্য তালিকা এবং যুগ্ম তালিকা ভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে । সাধারণ বিল রাজ্য আইনসভার দুটি কক্ষের মধ্যে যে কোনো কক্ষে উত্থাপন করা যায় । তবে যেসব রাজ্যে আইনসভার উচ্চকক্ষ বিধান পরিষদের বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছে সেখানে শুধুমাত্র বিধান সভাতেই সমস্ত বিল উত্থাপিত হয় ।
সাধারণ বিল দু ধরনের হয়— সরকারি বিল ও বেসরকারি বিল । সরকারি বিল রাজ্যের মন্ত্রীরা উত্থাপন করেন । অন্যদিকে বেসরকারি বিল বিধানসভার সাধারণ সদস্যরা উত্থাপন করতে পারেন । রাজ্য আইনসভায় একটি বিলকে আইনে পরিণত হতে হলে কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয় ।
প্রথম পর্যায় ( প্রথম পাঠ )
বিল পাসের প্রথম পর্যায় হল বিল উত্থাপন । অধ্যক্ষ বা স্পিকারের অনুমতি নিয়ে রাজ্য আইনসভার সদস্যরা বিলটি উত্থাপন করেন । এই সময় বিলের ওপর কোনোরকম আলোচনা হয় না । তবে উত্থাপক বিলটির উদ্দেশ্য , প্রকৃতি বা মূলনীতি সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য রাখতে পারেন । উত্থাপনের পর বিলটি সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয় । তবে এই পর্যায়ে বিলের ওপর কোনো বিতর্ক বা আলোচনা হয় না । এইভাবে বিলের প্রথম পর্যায় শেষ হয় ।
দ্বিতীয় পর্যায় ( দ্বিতীয় পাঠ )
প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার কয়েকদিন পর বিলটির দ্বিতীয় পাঠ শুরু হয় । এই পর্যায়ে উত্থাপক বিলটির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করতে পারেন । যেমন—
( i ) সংশ্লিষ্ট কক্ষে বিলটি বিচার বিবেচনা করা হোক ;
( ii ) বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হোক ;
( iii ) বিলটি সম্পর্কে জনমত যাচাই করার ব্যবস্থা করা হোক । যদি আইনসভার দ্বিতীয় কক্ষ থাকে , তাহলে উত্থাপক আর একটি প্রস্তাব পেশ করতে পারেন । সেটি হল—
( iv ) দুই কক্ষের যুক্ত কমিটিতে বিলটি পাঠানো হোক ।
তৃতীয় পর্যায় ( কমিটি পর্যায় )
বিলটি সভায় সরাসরি বিচার বিবেচনার সিদ্ধান্ত যদি গৃহীত হয় , তাহলে বিলটির ধারা-উপধারা নিয়ে আলাপ আলোচনা চলে । আবার যদি জনমত গ্রহণের জন্য বিলটিকে প্রচারের প্রস্তাব গৃহীত হয় , তাহলে জনমত নির্ধারণের জন্য তা প্রচারের ব্যবস্থা করা হয় ।
আবার বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সাধারণত সিলেক্ট কমিটিতেই বিলটিকে পাঠানো হয় । সেক্ষেত্রে কয়েকজন সদস্য নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয় । কমিটি বিলটি সামগ্রিকভাবে বিচার বিবেচনা করে বিলের যে কোনো অংশ সংশোধন করার জন্য সুপারিশ করতে পারে । অবশ্য কমিটি বিলের মূলনীতি ও উদ্দেশ্য সংক্রান্ত কোনো অংশের সংশোধনের জন্য সুপারিশ করতে পারে না ।
চতুর্থ পর্যায় ( রিপোর্ট পর্যায় )
কমিটি কর্তৃক তৈরি করা রিপোর্ট আলোচনার জন্য গ্রহণের মধ্য দিয়েই চতুর্থ পর্যায় শুরু হয় । এই পর্যায়ে বিলটির প্রতিটি ধারা-উপধারা নিয়ে খুঁটিনাটি আলোচনা করা হয় এবং প্রতিটি ধারার ওপর ভোট গ্রহণ করা হয় । এই স্তরে সংশোধনী প্রস্তাবও উত্থাপন করা যায় । কিন্তু সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা বা না করা স্পিকারের ইচ্ছাধীন । এইভাবে বিলটির সমস্ত ধারা-উপধারা নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত সমাপ্ত হলে বিলের দ্বিতীয় পাঠ শেষ হয় ।
পঞ্চম পর্যায় ( তৃতীয় পাঠ )
পঞ্চম পর্যায়ে প্রস্তাবক সংশ্লিষ্ট কক্ষে বিলটি গ্রহণের জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করেন । এই পর্যায়ে বিলের কোনো ধারা , উপধারার ওপর সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করা যায় না । বিলটি গৃহীত হবে , না বর্জন করা হবে সে সম্পর্কে এই পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । কেবলমাত্র সংখ্যা গরিষ্ঠের সম্মতি পেলেই এই পর্যায়ে বিলটি গৃহীত হয় ।
ষষ্ঠ পর্যায় ( দ্বিতীয় কক্ষের সম্মতি )
যে কক্ষে বিলটি উত্থাপিত হয়েছিল সেই কক্ষে বিলটি গৃহীত হওয়ার পর বিলটিকে অন্য কক্ষের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় । তবে অঙ্গরাজ্যের আইনসভা এক কক্ষ বিশিষ্ট হলে সেই কক্ষেই বিলটি গৃহীত হয় । রাজ্য আইনসভা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হলে অন্য কক্ষে বিলটি পাসের জন্য আগের মতোই বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করতে হয় ।
সপ্তম পর্যায় ( রাজ্যপালের সম্মতি )
অঙ্গরাজ্যের আইনসভা এক কক্ষ বিশিষ্ট হলে সেই কক্ষে এবং দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট হলে দুটি কক্ষে বিলটি পাস হওয়ার পর তা রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয় । রাজ্যপাল সম্মতি দিলে বিলটি আইনে পরিণত হয় । তিনি সম্মতি দিতে পারেন , আবার নাও দিতে পারেন । আবার প্রয়োজন বোধে বিলটিকে তিনি পুনর্বিবেচনার জন্য আইন সভায় ফেরত পাঠাতে পারেন ।
তবে বিলটি যদি আইনসভায় দ্বিতীয়বার গৃহীত হয় , তাহলে রাজ্যপাল বিলে সম্মতি দিতে বাধ্য থাকেন । আবার রাজ্যপাল ইচ্ছা করলে বিলটিতে নিজে সম্মতি না দিয়ে তা রাষ্ট্রপতির বিচার বিবেচনার জন্য তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন । এরকম ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির সম্মতি ছাড়া বিলটি আইনে পরিণত হয় না । এইভাবে রাজ্য আইনসভা ও রাজ্যপালের সম্মতি লাভ করলেই সংশ্লিষ্ট বিলটি আইনে পরিণত হয় ।