ইতিহাস

স্বদেশী আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা

Contents

স্বদেশী আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা

National Anthem 1
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভারতে ইংরেজ শাসনকে নিষ্কণ্টক করতে ব্রিটিশরা হিন্দু –  মুসলমানের মধ্যে বিভেদ ঘটিয়ে বাঙালি জাতিকে হীনবল ও পঙ্গু করার চেষ্টা  চালায় । এই উদ্দেশ্যে ভাইসরয় লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয়  জাতীয়তাবাদের প্রাণকেন্দ্র বাংলা প্রেসিডেন্সিকে দু – টুকরাে করার সিদ্ধান্ত নেন । কারণ হিসেবে শাসন তান্ত্রিক সুবিধার কথা বলা হলেও প্রকৃত উদ্দেশ্য যে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক তা কিন্তু সহজেই ধরা পড়ে যায় । তাই জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ যে – কোনাে মূল্যে এই বঙ্গভঙ্গ রােধ করার সিদ্ধান্ত নেন । বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলনের অঙ্গরূপে স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন শুরু হলে রবীন্দ্রনাথ সেই আন্দোলনে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন ।

কার্লাইল সার্কুলারের বিরোধিতা

ছাত্র সমাজকে বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার লক্ষ্যে বাংলার ব্রিটিশ সরকারের চিফ্ সেক্রেটারি আর. ডব্লিউ. কার্লাইল ১০ অক্টোবর ( ১৯০৫ খ্রি. ) এক দমন মূলক আইন জারি করেন । এই কালা আইনের বিরােধিতার জন্য কলকাতার পটল ডাঙার চারুচন্দ্র মল্লিকের বাসগৃহে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে এক সভা আয়ােজিত হয় । এই সভা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ পাঠানাে হয় ।

রাখি বন্ধন উৎসব

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর ছিল বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত কার্যকারী করার দিন । ওই দিন বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে বাঙালি জাতি তার ক্ষোভ ও বেদনা প্রকাশ করে । রবীন্দ্রনাথ – পরিকল্পিত রাখিবন্ধন ছিল ওই কর্মসূচির একটি প্রধান অঙ্গ । বাংলার দুটি অংশের জনগণ নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববন্ধন অটুট রাখতে গঙ্গা স্নান করে পরস্পরের হাতে হলুদ সুতাের রাখি বেঁধে দিয়ে মাতৃভূমির ঐক্য বজায় রাখার শপথ নেয় । তারপর বন্দেমাতরম্ ধ্বনি উচ্চারণ করে ও রবীন্দ্রনাথ রচিত নানা দেশাত্মবােধক গান গাইতে গাইতে তারা খালি পায়ে পথ পরিক্রমা করে ।

দেশাত্মবােধক গান রচনা

রবীন্দ্রনাথ স্বদেশি আন্দোলনকে আরও গতিশীল ও উজ্জীবিত করার লক্ষ্যে স্বদেশি যুগে ( ১৯০৫ – ১২ খ্রি. ) মােট ২৭টি দেশাত্মবােধক গান রচনা করেন । এইসব গানের মধ্যে উল্লেখযােগ্য   হল — ‘ বাঙলার মাটি , বাঙলার জল , বাঙলার বায়ু , বাঙলার ফল ’ ; ‘ সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে ’ ; ‘ যে তােমায় ছাড়ে ছাড়ুক ’ ; ‘ অয়ি ভুবন মনােমােহিনী ‘ ; ‘ আজি বাঙলাদেশের হৃদয় হতে ; “ ও আমার দেশের মাটি ’ ইত্যাদি । এই সমস্ত দেশাত্মবােধক গান আজও মানুষকে স্বদেশ প্রেমে উদ্দীপিত করে ।

স্বদেশ ভাবনা

গঠনমূলক স্বদেশি ভাবনার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ খুঁজে পেয়েছিলেন আত্মশক্তি বিকাশের এক বিপুল সম্ভাবনাকে। রবীন্দ্রনাথের এই স্বদেশ ভাবনার প্রতিফলন দেখা যায় পাবনায় প্রাদেশিক সম্মেলনে ( ১৯০৭ খ্রি. ) স্বদেশি শিল্প , কৃষি , সমবায় , দুগ্ধ ইত্যাদি বিভিন্ন পরিকল্পনার ওপর দেওয়া এক ভাষণে । এসব পরিকল্পনার বাস্তবায়নের জন্য তিনি পরবর্তী সময়ে শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতনের অধীনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেন ।

মন্তব্য

স্বদেশি আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে আছে । রবীন্দ্রনাথ স্বদেশির মধ্যে আত্মশক্তি জাগরণের এক বিপুল সম্ভাবনা দেখেছিলেন । স্বদেশির সুগভীর প্রভাব প্রসঙ্গে তাই রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন — “ এই আহ্বান দেশের শুভবুদ্ধির সিংহদ্বারে আঘাত করিয়াছিল বলিয়াই আজ ইহা এতাে দ্রুত সমাদার পাইয়াছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!