রাজ্য বিধান পরিষদ
Contents
রাজ্য বিধান পরিষদ
রাজ্য বিধান পরিষদের গঠন
ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইন সভার উচ্চকক্ষকে বিধান পরিষদ বলা হয় । সদস্য সংখ্যা সংবিধানের ১৭১ নং ধারায় বিধান পরিষদের গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে , বিধান পরিষদের সদস্য সংখ্যা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিধান সভার সদস্য সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবে না । অবশ্য ১৭১ ( ১ ) নং ধারায় এ কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে , বিধান পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা কোনো অবস্থাতেই ৪০ এর কম হবে না ।
সদস্য নির্বাচন ও মনোনয়ন :
রাজ্য বিধান পরিষদ একই সঙ্গে নির্বাচিত ও মনোনীত — উভয় ধরনের সদস্যদের নিয়ে গঠিত । সাধারণত পরিষদের ছয় ভাগের মধ্যে পাঁচ ভাগ সদস্য পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন এবং অবশিষ্ট এক ভাগ সদস্য রাজ্যপাল কর্তৃক মনোনীত হন । বিধান পরিষদের —
1. এক-তৃতীয়াংশ সদস্য পুরসভা , জেলা পরিষদ এবং অন্যান্য স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন মূলক প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন ।
2. প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সদস্য রাজ্য বিধান সভার সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন ।
3. অন্যদিকে প্রায় এক দ্বাদশাংশ সদস্যকে তিন বছর আগে যাঁরা স্নাতক হয়েছেন তাঁরা নির্বাচন করেন এবং
4. প্রায় এক-দ্বাদশাংশ সদস্য অন্ততঃপক্ষে তিন বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মাধ্যমিক এবং উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির শিক্ষকদের দ্বারা নির্বাচিত হন ।
5. অবশিষ্ট সদস্য মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজ্যপাল কর্তৃক মনোনীত হন ।
কার্যকাল :
রাজ্য আইনসভার স্থায়ী কক্ষরূপে গণ্য হওয়ায় বিধান পরিষদকে ভেঙে দেওয়া যায় না । সংবিধান অনুযায়ী , বিধান পরিষদের সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ছয় বছর , প্রতি দুই বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর নেন ।
সভাপতি ও সহসভাপতি :
বিধান পরিষদের কাজকর্ম পরিচালনার জন্য সদস্যরা নিজেদের মধ্যে থেকে একজন সভাপতি এবং একজন সহসভাপতি নির্বাচন করেন । সভাপতির অনুপস্থিতিতে সহসভাপতি সভার কাজকর্ম পরিচালনা করে থাকেন । কোনো প্রস্তাব বা বিলের ওপর ভোটাভুটির সময় সভাপতিকে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে চলতে হয় , তবে পক্ষে ও বিপক্ষে সমান সংখ্যক ভোট পড়লে তাঁর নির্ণায়ক ভোট দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে । বিধান পরিষদে ১৪ দিনের নোটিশ দিয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করে সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থনে সভাপতি অথবা সহসভাপতিকে পদচ্যুত করা যায় ।
রাজ্য বিধান পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলী
বিধান পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলী অত্যন্ত সীমিত । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—
1. অর্থবিল ছাড়া অন্য যে কোনো বিল বিধান পরিষদে উত্থাপন করা যায় । সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে , আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা যে ধরনের ক্ষমতা ভোগ করে থাকে বিধান পরিষদের হাতে তেমন কোনো ক্ষমতা নেই ।
2. রাজ্য আইনসভার উচ্চকক্ষ বিধান পরিষদের আর্থিক ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত । কোনো অর্থবিল বিধান পরিষদে উত্থাপন করা যায় না । বিধানসভা কর্তৃক গৃহীত অর্থবিল বিধান পরিষদে পাঠানো হলে ১৪ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ বা সুপারিশ ছাড়া বিলটিকে বিধানসভার কাছে ফেরত দিতে বিধান পরিষদ বাধ্য থাকে । বিধান পরিষদের সুপারিশ বিধানসভা গ্রহণে বাধ্য নয় ।
3. রাজ্যের শাসন বিভাগ মন্ত্রীসভাকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ক্ষমতা রাজ্য বিধান পরিষদের হাতে দেওয়া হয়নি । অবশ্য বিধান পরিষদের হাতে দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব উত্থাপন , প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও সমালোচনার ক্ষমতা রয়েছে ।
উপসংহার
ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রে রাজ্য আইনসভার উচ্চকক্ষ হিসেবে বিধান পরিষদের যৌক্তিকতা নিয়ে বহু আগেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল । এই কারণে পশ্চিমবঙ্গ সহ অনেক রাজ্যে বিধান পরিষদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়েছে ।বর্তমানে ( মে , ২০১১ খ্রি. ) মাত্র পাঁচটি রাজ্যে — উত্তরপ্রদেশ , বিহার , মহারাষ্ট্র , কর্ণাটক এবং জম্মু ও কাশ্মীরে বিধান পরিষদের অস্তিত্ব রয়েছে ।