ইতিহাস

স্বদেশী আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা / ব্যর্থতার কারণ

Contents

স্বদেশী আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা / ব্যর্থতার কারণ

বঙ্গভঙ্গ – বিরোধী স্বদেশী আন্দোলন ভারতের জনমানসে গভীর প্রভাব ফেলে । ছাত্র – শ্রমিক – নারীসহ সমাজের নানা শ্রেণির মানুষ সর্বপ্রথম এই সংঘবদ্ধ জাতীয় আন্দোলনে শামিল হন । কিন্তু প্রবল উৎসাহ , উদ্দীপনার সঙ্গে শুরু হয়েও শেষ পর্যন্ত স্বদেশি আন্দোলন গতিহীন হয়ে পড়ে । অন্তর্নিহিত নানা ত্রুটি ও দুর্বলতা এই আন্দোলনকে ব্যর্থ করেছিল ।

images 1 2
স্বদেশি আন্দোলন

সংগঠনের অভাব

স্বদেশী আন্দোলনের পেছনে কোনাে কার্যকরী সংগঠন ছিল না । নিষ্ক্রিয় প্রতিরােধ , সমাজ সংস্কার , গঠন মূলক সংস্কার ইত্যাদি কর্মসূচি একটি বিশেষ কেন্দ্র থেকে সুসংগঠিত পথে পরিচালিত না  হওয়ায় আন্দোলন ব্যর্থ হয়।

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব

আন্দোলনকারীদের অভ্যন্তরীণ মতভেদ ও দ্বন্দ্ব স্বদেশি আন্দোলনকে দুর্বল করেছিল । স্বদেশি কর্মসূচির প্রশ্নে নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের বিরােধ তীব্র রূপ নেয় । নরমপন্থীরা প্রথম থেকেই বয়কটের বিরােধী ছিলেন । পরে তাঁরা বয়কট মেনে নিলেও , এই অস্ত্রের সীমিত প্রয়ােগ চেয়েছিলেন । কিন্তু চরমপন্থীরা বয়কটকে সর্বাত্মক করতে আগ্রহী ছিলেন ।

কৃষি কর্মসূচির অভাব

স্বদেশী আন্দোলনের নেতৃত্ব কৃষকদের স্বার্থ – সংক্রান্ত কোনাে কর্মসূচি নেয়নি । কৃষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে তাদের সংগঠিত করার কোনাে প্রয়াস এই আন্দোলনে ছিল না । ড. সুমিত সরকারের মতে , কৃষকদের স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত করার ব্যর্থতা এই আন্দোলনের প্রধান দুর্বলতা ছিল ।

মুসলমানদের অসহযোগিতা

স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম দুর্বলতা ছিল সাধারণ মুসলমান শ্রেণির আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্নতা । বঙ্গ বিভাগ মুসলমানদের স্বার্থের সহায়ক — এই তত্ত্ব প্রচারিত হলে মুসলমানরা আন্দোলনের মূল স্রোত থেকে সরে যায় । এ ছাড়া আন্দোলনের নেতারা বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও হিন্দু জাতীয়তাবাদ সমার্থক করে তুললে মুসলমানরা হতাশ হন । লিয়াকত হােসেন , আবদুল রসুল , আবদুল হালিম গজনভি প্রমুখ অল্পসংখ্যক জাতীয়তাবাদী মুসলমান স্বদেশী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিলেও , সাধারণ মুসলিম সমাজ এই আন্দোলন থেকে দূরে ছিল ।

সর্বভারতীয় ব্যাপকতার অভাব

স্বদেশী আন্দোলন সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েনি । আগাগােড়াই এটি একটি আঞ্চলিক আন্দোলনরূপে সীমাবদ্ধ ছিল । এমনকি বিহার ও উড়িষ্যার মানুষ বাঙালি – বিরােধী মনােভাব থেকে এই আন্দোলনের বিরােধিতাও করেন ।

নেতৃত্বের সংকট

১৯০৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে আন্দোলনে নেতৃত্বের সংকট প্রকট হয় । অশ্বিনী কুমার দত্ত , কৃষ্ণ কুমার মিত্রসহ বাংলার নয়জন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে দ্বীপান্তরে পাঠানাে হয় । অরবিন্দ ঘােষ সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে যান । এইভাবে নেতৃত্বের সংকট স্বদেশী আন্দোলনকে গতিহীন করে দেয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!